গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর আলোচনা রয়েছেন বিএনপি। আওয়ামী নেতাদের জমি প্রতিষ্ঠান দখল নিয়ে বিএনপি একাধিক নেতাদের বিরুদ্ধে। ৫ আগষ্টের পর অভিযোগের পাহাড় উঠে পড়ে। দেশের রাজনীতিতে অন্যতম অবস্থানে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে থাকা বিএনপি। নারায়ণগঞ্জে জেলা বিএনপি, জেলা মহানগর ছাত্রদল ও জেলা কৃষকদল কমিটি বিলুপ্ত করেছে। প্রায় ৫ মাসের কাছাকাছি সময়ে তিনটি সংগঠনের বিলুপ্ত করা হলেও এখনো নতুন কমিটি গঠন করা হয়নি। পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি ঘোষণার সমালোচনায় রয়েছে মহানগর যুবদল। অন্যদিকে আংশিক কমিটিতে থেমে রয়েছে জেলা যুবদল। বিএনপি কমিটির ধীরগতি কারণে আগামীতে রাজনীতিতে থমকে যেতে পারে প্রত্যাশিত নেতারা।
গত বছর শেষ সময়ের ২৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি বিলুপ্ত করেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। অতিসত্বর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে। এক মাসেও এখনো জেলা বিএনপি কমিটি গঠন হয়নি। বরং ইতোমধ্যে আলোচনা রয়েছে একাধিক নেতাদের নাম। ২০২৩ সালের ১৮ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য মো. গিয়াস উদ্দিন সভাপতি ও গোলাম ফারুক খোকন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান। ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর জেলা বিএনপির বিষয়ে একটা কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় বিএনপি। সেই কমিটির সুপারিশে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। অতিসত্বর নতুন কমিটি ঘোষনা আভাস দেয়া হলেও এখনো ২৬ দিনেও কোন কমিটি হয়নি জেলা বিএনপি। গুরুত্বপূর্ণ জেলা বিএনপি কমিটি বিলুপ্ত হওয়ার পরও এখনো কমিটি না দেয়া সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বা সাবেক সদস্য সচিব মামুন মাহমুদকে জেলা সভাপতি ও ভিপি রাজীবকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি আসতে এমন গুঞ্জন রয়েছে।
গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর আংশিক কমিটি ঘোষণার প্রায় দেড় বছর পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদল কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। একই সাথে জেলা ও মহানগরের অধীনে থাকা সকল উপজেলা কিংবা থানা, পৌর, কলেজ, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ছাত্রদলের কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল দপ্তর সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর কমিটি এবং অধীনস্থ সকল ইউনিট কমিটিও বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। বিলুপ্ত হওয়ার সাড়ে চার মাসেও এখনো জেলা মহানগর ছাত্রদলের কোন কমিটি ঘোষনা করেনি কেন্দ্র। এতে প্রত্যাশিত নেতাদের মধ্যে রয়েছে তোড়জোড়। কেন্দ্রীয় ও জেলা মহানগর নেতাদের দারস্থ হয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ আসীন হতে চান প্রত্যাশি নেতারা। ২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নাহিদ হাসান ভূঁইয়াকে সভাপতি এবং জুবায়ের রহমান জিকুকে সাধারণ সম্পাদক করে ৯ সদস্য বিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের নতুন আংশিক কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। একই সাথে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রদলের ৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছিল রাকিবুর রহমান সাগরকে ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিল রাহিদ ইসতিয়াক সিকদারকে।
নতুন বছরের প্রথম দিনে নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষকদলের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের দপ্তর সম্পাদক মো. শফিকুল ইসলামের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কমিটি বাতিল করা করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয়তাবাদী কৃষকদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষকদলের আহবায়ক কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। একইসঙ্গে দ্রুত নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষকদলের নতুন কমিটি গঠন করা হবে। জাতীয়তাবাদী কৃষকদল কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন এবং সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। এর আগে ২০২২ সালের ১২ ডিসেম্বর ডা. শাহীন মিয়াকে আহবায়ক ও কায়সার রিফাতকে সদস্য সচিব করে দুই সদস্যবিশিষ্ট জেলা কৃষকদলের আংশিক আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
মহানগর যুবদলের আহবায়ক কমিটি আংশিক ঘোষণার ১৭ মাস পর মনিরুল ইসলাম সজলকে আহবায়ক ও সাহেদ আহমেদকে সদস্য সচিব করে ৫১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহবায়ক কমিটি অনুমোদন করে কেন্দ্র। ১৪ জানুয়ারি এ কমিটির অনুমোদন দেন কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্না ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান এবং যুগ্ম আহবায়ক নূর এলাহী সোহাগ, মো. রুহুল আমিন, সাজ্জাদ হোসেন কমল, শেখ মোহাম্মদ অপু, আবদুর রহমান, মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, শাকিল মিয়া, আহসান খলিল শ্যামল, সাইফুল আলম সজিব, জাকির হোসেন সেন্টু ও আক্তারুজ্জামান মৃধা। মাঠ পর্যায়ে নেতাদের সদস্য করা নিয়ে আহবায়ক ও সদস্য সচিবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন কয়েক নেতা। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপত্তিকর লেখালেখি ও মন্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
১৭ মাস যাবৎ নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের আহবায়ক সাদেকুর রহমান সাদেক, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক খায়রুল ইসলাম সজীব ও সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি বহাল তবিয়তে রয়েছে। তাদের মধ্যে দ্ব›দ্ব কোন্দল থাকলেও জেলা যুবদলের কর্মসূচীতে থমকে পড়েছে। মহানগর পূর্ণাঙ্গ কমিটি পেলেও জেলা রয়েছে পিছিয়ে।
আপনার মতামত লিখুন :