নারায়ণগঞ্জ শহরে এখন আলোচনায় ভোটের সমীকরন। সরকারের তরফ থেকে চলতি বছরের ডিসেম্বর বা আগামী বছরের জানুয়ারিতে নির্বাচনের কথা বললেও সংস্কারের বিষয়টি ভাবাচ্ছে নেতাকর্মী ও ভোটারদের। নিজ নিজ দলের অবস্থান তুলে ধরতে নিয়মিত হচ্ছে সভা সমাবেশ। নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলগুলো প্রার্থী চূড়ান্ত না করলেও দলের মনোনীত প্রার্থীকে পূর্ন সমর্থনের আশ্বাস নেতাকর্মীদের। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে সংস্কারের নির্বাচনের দাবী অধিকাংশের। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন পুরোনো রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে সবাইকে।
শীতলক্ষ্যা নদীর উভয় তীরে গড়ে উঠেছে শত বছরের পুরোনো শহর নারায়ণগঞ্জ। শহর ও বন্দর এই দুই অঞ্চল নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ ৫ আসন। বাণিজ্যিক নগরী হওয়ায় গুরুত্বপূর্ন ভুমিকায় থাকে এই জেলার রাজনীতি। দলগোছাতে নিয়মিত কর্মসূচী পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচনী আওয়াজ উঠার সাথে সাথে সম্ভাব্য প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের সমর্থন আদায়ে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।
ভোটের সম্ভাব্য দিনক্ষণ ধার্য্য হলেও এখন পর্যন্ত এখানকার কোন দলই তাদের প্রার্থীদের নাম প্রকাশ্যে ঘোষণা করেনি। কেবলমাত্র বিএনপি থেকে ২০১৮ সালে যেসব প্রার্থীরা মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তারা রয়েছেন আলোচনায়। অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার চাচ্ছেন অনেকেই।
জাতীয় নির্বাচনের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবীতে নিয়মিত কর্মসূচী পালন করে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। জাতীয় নাগরিক কমিটির নারায়ণগঞ্জ মহানগরের প্রতিনিধি সদস্য আহমেদুর রহমান তনু বলেন, ‘গণপরিষদ নির্বাচন আবশ্যক। কারন জাতীয় নির্বাচন আগে হলে একটি দল নির্বাচিত হবে, ফলে পুরোনো কায়দায় সরকার চলতে থাকবে। ৫ আগস্টের পরে আমরা যে পরিবর্তিত বাংলাদেশ দেখতে চেয়েছি সেটি সম্ভব হবে না। সেজন্য গণপরিষদ নির্বাচন আগে হলে সকল দলমতের ভিত্তিতে সংস্কার করা যাবে।’
প্রায় একই সুরে সংস্কারের দাবী তুলেছেন গণসংহতি আন্দোলনের জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন। তিনি বলেন, ‘২৪ সালে হাজার হাজার ছাত্র জনতা যে জীবন দিয়েছে সেটা কেবল একটি নির্বাচনের জন্য নয়। এই অভ্যুত্থান ক্ষমতার হাত বদলের নয়, বরং কাঠামো পরিবর্তনের জন্য। আমাদের পরিস্কার দাবী আমরা নির্বাচন চাই, তার আগে সংস্কার চাই। সংবিধান সংস্কার সভার ইলেকশন চাই।’
তবে নূন্যতম সংস্কারের পরেই নির্বাচন চাচ্ছে জামায়াত। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে প্রার্থী দলীয় ভাবে নির্ধারন করলেও নাম প্রকাশের জন্য অপেক্ষায় আছেন কেন্দ্র থেকে সবুজ সংকেতের। মহানগর জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার মনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন সেটুকু সময় বর্তমান সরকারকে দিয়েই আমরা নির্বাচন চাচ্ছি। নূন্যতম সংস্কার, যেটা না হলেই নয় সেটা বাস্তবায়ন করেই নির্বাচন চাই আমরা। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি আসনের মধ্যে তিন নম্বর আসনে আমাদের প্রার্থী ফাইনাল হয়েছে। বাকি চারটি আসনে স্থানীয় জনশক্তির মতামত জরিপ করে প্রার্থীদের নাম কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কেন্দ্র এটা নির্ধারন করে দিবে। আমরা সময়মত প্রার্থীদের নাম জানিয়ে দিব।
নারায়ণগঞ্জ ৫ আসনে বিএনপির সাবেক এমপি আবুল কালাম রয়েছেন আলোচনায়। ২০১৮ সালে তিনি দলীয় মনোনয়ন পেলেও পরে আসনটি জোটগত সিদ্ধান্তে ছেড়ে দিতে হয় নাগরিক ঐক্যকে। এই আসনে আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি আবুল কালাম, মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান এবং মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ।
এই বিষয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুস সবুর খান সেন্টু বলেন, ‘যেই প্রার্থীর জনপ্রিয়তা থাকবে, সেই প্রার্থীকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়া হবে। পাঁচ আসনে বিএনপির নেতাকর্মীরা সেই প্রার্থীর পক্ষে আমরা কাজ করবো। আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সাথে তারেক রহমান যোগাযোগ করছেন। আমাদের মতে ধানের শীষের বিকল্প কোন প্রার্থী নেই।’
অন্যদিকে নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও নতুন ধারার রাজনীতি চান বিশিষ্টজনেরা। কবি আরিফ বুলবুলের মতে ‘নির্বাচন অবশ্যই গণপরিষদ নির্বাচন হওয়া উচিৎ। তার আগে সংস্কার হওয়া উচিৎ। সংস্কার ছাড়া কোন নির্বাচন অর্থবহ হবে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে। রাজনীতি সাধারণ মানুষের কাতার থেকে উঠে আসা লোকজনকে রাজনীতিতে আসা উচিৎ। তাদেরই নির্বাচন করা উচিৎ। জনগণের উচিৎ সেই ধরনের ব্যক্তিদের নির্বাচিত করা। পুরোনো পরিবার ভিত্তিক, মাফিয়াতন্ত্র ভেঙ্গে ফেলতে না পারলে রাজনীতির পরিবর্তন হবে না।’
আপনার মতামত লিখুন :