হোসিয়ারি সমিতি : বসন্ত কোকিল বনাম সাবেকদের ভোট লড়াই

বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির নির্বাচনে আর মাত্র তিন পর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে প্যানেল আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে তুমুল ভোট যুদ্ধ শুরু হয়েছে। ফ্যাসিবাদিদের ভোট প্রদানে বিরত থাকার আহবান জানিয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। অন্যদিকে নির্বাচনে বসন্ত কোকিলদের থেকে বেচেঁ থাকার জন্য হোসিয়ারি মালিকদের প্রতি আহবান জানিয়েছে বদু প্যানেল। এবার নির্বাচনে হোসিয়ারি সমিতির সাবেক সভাপতি ও পরিচালকদের প্রতিদ্বন্দ্বি হয়েছে নতুনরা। এদের মধ্যে বেশিভাগ প্রার্থী রয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

স্বতন্ত্র ফোরামের একাধিক প্রার্থীকে ইঙ্গিত করে হোসিয়ারি সমিতির সাবেক সভাপতি দুলাল মল্লিক বলেছেন, ক্যু ক্যু ডাক বুঝেন- এখন অনেক বসন্তের কোকিল ঘুরতাছে। এই হোসিয়ারি শিল্পকে ধংস করার জন্য। ভাই আপনাদের মনে রাখতে হবে এই শিল্পকে ধংস করতে দেয়া যাবে না। আপনারা যদি বসন্ত কোকিলকে পাশে থাকেন তাহলে এই শিল্প রক্ষা করা যাবে না। হোসিয়ারি নির্বাচনে মালিক প্রাণ খুলে শ্বাস নিচ্ছে। এই নির্বাচনে একটি ভোট হলো আমানত। কোন চাঁদাবাজ ধান্ধাবাজকে নির্বাচিত করতে দেয়া হবে না। বদু হলেন আমাদের গাছ, আমরা হলাম তার ঢাল আতাপাতা। ২৫ জানুয়ারি নয়ামাটি আগুন লেগেছিলো, তখন কিন্তু বদু ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি।

একই সুরে টেনে সাধারণ গ্রুপের মনির হোসেন বলেছেন, গতকালকে হোসিয়ারি মালিক সেজে আজকে নির্বাচনে দাড়িয়েছেন, তারা কি ভোট পাবে? দুই চার জন বসন্তের কোকিলরা বলেন, আমরা নাকি হোসিয়ারি সমিতি দখল করে রেখেছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান আমাদের হোসিয়ারি মালিকরা দায়িত্ব নিতে হবে। নির্বাচনে কাদাঁছোড়া না করি, আপনারা কিন্তু নতুন হোসিয়ারি মালিক সেজেছেন। আগে হোসিয়ারি মালিক তারপর আপনারা নির্বাচনে অংশ নেন।

হোসিয়ারিদের সংগঠন বাংলাদেশ হোসিয়ারি সমিতির নির্বাচন ৩ ফেব্রুয়ারিতে। ইতোমধ্যে নির্বাচন ঘিরে প্রার্থী হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি বর্তমান আহবায়ক কমিটি ও সাবেক নেতারা। আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির অধীনে থাকা হোসিয়ারি সমিতি এখন বিএনপি দুই গ্রুপের নেতাদের নির্বাচনে দেখার প্রস্তুতি শেষ প্রান্তে। আওয়ামী লীগ পতনের পাচঁ মাসের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির দুই গ্রুপের নেতাদের এমন নির্বাচনে আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ হোসিয়ারী সমিতি এক সময়ে বিএনপি নেতা ও সাবেক জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাকির খানের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। পরবর্তিতে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির অধীনে সরকার গঠনের মাধ্যমে সাবেক এমপি নাসিম ওসমান, সেলিম ওসমান ও আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল আলম সজলের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। সরকার পতনের মাধ্যমে এবার হোসিয়ারি সমিতির নির্বাচনে বাতাস ঘুরতে শুরু করে। দেওভোগ জাকির খান ও মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু সমর্থিত অঘোষিত প্যানেল জমা পড়েছে। সেখানে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যুগ্ম আহবায়ক আব্দুর সবুর খান সেন্টু, মনির হোসেন খান, রেজা রিপন, সদস্য মাসুদ রানা ও আওলাদ হোসেন। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম সহ সাবেক বিএনপি নেতা বদিউজ্জামান বদু ও জাকির খান সমর্থক পারভেজ মল্লিক। এদিকে একক ভাবে নির্বাচনে প্রচারণা নেমেছেন ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি দিদার খন্দকার।

জাকির খান ও টিপুর গোপনীতায় প্যানেলের কারণে সাবেক ও বর্তমান অনেক বিএনপি নেতারা প্রার্থী হয়নি বলে জানা গেছে। একই সাথে জেলা বিএনপি সাবেক নেতা ভিপি মাসুকুল ইসলাম রাজীবও হোসিয়ারি সমিতির সদস্য পদ ফিরে পেয়েছেন। তিনি প্রার্থী হতেন কিন্তু জেলা বিএনপি নতুন কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসা নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে। সেই কারণে তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত রয়েছেন। অন্যদিকে মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য আমিনুর ইসলাম মিঠুও নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে গুঞ্জন থাকলেও দুই গ্রুপিংয়ে তিনি সরে দাঁড়ান।