নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক মামুন মাহমুদের বলয় যেন দিন দিন বড় হচ্ছে। একের পর এক নেতা তার মঞ্চে উপস্থিত হচ্ছেন। সেই সাথে সভা সমাবেশে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি বাড়ছে। পাশাপাশি শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও মামুন মাহমুদের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করতে না পারলেও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যা আগামী জাতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য তার অবস্থানকে পোক্ত করে তুলছে।
সবশেষ গত ২৯ নভেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের ৯ নং ওয়ার্ড এলাকার জালকুড়ি স্কুল মাঠে আওয়ামীলীগ ও তার দোসরদের সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও হানাহানির প্রতিবাদে শান্তি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আর এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়েছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুন মাহমুদ। তার এই উপস্থিতিতে কেন্দ্র করে এই সমাবেশ বিশাল জনসমাবেশে পরিণত হয়। সেই সাথে মঞ্চে মামুন মাহমুদের সাথে বিভিন্ন পর্যাযের নেতাকর্মীরা উপস্থিত হয়েছিলেন।
যাদের এতদিন মামুন মাহমুদের সাথে বিভিন্ন সভা সমাবেশে দেখা যেতো না। কিন্তু এসকল নেতারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মামুন মাহমুদের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নেমেছেন। এই সমাবেশ থেকে পরবর্তী সমাবেশেরও বার্তা দেয়া হয়। আগামী সমাবেশগুলোতেও আরও চমক দিবেন বলে মামুন মাহমুদের অনুসারীরা জানিয়েছেন।
সমাবেশ থেকে মামুন মাহমুদ বলেন, কারা আন্দোলন সংগ্রামে ছিল, আর কারা লুকিয়ে ছিল, কারা সক্রিয় আর চাঁদাবাজি লুটপাট করেছে তা তারেক রহমান জানেন। লুটপাটকারীরা ভালো হয়ে যান। সব তারেক রহমান জানেন। আপনারা ছাড় পাবেন না। ভালো হয়ে যান। উৎপাতকারীরা অবশ্যই দলীয় শাস্তির আওতায় আসবে। আপনাদের বিরুদ্ধে শাস্তি অবধারিত।
নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে অন্যান্য সকল প্রার্থীদের চেয়ে সামাজিক কার্যক্রমে তিনি বেশ এগিয়ে রয়েছেন। বিশেষ গত ৫ আগস্ট পরিবর্তিত পরিস্থিতির পর থেকে তিনি বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত ও আহতদের সহযাগিতার পাশাপাশি জনসাধারণের কল্যাণে বিভিন্ন রকমের কর্মসূচি নিয়ে তারা একের পর এক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্দেশনায় মামুন মাহমুদের উদ্যোগে ডেঙ্গু প্রতিরোধে মাসব্যাপী পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও গণসচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচির নেয়া হয়েছে। সেই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন এলাকায় মশক নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কোনো কোনো পোগ্রামে মামুন মাহমুদ নিজে গিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। আবার কোনো কোনো পোগ্রামে নিজে উপস্থিত না থাকলেও তার নির্দেশনায় সিদ্ধিরগঞ্জজুড়েই মশক নিধন ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে মামুন মাহমুদ বলেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও আমাদের নেতা তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা জনসেবায় কাজ করে যাচ্ছি। আগেও ছিলাম, এখনও কাজ করছি।
এর আগে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা দখল করে থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন নয়। আর এই আন্দোলন করতে গিয়ে যারা আহত ও নিহত হয়েছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকের পাশেই দাঁড়িয়েছেন মামুন মাহমুদ। বিভিন্নভাবে তাদের সহযোগিতা করেছেন।
তার আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবরের পর থেকে সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিএনপি সহ সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোট একের পর এক হরতাল অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছিলো। দেশব্যাপী সড়ক-রেল-নৌপথ ও রাজপথ সহ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছিলো দলগুলো। কিন্তু এসকল হরতাল অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর বিএনপির কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
