ছাত্র-জনতা আন্দোলনের রোষানলে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর ভারতের দিল্লীতে চলে যান শেখ হাসিনা। হঠাৎ এমন ঘটনায় দেশে আটকে পড়েন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমান। ৩ আগষ্ট দলীয় সংবাদ সম্মেলনে দেখা গেলেও বাকি সময়ে তিনি উধাও হয়ে যান। ৫ আগষ্ট সরকার পতনের পর ১৪ আগষ্ট সিলেটের মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের পাঁচ তারকা হোটেল ‘গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফে’ আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা শামীম ওসমানের থাকার গুঞ্জনে সকাল থেকেই সেখানে ভিড় করেন উৎসুক জনতা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী রিসোর্টে তল্লাশি চালিয়ে জানতে পারে, বিষয়টি গুজব। এরপর থেকে তাকে আর নিয়ে কোন আলোচনা উঠেনি।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, ১৭ বা ১৮ আগষ্ট যে কোন সময় শামীম ওসমান ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল দালালদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। এতে তিনি কলকাতা নেতাদের মাধ্যমে তিনি দিল্লীতের অবস্থান এবং শেখ হাসিনার সাথে দেখার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভারত সরকারের কঠোরতা কারণে দীর্ঘ দিন তিনি তার নেত্রীর সাথে দেখা করার সুযোগ পায়নি।
দিল্লীতে অবস্থান করেও শেখ হাসিনার সাথে দেখা বা কথা বলতে না পারায় ৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে দেখা যায় শামীম ওসমানকে। তিনি ওইদিন উপস্থিত কয়েক মিডিয়ার কাছে ভাইরাল হওয়ার জন্য প্রকাশ্যে আসেন। নেত্রীর আস্থাস্থল নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত করেছেন এমন বার্তা যেন শেখ হাসিনার নিকট পৌছাঁয়। ওই মিডিয়া ও কয়েক ছাত্রের সাথে তিনি সেলফি তুলেন বলে ফেসবুকে দেন ছাত্ররা।
গত দুই বছর আগে ২০২২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগা জিয়ারত করেন। পরে নিজামউদ্দিন আউলিয়ার দরগার বিভিন্ন অংশে যান। ভারতে সুফি সংস্কৃতির অন্যতম পবিত্র স্থান এই দরগাটি প্রায় ৭০০ বছরের পুরনো। শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের পর ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে অবস্থানকালে শেখ হাসিনা নিয়মিত নিজামউদ্দিন দরগায় জিয়ারতে যেতেন। এর আগে ২০১৭ সালে আজমির শরীফ জিয়ারত করেন। ২০১০ সালে দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে আজমির শরীফ জিয়ারত করেন শেখ হাসিনা।
শামীম ওসমানের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতা আন্দোলনে শামীম ওসমানের কঠোর ভূমিকা না থাকায় শেখ হাসিনা তার উপর ভীষণ ক্ষোভে রয়েছেন। দেশে ওই আন্দোলনে শামীম ওসমানের নির্বাচনী এলাকা নারায়ণগঞ্জের চিটাগাংরোড, সানারপাড়া, সাইনবোর্ড, লিংক রোড ও শহরে তান্ডব চালিয়েছে ছাত্র-জনতা। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ১৮ জুলাই ছাড়া তাকে দেখা যায়নি। লক্ষ নেতাকর্মীদের প্রাণ শামীম ওসমান ছাত্র-জনতা আন্দোলনে চুপষে পড়ায় সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। সেই জন্যই দিল্লীতে শামীম ওসমানের সাথে দেখা বা মুঠোফোনে আলাপচারিতা করেনি শেখ হাসিনা। দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরগাহে শেখ হাসিনার জন্য দোয়া চান তিনি। নেত্রীর সাথে দেখা না হওয়ায় শামীম ওসমান হতাশা নিয়ে ১ অক্টোবর দুবাই উদ্দেশ্যে দিল্লী ছাড়েন তিনি। এর মধ্যে তার শ^শুড় ফয়েজউদ্দিন লাভলু ও দলীয় কয়েকজন নেতাদের নিয়ে আগামী দিনের পরিকল্পনা করেছেন বলে জানা যায়।
আপনার মতামত লিখুন :