News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ২২ জানুয়ারি, ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

শাহীন আওয়ামী লীগের ‘মুরগী’ ধরে সাখাওয়াত ‘টুপি’ পড়ান


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ১০:৪৬ পিএম শাহীন আওয়ামী লীগের ‘মুরগী’ ধরে সাখাওয়াত ‘টুপি’ পড়ান
বা থেকে শাহীন, সাখাওয়াত হোসেন খান ও হিরণ।

বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল সহ নানা অভিযোগ এনে তাদের বহিষ্কার দাবি করে কেন্দ্রে আবেদনের ঘটনার আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। অনুসারিরা বলছেন হিরণ ও লিটনকে বির্তকিত করতেই উপজেলা যুবদলের শাহিন আহম্মেদ এই চিঠি দিয়েছেন, আর শাহিন বিএনপির নেতাকর্মীদের থেকে মিথ্যা বলে স্বাক্ষর নিয়ে অভিযোগের সাথে জমা দিয়েছেন।

তবে শাহিনের দাবি, আমি কারো কাছে যাইনি সবাই এক জায়গায় এসে স্বাক্ষর করেছেন উনারাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে একাট্টা হয়ে অভিযোগ দিয়েছেন। আর যে অভিযোগ তোলা হয়েছে সেটি তদন্ত করলেই তো সত্য বেরিয়ে আসবে।

তবে উপজেলা বিএনপির এসব কর্মাকাণ্ড এবং অভিযোগের বিষয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য মহানগরের নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে আসেনি। এরআগে উপজেলা বিএনপির দুই নেতার বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ জমাদানের বিষয়টি মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান কিছুই জানেন না বলে সময়ের নারায়ণগঞ্জকে নিশ্চিত করেন।

তবে এবার নিজেদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পর্কে মুখ খুলেছেন বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন।

সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে হিরণ বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ আনা হচ্ছে এগুলো সবই মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমরা এটা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই মনে করি। আমরা বিষয়টি বার বার মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খানকে অবহিত করেছি। তিনি বলেছেন দলের বিরুদ্ধে কেউ অপপ্রচার করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কই তিনি তো কোন ব্যবস্থা নিলেন না। অথবা তিনি অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করতে একবারো সরেজমিনে এখানে আসেনি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে চাই ৪০ বছর যদি বিএনপির রাজনীতি করি যদি কেউ আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির একটা অভিযোগ দিতে পারে তাহলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দিবো।

অ্যাভভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে হিরণ বলেন, প্রকৃত অর্থে এই সাখাওয়াত সাহেবই হচ্ছে মূলহোতা। উনার ক্যাশিয়ার হয়েছেন মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহম্মেদ। যে কিনা সাখাওয়াত সাহেবের কাছে একটা একটা করে মুরগি ধরে নিয়ে দেয় আর সাখাওয়াত সাহেব তাদেরকে টুপি পড়ান আর তারা আওয়ামী লীগ হয়ে যান।

হিরণ আরো বলেন, প্রত্যেকটা আওয়ামী লীগ নেতার মামলা সাখাওয়াত সাহেব দেখছেন তিনিই জামিন করাচ্ছেন। সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ উদ্দিন মণ্ডলের জামিন করিয়েছেন, বন্দর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতির জামিন করিয়েছেন, বন্দর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেনের সকল মামলা উনি পরিচালনা করছেন উনিই জামিন করিয়েছেন। রূপগঞ্জের এমপি গাজীর মামলা উনি করেন, রূগপঞ্জের ইটাভাটা নিয়ে শফিউল্লার মামলা উনি করেন। শফিউল্লার রিমান্ড কাটিয়ে উনি আমাকে পকেট দেখিয়ে বলেছেন এই যে এক লাখ টাকা পেয়েছি রিমান্ড আটকিয়ে। মামলা বাণিজ্য আমি না মামলা বাণিজ্য করেন সাখাওয়াত হোসেন খান নিজেই। কেউ কোনোদিন একটা প্রমাণ দেখাতে পারবে আমরা কোনো আওয়ামী লীগের মামলা নিয়ে কারো কাছে গিয়েছি। বরং সাবেক কাউন্সিলর সিরাজ মন্ডলকে গ্রেপ্তার করার সাখাওয়াত সাহেব থানায় ফোন করেছিলেন। বন্দরে ছাত্র আন্দোলনের সময় নিহত স্বজনের বাড়িতে যুবলীগ নেতা আমানউল্লাহর গাড়ি দিয়ে গেছেন সাখাওয়াত হোসেন খান। উনি কেন আওয়ামী লীগ নেতার গাড়ি দিয়ে যাবেন।

তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে বলা হয় আমরা জমি দখল করেছি। যে জমি নিয়ে অভিযোগ সেই জমি নিয়ে ১৪টি মামলা। সাদেক সাহেবকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভয় দেখিয়ে জমি দখল করে রেখেছিলো। এই জমির বিচার নিয়ে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন, নজরুল ইসলাম আজাদ ভাই সকলের কাছে গিয়েছেন। আজাদ ভাই আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন যার কাগজ রাইট তাকে জমি বুঝিয়ে দিয়েছিলো। আওয়ামী লীগের ১৭ বছরে আমাদের অনেকের জমি, দোকানপাট দখল করে নিয়েছে, সেগুলো এখন দখলমুক্ত করতে গেলে আমরা দখলবাজ।