জেলা ও মহানগরের কোথাও বিএনপির কোনো পর্যায়ের নেতাদের দেখা মিলেনি। সেই সাথে জেলার বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরও কোনো যোগাযোগ ছিলো না। কেউ যদি কর্মসূচি পালন করে থাকেন তাদের নিজের ইচ্ছা অনুযায়ীই কর্মসূচি পালন করছেন। জেলা ও মহানগরের শীর্ষ পর্যায় থেকে কোনো দিক নির্দেশনা ছিলো না।
কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মামুন মাহমুদ। সকল কর্মসূচিতেই মামুন মাহমুদের অনুসারীরা কোনো না কোনোভাবে নিজেদের জানান দিয়েছেন। সেই সাথে মামুন মাহমুদও নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
এভাবে একের পর এক কর্মসূচি ঘোষণার কারণে গত ২৮ অক্টোবরের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পরিবার পরিজন ছেড়ে বাইরে দিন যাপন করতে হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রশাসনিক বাহিনী তাদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তল্লাশী চালিয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। অনেক সময় তাদের উপড় চাপও প্রয়োগ করছেন অবস্থান জানার জন্য।
ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা গ্রেফতার এড়াতে দিনের পর দিন বাড়ি ছাড়া দিন পার করছেন। অনেক নেতাকর্মী গ্রেফতার হয়েছেন। আর এই অবস্থায় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মামুন মাহমুদ। যাকে যেভাবে সহযোগিতা করার দরকার তিনি সেভাবে সহযোগিতা করেছিলেন। এক্ষেত্রে কোনো রকমের কার্পন্য করেননি তিনি। ফলে বর্তমানে নেতাকর্মীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন মামুন মাহমুদ।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আর এই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও সদস্য সচিব হিসেবে গোলাম ফারুক খোকনের নাম ঘোষণা করা হয়। সেই সাথে কমিটিতে ১ম যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে ছিলেন মামুন মাহমুদ।
তবে এই কমিটি ঘোষণার আগে মামুন মাহমুদ আশায় ছিলেন তিনি হয়তো জেলা বিএনপির শীর্ষ পদে আসবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মামুন মাহমুদ আসার সুযোগ পাননি। তার বিপরীতে শীর্ষ পদে আসার সুযোগ পেয়ে যান তারই আসনের বিএনপি দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। যার সাথে প্রায় সময়ই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মামুন মাহমুদের বিরোধ পরিলক্ষিত হয়।
একই সাথে এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ব্যানারে তিনি আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করে আসছেন। কোনো কর্মসূচিতেই তাকে একসাথে দেখা যায়নি। সেই সাথে জেলা বিএনপিও তাকে গুরুত্ব দেয়নি। ১ম যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে থাকলেও তাকে কোনো কার্যক্রমে রাখা হতো না। ২০২৩ সালের ১৭ জুন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলকে কেন্দ্র করেও মামুন মাহমুদ বঞ্চিত ছিলেন। সম্মেলনের দিনও তিনি উপস্থিত থাকেননি।
এভাবে একের পর এক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে জেলা বিএনপির রাজনীতিতে দূরে থেকে গেলেও কেন্দ্রীয় বিএনপি তাকে আবার এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেন। সবশেষ বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়েছেন মামুন মাহমুদ। ২০২৩ সালের ১১ অক্টোবর দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল আহমেদ রিজভী সাক্ষরিত বিবৃতিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। সেই সাথে এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএপির রাজনীতিতে মামুন মাহমুদের অবস্থানকে জানিয়ে দেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়।
মামুন মাহমুদের অনুসারীদের বক্তব্য, জেলায় তাকে মূল্যায়ন না করলও কেন্দ্রীয় বিএনপি মামুন মাহমুদকে ভুলে যায়নি। একের পর এক কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে মামুন মাহমুদকে এগিয়ে আসার সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। এতে করে জেলা বিএপির পদ পদবীর বাইরে থাকলেও মামুন মাহমুদের অনুসারীরা যারা তারা হতাশ হচ্ছেন না। তারা মামুন মাহমুদকে নিয়ে আগের মতোই স্বপ্ন দেখছেন। মামুন মাহমুদই একদিন তাদের নেতা হবেন। সেই সাথে আগামী দিনে দলীয় মনোনয়নও পাবেন।
আপনার মতামত লিখুন :