সরকারের আদেশ অমান্য করে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে সাদপন্থীদের ইজতেমার আয়োজন করায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন হেফাজত ইসলামের নেতারা। বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর বিকেলে জেলা ও মহানগর হেফাজতে ইসলামের কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী এই বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নেন। এসময় তারা জেলা প্রশাসককে আল্টিমেটাম দিয়ে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার মধ্যে এই ইজতেমা বন্ধ করা না হলে শুক্রবার সকাল ৬টায় আড়াইহাজারের দিকে তারা লংমার্চের ঘোষণা দিবেন এবং ওইখানে গিয়ে তারা জুম্মার নামাজ আদায় করবেন। এর ফলে দুইপক্ষের সংঘর্ষের শঙ্কা থেকে সাদপন্থীদের শুক্রবার সকালের মধ্যে ইজতেমা শেষ করে আড়াইহাজার ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক।
তার আগে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মহানগর হেফাজতে ইসলামের সাবেক সভাপতি মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় সারাবিশ্বে প্রথম টার্গেট ইসলাম এবং মুসলমান। ইসলাম বিদ্বেষীরা একসঙ্গে হয়ে ইসলামকে ধ্বংস করার জন্যে যুগে যুগে পায়তারা করে আসছেন। তারই ধারাবাহিকতায় দাওয়াত ও তাবলীগের অত্যন্ত সুশৃঙ্খল গোটা এক পৃথিবীতে স্বনামধন্য একটি কাজকে এই সাদ সাহেবের মাধ্যমে একটি ফেতনা লাগিয়ে গোটা পৃথিবীতে তাবলিগ জামায়াতকে দুটো ভাগে বিভক্ত করে দিয়েছেন। আজ ডিসি অফিসে ডিসি সাহেব স্বীকার করলেন, আমাদের বুঝালে নাকি আমরা কথা শুনি। ওলামায়ে কেরামের শানই তো এটা। এদেশের কওমী ওলামায়ে কেরামেগণের কাজ হচ্ছে এই বাংলাদেশকে সুশৃঙ্খলভাবে রাখা। কেউ যেনো বিশৃঙ্খলা না করতে পারে। কেন্দ্রীয়ভাবে ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত বিশ্ব এস্তেমার আগে গোটা বাংলাদেশের কোথাও কোনো এস্তেমা করতে পারবে না। কিসের কারণে এরা ডিসি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আলেম ওলামাকে উপেক্ষা করে তারা আড়াইহাজারে ঢুকেছে। আজও ডিসিকে বলেছি আপনারা যদি ব্যর্থ হোন ৫ তারিখের পর যেভাবে আমরা দেশ পাহারা দিয়েছি, প্রশাসনকে প্রটোকল দিয়েছি। এই আতাতিকাদের বিদায় করতে আমাদের ২ মিনিটও সময় লাগবে না। এরপরও আমরা তা করছি। কেননা আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা এর আগে সমাবেশ করেছিলাম। কিন্তু তাদের টনক নড়ে নাই। তারা মনে করছেন এখনো আঙ্গুল সোজা আছে। এশার নামাজের পর থেকে আমরা আঙ্গুল বাঁকা করতে বাধ্য হবো। আমাদের ধৈর্য্যরে বাধ যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে আগামীকাল (শুক্রবার) ফজর নামাজের পর থেকেআড়াইহাজারের দিকে লংমার্চ করে আমরা সেই ময়দানে জুম্মার নামাজ আদায় করে আতাতিকাদের ভণ্ডামি করার সুযোগ দিবো না।
বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা মুফতি বশির উল্লাহ বলেন, দীর্ঘসময় ভারত তার মনোনীত এক সরকারকে ১৬বছর ক্ষমতায় বসিয়ে রেখেছিল। এখন সেই সরকার জনরোষে পড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে এবং ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমান যে সরকার দেশ চালাচ্ছে তারা ভারতের গাত্রদাহ হয়েছে তা সবাই অবগত। ভারত কখনোই চায় না এই দেশ শান্তিমতো চলুক। ভারতের এজেন্ট হয়ে তাই গোলযোগ সৃষ্টি করার জন্য এই সাদপন্থীদের মাঠে নামায় দিয়েছে। তাই তারা মন্ত্রণালয়ের কথা মানছে না, ডিসির কথাও মানছে না। তারা এই দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য একটা এজেন্ডা নিয়ে নেমেছে। তাবলিগের ক্ষেত্রে বলা হচ্ছে সাদপন্থী আর জুবায়েরপন্থী। আমরা কিন্তু জুবায়েরপন্থী না। আমরা হচ্ছি শূরাপন্থী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মাহমুদুল হক বলেন, মূল ইজতেমার আগে জেলা পর্যায়ে ইজতেমা করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নিষেধ করা হয়েছিল। আড়াইহাজারে যারা ইজতেমার আয়োজন করেন তারা আমাদের কিছু জানান নি। পরবর্তীতে তাদের এই ইজতেমা নিয়ে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করার পাশাপাশি শুক্রবার আড়াইহাজারের দিকে লং মার্চ দেওয়ার ঘোষণা দেন। তাই দুুই পক্ষের সংঘর্ষ এড়াতে এক জরুরী বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে সাদপন্থীদের আগামীকার (শুক্রবার) সকালের মধ্যে ইজতেমা শেষ করে চলে যেতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে আড়াইহাজার উপজেলা ইউএনওকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :