অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় নির্বাচন আগে অনুষ্ঠিত করবে নাকি স্থানীয় নির্বাচন তা নিয়ে চলছে নানান আলাপ আলোচনা। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের মতে স্থানীয় নির্বাচন আগে আগে অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরী। তা হলে ক্ষমতায় থাকা রাজনৈতিক দলগুলো বাড়তি প্রভাব নির্বাচনে দেখাতে পারবে না। অন্যদিকে বিএনপিপন্থী কিছু রাজনীতিবিদ চাচ্ছেন, জাতীয় নির্বাচনের পরেই অনুষ্ঠিত হোক স্থানীয় নির্বাচন।
স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রসঙ্গ উঠলেই নারায়ণগঞ্জে চলে আসে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদের কথা। জনপ্রতিনিধিদের সরিয়ে দিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে প্রশাসক বসিয়ে। এতে করে সাধারণ মানুষ ও সেবাগ্রহীতাদের সেবা বিঘ্নিত হবার ঘটনা ঘটছে। দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দিয়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালী করার দাবী উঠেছে অনেক মহলে।
স্থানীয় সরকারের মধ্যে সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন। যেখানে একজন প্রতিমন্ত্রী মর্যাদাপ্রাপ্ত মেয়র সহ ৩৬ জন কাউন্সিলর দায়িত্ব পালন করে। অধিভুক্ত অঞ্চল তিনটি থানায় বিস্তৃত। তাই এই সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদের দিকে নজর থাকে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর। আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটানোর পর এই সিটি করপোরেশনের পদে আসীন হতে নজর পড়েছে সকলের। বিশেষ করে বিএনপি নেতারা মেয়র পদে যাবার স্বপ্ন দেখছেন এখনই।
সিটি করপোরেশন গঠিত হবার পর থেকেই টানা মেয়র হয়ে আসছেন সাবেক পৌর চেয়ারম্যান আলী আহাম্মদ চুনকার কন্যা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানকে হারিয়ে বিপুল ভোটে জয় লাভ করেন আইভী। সেই নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের ভোট আইভী পেয়েছেন বলে দাবী করেন শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। পরবর্তীতে আইভীর সামনে হাজির হয় সেসময়কার নবীন মুখ অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রার্থীর সামনে সহজেই জয় পেয়ে যান আইভী।
সবশেষ বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত তৈমূর আলম খন্দকার স্বতন্ত্র প্রতীক নিয়ে আইভীর প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করলেও তাকে সমর্থন দেয়নি বিএনপি। যার ফলে সহজেই জয় পান আইভী। টানা তিনবারের মেয়র হবার সুবাদে ভোটের মাঠের রাজনীতিতে বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন। তাছাড়া শামীম ওসমানের বিরোধী রাজনীতি করায় বিভিন্ন মহলে তার গ্রহনযোগ্যতা ছিলো। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা দায়ের করা হলে এতে প্রতিক্রিয়া দেখান অনেকে। আইভী যেখানে নিজ দলের নেতাকর্মীদের দ্বারা হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছেন, সেখানে তিনি বা তার নির্দেশে হত্যাকান্ড সংগঠিত হবে এমন দাবী কোনভাবেই বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি।
আইভী একাধিক মামলায় আসামী হলেও গ্রেপ্তার হননি। মামলার পাশাপাশি দুদক থেকে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে নোটিশ জারির পর আইভীর বিদেশ যাওয়া বন্ধ হয়ে আছে। ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন, দেশেই অবস্থান করছেন আইভী। গত ১৫ বছরে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের উপর ভরসা করে দেশে অবস্থান করছেন তিনি। তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ শামীম ওসমান পালিয়ে গেলেও তিনি যে পালাবেন না তা জানিয়েছিলেন বহু আগেই। সেই কথা রাখতেই যেন জেদ করে অবস্থান করছেন দেশে। প্রমাণ করতে চান, আওয়ামী লীগের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে যেই অবস্থান ধরে রেখেছিলেন, তার মূল্যায়ন পাবেন মানুষের কাছ থেকে।
রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, আইভীর দেশে থাকা, পালিয়ে না যাওয়া এবং দৃঢ়চেতা মন স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিপক্ষদের জন্য দুশ্চিন্তার কারন। আওয়ামী লীগ না থাকলেও আগামী সিটি নির্বাচনে আইভী মেয়র পদে দাড়ালে বিএনপির বহু প্রার্থী তাদের জয় পাওয়া নিয়ে শংকায় পড়ে যাবেন। কারন গত ৫ মাসে বিএনপির নেতাকর্মীরা বিভিন্ন এলাকায় যা করে দেখিয়েছে তাতে সাধারন মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে। যেই ইমেজ ক্ষুন্ন হবার কারনে আইভী ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন স্থানীয় রাজনীতিতে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য সাধারন মানুষ ধরতে পারে খুব সহজে। আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর অর্থ বিনিয়োগ এবং গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে সত্য ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। মানুষ সত্য তথ্য জেনে নিয়েছে নিজ উদ্যোগেই। তাই রাজনৈতিক দল ও নেতারা কে কি করছেন এবং কার ভুমিকা কি তা সকলেই জানেন। তাই যেকোন অভিযোগ বা বয়ান কারও বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চাইলে তার জন্য লাগবে পর্যাপ্ত প্রমানাদি। অন্যথায় মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইলে তা বুমেরাং হবে রাজনৈতিক দল ও নেতাদের জন্য।’
আপনার মতামত লিখুন :