News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

গিয়াসের অবর্তমানে ফায়দা নিচ্ছেন সেন্টু


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১০:২২ পিএম গিয়াসের অবর্তমানে ফায়দা নিচ্ছেন সেন্টু

একসময় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হোন মনিরুল ইসলাম সেন্টু। ইউনিয়ন পরিষদ বিলুপ্ত না করায় এখনো পর্যন্ত নৌকার চেয়ারম্যান হিসেবে রয়েছেন তিনি। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপি নেতা সাজার চেষ্টা করছেন সেন্টু চেয়ারম্যান। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করায় এই সুযোগ বেশি নিচ্ছেন তিনি। কেননা জেলা বিএনপির কমিটি বিলুপ্তে সাবেক এমপি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে নেই। এই সুযোগে সে পুরোদমে বিএনপি নেতা হওয়ার জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। পালন করছেন বিএনপির কর্মসূচি। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের অনুসারীদের দিয়ে চালাচ্ছেন প্রচার প্রচারণা। এ নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর যেখানে আওয়ামী লীগপন্থী জনপ্রতিনিধিরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন সেখানে তিনি বিএনপি নেতা হিসেবে এলাকায় জাহির করে বেড়াচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার পরও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চলছে তীব্র ক্ষোভ।

এর আগে বিএনপিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোরতা দেখিয়েছিল গিয়াস উদ্দিন। এ নিয়ে একাধিক কর্মসূচিতে কঠোর মন্তব্য করেছিলেন তিনি। সে কারণে সেন্টু চেয়ারম্যান তখন নীরব ভূমিকায় থাকলেও গিয়াসের অনুপস্থিতিতে সে খালি পথে নিজের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছে। সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি ফতুল্লার মুন্সিবাগ এলাকায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মুন্সিবাগ সমাজ উন্নয়ন কমিটির আয়োজিত শীতবস্ত্র বিতরণে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মনিরুল ইসলাম সেন্টু। যেখানে তিনি তার বক্তব্যে আপাদমস্তক বিএনপি নেতা হিসেবে নিজেকে জাহির করেন।  এর আগে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে নিজেকে শহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বিএনপি নেতা হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ডিজিটাল ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। তার একাধিক অনুসারী ফেসবুকে তা শেয়ার দিচ্ছেন। ব্যানারে সেন্টু চেয়ারম্যানের পদবী দেওয়া হয়েছে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি। আর ব্যানারে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।

এদিকে একসময় বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত থাকলেও আওয়ামী লীগের শাসনামলে শামীম ওসমানের কর্মী হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করতেন তিনি। দুই নৌকায় পা দিয়ে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন তিনি। গত ৫ই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই তার চরিত্র বদলানো শুরু করেন। জানা যায়, মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার থেকে বাঁচতে তিনি এই পথ অবলম্বন করছেন। তবে গ্রেফতার না হলেও মামলা থেকে রেহাই পান নি তিনি। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। সর্বপ্রথম মাছ ব্যবসায়ী মিলন গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণের ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়েরকৃত মামলায় ১৯ নম্বর আসামি করা হয় তাকে। এর আগে জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ থেকে বারবার বলা হয়েছে যদি কোনো বিএনপির নেতা কিংবা কোনো কর্মী অবৈধ লাভের জন্য আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তাহলে তার বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু স্থানীয় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। বিশেষ করে চেয়ারম্যান সেন্টুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হচ্ছে ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ২ জুন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে জনগণের নেতা আখ্যা দিয়ে আগামীতে তাকে বিজয়ী করার আহবান জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মনিরুল আলম সেন্টু। তিনি বলেন, শামীম ওসমান যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে করে তিনি রীতিমতো মানুষের মনে ‘পীর’ হয়ে উঠেছেন।

২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিএনপি দলীয় প্রতীকে অংশ নিলেও মনিরুল আলম সেন্টুর কারণে কুতুবপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বিএনপির কেউ প্রার্থী হতে পারেনি। শামীম ওসমানের পরামর্শে চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। জনশ্রুতি রয়েছে, ওই নির্বাচনে শামীম ওসমানের অনুগামীরা নৌকা ডুবিয়ে দেয়। অর্থাৎ ওই ইউপি নির্বাচনে কুতুবপুরে আওয়ামী লীগ দলীয় নৌকার প্রার্থীর ভরাডুবি ঘটে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করায় বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয় চেয়ারম্যান প্রার্থী মনিরুল আলম সেন্টুকে। এরপরে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করলেও বিএনপির রাজনীতিতে আর সক্রিয় ছিলেন না মনিরুল আলম সেন্টু। বরং আওয়ামী লীগের এমপি ও নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যেত। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে অংশ নেন মনিরুল আলম সেন্টু। আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচিতেই তাকে সক্রিয় দেখা গেছে।

এদিকে, গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এরপর ৩১ জুলাই কাশিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের জরুরি সভায় চেয়ারম্যান মনিরুল আলম সেন্টু বলেন, কোটা ইস্যুতে আন্দোলনে যেভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদে ধ্বংসলীলা চালা‌নো হ‌য়ে‌ছে এ ধর‌নের নৈরাজ্য একা‌ত্তর‌কে হার মা‌নি‌য়ে‌ছে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে যে অবস্থা বিরাজ করছে। কোটা আন্দোলন নিয়ে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমি দেশের বাহিরে ছিলাম, এসেই মর্মাহত হলাম। এতো আন্দোলন হলো, এরশাদবিরোধী আন্দোলন হলো। এতো ভয়াবহতা কখনই হয় নাই। আমি দলের (আওয়ামী লীগ) নেতাদের সাথে যোগাযোগ করলাম। তারা আমাকে বললেন যেন প্রতিহত করার জন্য ব্যবস্থা নেই। এরই মধ্যে সাইনবোর্ড এলাকা যেন ধ্বংস স্তূপে পরিণত হয়েছে। তারপরেও আমি আজ এই মিটিংয়ে বলতে চাই। আন্দোলন আছে থাকবেই। প্রত্যেক দলের মধ্যেও আভ্যন্তরীণ কোন্দল আছে থাকবে। কিন্তু এখন কাদা ছোড়াছুড়ি করা যাবে না। যে অবস্থা চলছে। প্রধানমন্ত্রী দেশ রক্ষায় কাজ করছে। আমাদের এখন ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে নামতে হবে। সে যদি আমার ভাই হোক, বাপ হোক। তারপরেও কোনো ছাড় নাই। তিনি আরও বলেন, কোনো সন্ত্রাসী জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করবে, তাকে ছাড় দেয়ার কোনো অবকাশ নেই। তাকে ছাড় দিলে আগামীতে আমরাও থাকতে পারবো না। তাই সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের এমপি শামীম ওসমানের নেতৃত্বে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পরিচালনায় কর্মসূচি দিবেন। আমি আমার পক্ষ থেকে সর্বশক্তি দিয়ে থাকবো। প্রথম যুদ্ধটা আমাদের সাথেই হোক। এরপর অবস্থান অনুযায়ী মাঠে থাকবো। সকলে সহযোগিতা করবেন। এখন থেকে কেউ হইচই করে দাঁড়াতে পারবে না। আমরা সেইভাবে নেতৃবৃন্দকে নিয়ে মাঠে থাকবো। এসময় জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু যুক্ত করে বক্তব্য সমাপ্তি করেন তিনি।

Islam's Group