তিনি বলেন, সাখাওয়াত সাহেব মালিবাগ স্কুলের সভাপতিতে বানাতে আওয়ামী লীগের শওকতের জন্য লিখিত সুপারিশ করেছেন, শামসুজ্জোহা স্কুলের জন্য জাহাঙ্গীরের জন্য সুপারিশ করেছেন। শওকত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রভাব খাটিয়ে নানা অপকর্ম করেছে, জাহাঙ্গীর জাতীয় পার্টির নেতা আওয়ামী লীগের খাস লোক। শেখ জামাল স্কুল নিয়েও তারা নানা চক্রান্ত করে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। মাসুমের সাথে আমার সখ্যতার কথা বলা হয়, শেখ জামাল স্কুল থেকে মাসুমকে আমি বিতাড়িত করেছি। মাসুমের মামলা নিয়ে আমাদের দলেরই অনেকে সুপারিশ করেছে আমি বলেছি নো, মাসুম মার্ডার মামলার আসামি। মামলারবাদী  জাহিদ খন্দকার কে বলেছি মামলায় আরো শক্ত অবস্থান নিতে।

তিনি বলেন, বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আওয়ামী লীগের দালালি করছে মুছাপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহম্মেদ। বলা হয় আমরা জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের লোকদের পুনর্বাসন করি। আমার কাছে প্রমাণ আছে কারা এই শাহিন জাতীয় পার্টির মিটিংয়ে মাকসুদ হোসেনের সাথে। যুবলীগ নেতা ফারুককে এখন বিএনপি বানানো হচ্ছে। তার বাড়িতে সাখাওয়াত হোসেনের দাওয়াত খাইতে আসার কথা ছিলো। প্রতিবাদের মুখে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত উনি আসেন নাই। এসময় তিনি শাহিন আহম্মেদ এর মিছিলে ফারুক হোসেনের ছবি তুলে ধরে দেখান। তিনি বলেন শাহিন, তাওলাদ, মামুন এরাই এই অপপ্রচার গুলো ছড়াচ্ছে।

বন্দর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুণ অর রশিদ লিটন বলেন, একবছর আগে সম্মেলনের মাধ্যমে আমি সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। তখন মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এর অত্যন্ত কাছের লোক। শাহিন আমার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। নির্বাচনে হারার পর থেকেই আমার পেছনে লেগে আছে। তাকে সহযোগিতা করেন আমাদের মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। আমাদের ইউনিয়ন সহ আশে পাশের ইউনিয়ন থেকে এই শাহিনের মাধ্যমে বিভিন্ন আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির লোকজন তার কাছে নিয়ে যায় সে জামিন করিয়ে দেয়। ওরা আওয়ামী লীগের এজেন্ট। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে ওরা সব কিছু করছে। ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এরা সব সময় আওয়ামী লীগের লোক ছিল যার অনেক প্রমান রয়েছে আমাদের কাছে। এরাই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়। আমাদের মহানগর বিএনপির সভাপতি সেক্রেটারি আমাদের ডেকে এসব জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারতেন কিন্তু তারা সেটা করনেনি।  এটা না করে ক্যাশিয়ার শাহিনের কথা শুনে সব করছে। আওয়ামী লীগের যেসকল নেতাকর্মীদের দ্বারা বিএনপির কর্মীরা নির্যাতিত হয়েছে তাদেরকে যদি এখন সাখাওয়াত হোসেন সাহেব জামিন করান তাহলে উনারা দ্বারা বিএনপি এবং দলের নেতাকর্মীরা কতটুকু লাভবান হবেন। দলের কি লাভ হবে।

উল্লেখ্য গত বন্দর উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উপজেলা বিএনপির নেতারা। গত ৯জানুয়ারি তারেক রহমান বরাবর দেওয়া অভিযোগপত্রটি রিসিভ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল করিব রিজভী। বন্দর উপজেলা বিএনপির আওতাধীন ৫টি ইউনিয়ন কমিটির মোট ৪৩জন নেতা ওই অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষর দিয়েছেন। সকলের পক্ষে অভিযোগপত্র দায়ের করেছেন মহানগর বিএনপির সদস্য ও মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহিন আহম্মেদ।

অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, আমরা নিম্ন স্বাক্ষরকারী বন্দর উপজেলা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতাকর্মীবৃন্দ। গত ৫ আগস্ট ২০২৪ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলস ফ্যাসিবাদী স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকার বিদায় হওয়ার পর বন্দর উপজেলা বিএনপির উপরে বর্ণিত নেতাদ্বয় যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের দোষরদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দলে ভেড়াচ্ছে নিজে ব্যক্তিগত ভাবে লাভবান হওয়ার জন্য। এছাড়াও উক্ত নেতাদের পরষ্পর যোগসাজসিক ভাবে সাধারণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে নীরব চাঁদাবাজি করছে। এসকল অপকর্মের কোন বিচারই হচ্ছে না। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে দলীয় তদন্ত করলে এর শতভাগ সত্যতা পাওয়া যাবে।

অতএব, যতদ্রুত সম্ভব সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বিএনপি নেতা মাজহারুল ইসলাম হিরণ ও হারুনুর রশিদ লিটন এর দলীয় পদবী থেকে অব্যাহতি দিয়ে দলের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি। নয়তো দল সামনের দিকে আরো ক্ষতির সম্মুখিন হবে বলে আমরা মনে করি।

Islam's Group