News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

যে কোন সময়ে জেলা বিএনপির কমিটি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ১১:১৭ পিএম যে কোন সময়ে জেলা বিএনপির কমিটি

যে কোন সময়ে ঘোষণা করা হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপির নতুন কমিটি। কারা আসছেন এ কমিটিতে এ নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। গত ২৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির কমিটির ভাঙার পর চলছে আলোচনা। দলের একাধিক সূত্র বলছে, সিনিয়র ও জুনিয়রদের নিয়েই গঠন করা হবে কমিটি।

ইতোমধ্যে সভাপতি পদে তালিকাতে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে কাজী মনিরুজ্জামান, নজরুল ইসলাম আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু, আজহারুল ইসলাম মান্নান ও মোহাম্মদ শাহআলমের নাম।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মামুন মাহমুদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক আহবায়ক জাহিদ হাসান রোজেল, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক মাসুকুল ইসলাম রাজীব ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু।

বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, ৫ আগস্টের পর বর্তমান পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপিতে স্বচ্ছতা ও গতিশীলতা আনতেই সিনিয়র নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দিতে চান দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এখন পুরো সিদ্ধান্ত তার উপর নির্ভর করছে।

যে ৫ জনের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে কাজী মনিরুজ্জামান এর আগে জেলা বিএনপির সেক্রেটারী, সভাপতি ও আহবায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৯ সালের ২৫ নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি’র সম্মেলনে তৈম‚র আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক করা হয়। কিন্তু ৭ বছরেও তারা প‚র্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটির পরেই নিস্ক্রিয় হন কাজী মনিরুজ্জামান।

সভাপতি হিসেবে আলোচনায় আছেন দলের ঢাকা বিভাগীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। জুলাই ও আগস্টে ছাত্র আন্দোলন ছাড়া গত এক দশকে নারায়ণগঞ্জে আওয়ামী লীগ বিরোধী আন্দোলনের আলোচিত একটি ছিল আড়াইহাজারের ঘটনা। ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর অবরোধ চলাকালে সেখানকার বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ছিল তখনকার সবচেয়ে আলোচিত যার নেতৃত্বে ছিলেন নজরুল ইসলাম আজাদ। ওই সময়ে তাকে ধরতে প্রশাসনে রেড এলার্ট জারি করা হয়। বিগত দিনে বিএনপির আন্দোলনের অনেক ক্ষেত্রেই তিনি নেতৃত্ব দেন। কারাভোগও করেছেন কয়েকবার। অন্তত অর্ধশত মামলার আসামী হয়েছেন।

আলোচনায় আছেন মোস্তাফিজুর রহমান ভূইয়া দিপু। ৫ আগস্টের আগে নারায়ণগঞ্জ শহরে একাধিকবার তিনি নেতাকর্মী নিয়ে অবস্থান করেন। দিপুর নির্দেশে আন্দোলনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা সিলেট মহাসড়ক, সাইনবোর্ড, চিটাগাং রোডে তার নেতাকর্মীদের সরব অবস্থান থাকে। শহরের চাষাঢ়ায় ছাত্র জনতার আন্দোলনে নেতাকর্মীদের সব সময় ছাত্রদের পাশে অবস্থান করান দিপু। টানা ১৫ বছর ধরে সরকার বিরোধী আন্দোলন করে রূপগঞ্জ তো বটেই নারায়ণগঞ্জকে জাগিয়ে রেখেছিলেন তিনি। রাজধানীতেও বিএনপির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় কর্মসূচীতে লোকজন নিয়ে শো ডাউন করে আলোচনায় ছিলেন। আন্দোলনগুলোতে ছিলেন সামনের সারিতে। তখনকার মন্ত্রী ও এমপি গোলাম দস্তগীর গাজীর লোকজন একাধিকবার হামলা করেন তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে। রয়েছে ৫০টির অধিক মামলা।

বিএনপির দুঃসময়ে বিএনপি থেকে সরে গেলেও এবার হঠাৎ আলোচনায় এক সময়ে কল্যাণ পার্টি করা শাহআলম। তিনিও আছেন জেলা বিএনপির সভাপতির তালিকাতে। গত কয়েকদিন ধরে তিনি ব্যাপক লবিং করে যাচ্ছেন। সবশেষ তাঁর একটি অনুষ্ঠানে বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। রাজনীতিতে নিস্ক্রিয় থাকলেও ক্লিন ইমেজের কারণে তিনি এখন আলোচনায় আছেন।

