কেন্দ্রের ঘোষণা অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের রাজপথে লিফলেট বিতরণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটে নি। এদিন জেলার কোথাও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করে নি। বরং নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে সরগরম ছিল। তারা এদিন সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে বিশাল বড় মিছিল করেন। এসময় মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিবসহ মহানগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে কেন্দ্রের নির্দেশ পালন না করে আবারও নিজেদের ব্যর্থতার পরিচয় দিলো নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। বিপরীতে, কেন্দ্রের কোনো ঘোষণা ছাড়াই বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথ পাহারায় ভূমিকায় রাখেন। পাশাপাশি বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নিজ নিজ অবস্থানে সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। এর ফলে এখান দিক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি অনেকটাই সফল। আর আওয়ামী লীগের অবস্থা দিন দিন খারাপই হচ্ছে। দেশে আওয়ামী লীগের যেকোনো কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জের ভূমিকা থাকতো চোখে পড়ার মতোন। তবে বর্তমানে তাদের সেই জৌলুস নেই।
এর আগে আওয়ামী লীগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি লিফলেট বা প্রচারপত্র বিলি, ৬ ফেব্রুয়ারি প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ, ১০ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ, ১৬ ফেব্রুয়ারি অবরোধ কর্মসূচি এবং ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা সর্বাত্মক কঠোর হরতাল। ওই বার্তায় হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, দেশের মানুষের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের এ সকল কর্মসূচিতে কোনো প্রকার বাধা প্রদান করা হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের সরকারের পতন ঘটবে তা কখনোই আন্দাজ করতে পারে নি দলটির নেতাকর্মীরা। এর ফলে নেতাকর্মীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাসের কোনো ঘাটতি ছিল না। বরং শেখ হাসিনা এভাবে পালিয়ে যাবেন তা কখনোই চিন্তা করতে পারেন নি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এদিকে সারাদেশের মতোন নারায়ণগঞ্জেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে হামলা, ভাঙ্গচুর করা হয়েছে। অনেক কার্যালয় লুটপাট করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও দেশত্যাগের পর থেকেই সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতির মোড় ঘুরে গেছে। যেখানে কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বড় বড় কথা বলতেন নিজেদের জানান দিতে ব্যস্ত থাকতেন সেখানে তারা একেবারেই আড়াল হয়ে গেছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করলেও সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। অথচ কয়দিন আগেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বড় বড় হুংকার দিয়েছেন। দলীয় যে কোনো কর্মসূচিতে নিজেদের বিভিন্নভাবে জানান দেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। সেই সাথে দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগী হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সংকটকালিন সময়ে আর তাদের দেখা মিলছে না।
অন্যদিকে, ছাত্র-জনতা আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগের পতন ঘটলে সবক্ষেত্রে একক আধিপত্য বাড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের। তবে একটি কারণে বিএনপি এখনো শঙ্কায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারণ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে কবে নাগাদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তার রোডম্যাপ এখনো প্রকাশ না করায়। এর ফলে দিন যতোই যাচ্ছে নির্বাচন নিয়ে ততোই পরিবেশ ঘোলাটা হচ্ছে। বিএনপিতে সৃষ্টি হয়েছে অস্বস্থি। তার আগে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত মামলায় কারাগারে ছিলেন বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী। এদের অধিকাংশই কারাগার থেকে জামিন পান। সেই সঙ্গে গ্রেফতার এড়াতে বিএনপি যেসব নেতাকর্মী এতোদিন পলাতক ছিলেন সবাই নিজ জেলায় ফিরে এসেছেন। পাশাপাশি পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরই মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা। এর ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগামীতে আরেক বিজয় অপেক্ষা করছে।
আপনার মতামত লিখুন :