নারায়ণগঞ্জ সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর এবং সাবেক প্যানেল মেয়র মতিউর রহমান মতির পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন যিনি মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও আদালতপাড়ায় বিএনপিপন্থী সিনিয়র আইনজীবী।
অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন শুধু আইনি লড়াইয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেননি বরং সিনিয়র আইনজীবী হিসেবে বিচারককে কিছুটা চাপ প্রয়োগেরও চেষ্টা করেছেন যা নিয়ে স্বয়ং বিএনপির আইনজীবীদের মধ্যেই নানা কানাঘুষা চলমান রয়েছে। অথচ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই বিএনপির আইনজীবীরা দীর্ঘদিন পর আদালতপাড়ায় একটি অবস্থানে আসছেন। এবার তারাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বিরোধীতাকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
আদালত সূত্র জানা যায়, সোমবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার একটি হত্যা মামলায় ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দুইটি মামলায় রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে উঠানো হয় মতিউর রহমান মতিকে। প্রথমেই নারায়ণগঞ্জ সদর থানার স্বজন হত্যা মামলায় ৭ দিনের রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে উঠানো হয়। মতির পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও আদালতের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন।
সিনিয়র হিসেবে তিনি একাই মতির পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করছিলেন। সেই সাথে যুক্তির থেকে তিনি তার মতকেই বেশি চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছিলেন। বারবার বলছিলেন ‘স্যার দুইদিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ দিয়ে দেন’। একপর্যায়ে বিচারক বলেন, আপনারাই যদি সিদ্ধান্ত দিবেন তাহলে এখানে আসার কি দরকার ছিলো? এখন সবকিছু মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে হয়। এখানে কি হবে সেটা মিডিয়া জেনে যায়। সবকিছু আপনারা বললেই হয়ে যাবে না।
পরবর্তীতে অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল্লাহ-আল-মাসুম উভয় পক্ষের শুনানী শেষে দুই দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।
এরপর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার একটি হত্যা মামলায় ৭ দিন এবং হত্যাচেষ্টা মামলায় ৭ দিনের রিমাণ্ড চেয়ে অন্য আদালতে উঠানো হয়। এখানেও অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন মতির পক্ষে আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। সেই সাথে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ জন আইনজীবী লড়াইয়ে শামিল হন। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন কালে রাষ্ট্রপক্ষে কোর্ট পুলিশ একা হয়ে যান। রাষ্ট্রপক্ষে একপক্ষে একমাত্র পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির ছিলেন। কিন্তু তিনি যেন সকল আইনজীবীর সাথে পেরে উঠছিলেন না।
মতির পক্ষে দাঁড়ানো সকল আইনজীবীর পাল্টাপাল্টি যুক্তিতে আবুল কালাম আজাদ জাকির অনেকটাই নিরব হয়ে যান। পরবর্তীতে মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান আদালতে উপস্থিত হন। সেই সাথে মতির পক্ষে দাঁড়ানো আইনজীবীদের থামিয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে বলার সুযোগ করে দেন।
পরবর্তীতে উভয় পক্ষে শুনানী শেষে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাফিয়া শারমিন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার রিকশাচালক আব্দুল লতিফ হত্যা মামলায় ৩ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন। সেই সাথে আল আমিন নামে এক যুবককে হত্যাচেষ্টা মামলায় ২ দিনের রিমাণ্ড মঞ্জুর করেন।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো. জাকির হোসেন বলেন, নামকাওয়াস্তে ছিলাম। মতির স্ত্রী একসময় ছাত্রদল করতো। মহিলা কলেজের নেত্রী ছিলো। সে আমাকে বলেছিলো ভাই একটু দাঁড়াইয়েন। মতির বাড়ির শ্বশুর বাড়ির লোকজন সবাই বিএনপি করে। মতির ছেলের জন্য দাঁড়িয়েছিলাম। সবাই করে থাকে কেউ লুকিয়ে কেউ প্রকাশ্যে। আমারটা প্রকাশ্যে হয়ে গেছে এই আর কি।
এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৬নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি ও তার ছেলে বাবইকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত ১৩ জানুয়ারী ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মতিউর রহমান মতি নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে। মতি সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহবায়কও। সেই সাথে তিনি শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। যিনি গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতার ছাড়ার পর তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়েছেন।
এর আগে একটি দুর্নীতি মামলায় কারাভোগ করেন মতি। আওয়ামী লীগের পতনের পূর্বেও মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপনসহ ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৬৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কারাভোগ করলেও তারও পূর্বে এই মতির বিরুদ্ধে ছিলো মামলা ও সাজা।
উল্লেখিত হিসাব ছাড়াও মতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যাংকে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৪২৪ টাকা জমা করে তার থেকে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন করে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অবস্থান গোপন করারও অভিযোগ ছিলো।
আপনার মতামত লিখুন :