আলোচনা হচ্ছে সোনারগাঁয়ের আজহারুল ইসলাম মান্নানকে নিয়েও। তিনিও আছেন জেলা বিএনপির সুপার ফাইভের কমিটিতে।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় থাকা মামুন মাহমুদ ইতোপূর্বে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও সাধারণ সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা করা হয়। সাড়ে ৩ বছর পর সেই কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় অ্যাডভোকেট তৈম‚র আলম খন্দকারকে আহবায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে জেলা বিএনপি’র ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৫ আগস্টের পর থেকে নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে উঠতে শুরু করেছে নানা অভিযোগ। কারো বিরুদ্ধে চাঁদাবাজী, দখলবাজি সহ নানা অভিযোগ উঠায় ক্রমশ বিতর্ক সৃষ্টি হচ্ছে। এসব নিয়ে অনেকের মধ্যে ক্ষোভ থাকলেও কিছুটা ব্যতিক্রম মামুন মাহমুদের ক্ষেত্রে। সাবেক এ অধ্যাপকের কর্মী থাকলেও নেই কোন বাহিনী। ফলে এখনো বিতর্ক ছুতে পারেনি তাকে। এসব কারণে দলের হাই কমান্ডেও হঠাৎ করেই মামুন মাহমুদকে নিয়ে নানা ধরনের আলোচনা হচ্ছে। ক্লিনম্যানে হিসেবেও অনেকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তাঁর নাম।

আলোচনায় আছেন গোলাম ফারুক খোকন। তিনি দুই বছরের বেশী সময় সদস্য সচিব ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা বিএনপিতে। এর আগে মুড়াপাড়া কলেজের ভিপি, থানা যুবদলে সভাপতি, বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ নেই বললেই চলে। কোন বিতর্কিত কাজেও গণমাধ্যমের শিরোনাম হননি। প্রমানাদি সহ তেমন কোন অভিযোগও নেই তার বিরুদ্ধে। সাংগঠনিক কাজে দিয়েছেন যোগ্যতা ও দক্ষতার পরিচয়। নব্বইয়ের গণ অভ্যুত্থান থেকে শুরু করে চব্বিশের আন্দোলন সবগুলোতেই তিনি ছিলেন সামনের কাতারে। ৫ আগস্টের আগে জুলাইতে মহাসড়কে যে আন্দোলন হয়েছে সেখানে পুলিশ আর আওয়ামী লীগের বুলেট পরোয়া না করে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে বিএনপিকে জাগিয়ে রাখেন। বিগত দিনে আওয়ামী লীগের এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী ও তার ছেলে পাপ্পার রোষানলে পড়েন খোকন। একাধিকবার তার বাড়িঘরে হামলা, জায়গা দখল করে যুবলীগের অফিস বানান। রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ সহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলা আছে অর্ধশত। এত কিছুর পরেও দমে থাকেনি খোকন।

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে আবারও জাহিদ হাসান রোজেলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। রাজনীতির নতুন সমীকরণে তিনি অন্যদের এগিয়ে রয়েছেন। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে তিনি হয়তো নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ে চলে আসারও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। এই জাহিদ হাসান রোজেল নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক, ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক পদে ছিলেন। আর এসকল পদে দায়িত্ব পালন করার মধ্য দিয়ে বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ে একটি শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন।

শহীদুল ইসলাম টিটু ২০২৩ সালে বিএনপির আন্দোলন কর্মস‚চীতে গিয়ে পুলিশের দ্বারা নির্যাতনের শিকার হন। এলোপাতারি গুলি ছোড়ায় তার চোখ গুলিবিদ্ধ হয়। যার কারনে তার দীর্ঘ চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এমনকি তার চোখ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরেনি এখনও। বিএনপি নেতার চোখে গুলিবিদ্ধ হবার ঘটনা প্রচারিত হয় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও। তার ত্যাগ ও আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহনের পুরস্কার হিসেবে জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদকের পদ প্রাপ্তি উত্তম প্রতিদান হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে আসলেই তিনি দায়িত্ব পাচ্ছেন কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরও বেশ কিছুদিন।

মাসুকুল ইসলাম রাজীব জেলা বিএনপিতে তরুণদের কাছে জনপ্রিয় একজন। তোলারাম কলেজের ভিপি থেকে শুরু করে জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়কের মত দায়িত্ব পালন করেছেন। সবশেষ জেলা বিএনপির সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহ থাকলেও শেষ সময়ে নিজেকে সরিয়ে নেন। এ কারণে তারেক রহমান তার প্রশংসা করেছিলেন। আসছে জেলা কমিটিতে তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে আগ্রহ তরুণ নেতাকর্মীদের। এছাড়া জেলা বিএনপির সাংগঠনিক তৎপরতাতেও রয়েছে রাজীবের দক্ষতা।

বিএনপির নেতাকর্মীরা বলছেন, আসছে কমিটি হবে অন্যবারের তুলনায় শক্তিশালী। সে কারণেই এবার সাধারণ সম্পাদক পদে থাকবে চমক।

Islam's Group