News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

পদে না থাকলেও রাজপথে সরব গিয়াস


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০২৫, ১০:১৬ পিএম পদে না থাকলেও রাজপথে সরব গিয়াস

পদে না থাকলেও রাজপথে সরব ভূমিকা পালন করে আসছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এর আগে বিগত দুই বছর তিনি জেলা বিএনপির আহবায়ক তারপর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। আওয়ামী লীগের শাসনামল থেকে শুরু করে পতনের পরও দল পরিচালনায় তিনি সাহসিকতা ও দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। তবে গত ২৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হলেও তিনি এখনো রাজপথে বিএনপির জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরছেন।

এ বিষয়ে সর্বশেষ গত ১৮ জানুয়ারি সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি এলাকায় বিএনপির এক কর্মসূচিতে গিয়াস উদ্দিন বলেন, কোনো পদে থাকলাম কিংবা না থাকলাম, এমপি নির্বাচন হলাম কিংবা না হলাম। তাতে কোনো যায় আসে না। আমার কাছে পদের চেয়ে দল বড়। যে অবস্থানেই থাকি না কেনো দলের জন্য কাজ করে যাবো।

তাঁর এ বক্তব্যে দলের প্রতি গিয়াসের দায়িত্বশীলতা প্রকাশ পেয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতি সপ্তাহেই সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন তিনি। সেখানে নিয়মিত রাখছেন রাজনৈতিক বক্তব্য। দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে কোনো পদে না থাকলেও কাজের মাধ্যমে তিনি পূর্বের ন্যায় জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছেন। সেই সঙ্গে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছেই। এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। এর ফলে বর্তমানে জেলা বিএনপির কোনো দায়িত্বে না থাকলেও জেলা বিএনপিকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করতে গিয়াসের অবদান এখনো স্মরণ করছেন নেতাকর্মীরা।

নেতাকর্মীদের ভাষ্য, গিয়াসের নেতৃত্বে একের পর একের কর্মসূচি করে বাজিমাত সৃষ্টি করেছিল জেলা বিএনপি। তার হাত ধরেই অল্প কয়েকদিনেই বদলে গিয়েছিল জেলা বিএনপির চিত্র। এর ফলে সরকারী দলের চক্ষুশূলে পরিণত হতে হয় গিয়াস উদ্দিনকে। বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন থানায় দায়ের করা অর্ধশতাধিক মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলা দিয়ে তাকে অনেকটাই কোণঢাসা করে রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে পরে পুরোটা সময় গ্রেফতার এড়াতে তিনিসহ তার পরিবারকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল। তবে বিএনপির ওই কঠিন সময় গিয়াস উদ্দিন রাজপথে নামলেই গণজোয়ার সৃষ্টি হতো। নেতাকর্মীরা হয়ে উঠতো চাঙ্গা। এর আগে জেলা বিএনপির নেতৃত্বে আরও কয়েকজন থাকলেও গিয়াসের মতোন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি এমন নতুন মোড় সৃষ্টি করতে পারেন নি। নির্বাচনের আগে তাকে নিয়ে বারবার দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়েছিল নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানকে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বারবার গিয়াসকে নিয়ে তির্যকমূলক মন্তব্য করেন। গিয়াসকে ঘিরে সরগরম থাকতো জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।  

এর আগে গিয়াসের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ১৭ জুন দীর্ঘ ১৪ বছর পর জেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। যা নিয়ে পুরো জেলাজুড়ে তাকে নিয়ে সাড়া পড়ে যায়। যে সম্মেলনে সভাপতি নির্বাচিত হোন গিয়াস উদ্দিন। এই সম্মেলনে লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এর আগে জেলা বিএনপির আহবায়ক থাকা অবস্থায় তিনি পুরো জেলা বিএনপিকে ঢেলে সাজান। বিএনপিকে আগের তুলনায় করেন আরও সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী। তার বিভিন্ন কর্মকান্ডে জেলা বিএনপি নতুন করে জেগে উঠে। এর ফলে শামীম ওসমানের প্রধান টার্গেটে পরিণত হোন গিয়াস উদ্দিন। শামীম ওসমানের এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই যেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি গিয়াসের সমালোচনা করেন নি। তাকে নিয়ে শামীম ওসমানের অতিকথনে গিয়াস উদ্দিন বারবার খবরের শিরোনাম হোন।   

এদিকে ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটলে জেলাজুড়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্ধ শুরু হলে নেতাকর্মীদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে প্রশংসায় ভেসেছিলেন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। প্রতিনিয়ত তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানা দিকনির্দেশামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার বক্তব্য শুনে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের তুলনায় প্রতিনিয়ত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হয়েছিল। এর আগে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দলের মধ্যে বিশৃঙ্খলা শুরু হলে তা শক্ত হাতে দমন করেন তিনি। পাশাপাশি জেলার আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে প্রশাসনকে সব ধরণের সহযোগিতা করেন। সেই সঙ্গে তার নির্দেশনায় ৫ আগস্ট থেকেই জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাহারা দিয়েছিলেন নেতাকর্মীরা। এর আগে জেলা বিএনপির কমিটি হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী শামীম ওসমানের মাথাব্যাথা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় গিয়াস উদ্দিন। কারণ ২০০১ সালে তাকে হারিয়েই মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এক কর্মসূচি সফলভাবে পালন করেন গিয়াসের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপি। গিয়াসের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি আসার পর থেকেই দলটির রূপ বদলাতে শুরু হয়। কারণ জেলা বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচীতে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন অচল হয়ে থাকা কমিটিকে সচল করেন। তার কারণে সিদ্ধিরগঞ্জের প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হওয়া সম্ভব হয়। পাশাপাশি বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে জেলা বিএনপি।

Islam's Group