News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ছাত্রদল নিষিদ্ধ হয়েছে, যুবদল নিষিদ্ধ হবে!


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৪, ০৯:৫৯ পিএম ছাত্রদল নিষিদ্ধ হয়েছে, যুবদল নিষিদ্ধ হবে!

ছাত্রদলের পর এবার যুুবদল নিষিদ্ধ হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ। সম্প্রতি বন্দরে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে নিজ দলের সহযোগী সংগঠন নিয়ে তিনি এমন বেফাঁস মন্তব্য করে বলেছেন। এ ব্যাপারে বন্দর উপজেলা বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সাথে কথা হলে তারা জানান, মাজহারুল ইসলাম হিরণ একজন মুর্খ প্রকৃতির লোক, এছাড়া উনি কোনদিন ছাত্রদল বা যুবদলের রাজনীতি করে আসেনি। সরাসরি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি হয়েছেন উনার কাছ থেকে এর থেকে ভাল আর কি বক্তব্য আশা করা যায়।

সময়ের নারায়ণগঞ্জ এর হাতে তার দেওয়া সেই বক্তব্যের একটি ভিডিও এসেছে। যেখানে মাজহারুল ইসলাম হিরণকে বলতে শোনা যাচ্ছে, উনি স্বপ্ন দেখেন, উনি বাংলাদেশের খুব কাছেই আছেন, উনি টুপ করে ঢুকে যাবেন। এখন যত উনি এই স্বপ্ন দেখবেন ততো উনির জন্য বিপদ। উনি যখন টুপ করে ঢুকতে গেছেন উনির ছাত্রদল নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। আবার উনি এখন স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করেছেন। আপনি যত স্বপ্ন দেখবেন ততো আপনার যুবদল নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। আবার এই দেশে ডুকার স্বপ্ন দেখবেন আপনার আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ হয়েছে। তখন আপনার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

বন্দর উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ এমন ভুল বা বিভ্রান্তি ছড়ানো বক্তব্যের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি তো এক সপ্তাহের আগের ঘটনা। এটি নিয়ে এখন টানাটানি করলে হবে? কথাটি ভুলবশত বলেছি, ভুল তো হতেই পারে।

প্রসঙ্গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বন্দরে এই নেতাকে নানা সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা কমিটির বড় একটি অংশ তাকে বয়কটের ঘোষণা দিয়ে তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি তুলে ধরে মহানগর নেতৃবৃন্দদের দৃষ্টি আকর্ষন করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

উল্লেখ্য, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। যার মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম আহম্মেদ, নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা অহিদুজ্জামান অহিদ, ধামগড় ইউনিয়নের মেম্বার আইয়ুব আলী সহ অন্যান্যরা। তবে সমঝোতার মাধ্যমে তাদেরকে এলাকায় ফিরিয়ে এনেছেন মাজহারুল ইসলাম হিরণ, হারুণ অর রশিদ লিটন ও জাহিদ খন্দকারেরা।

একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে মাসুম আহম্মেদ বেশ কিছুদিন ধামগড় এলাকা ছেড়ে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকায় তার নতুন বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরে মাজহারুল ইসলাম হিরণ তাকে এলাকায় ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এলাকায় ফেরার দিন মাসুম আহম্মেদ এর বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন মাজহারুল ইসলাম হিরণ। এখন পর্যন্ত মাসুম আহম্মেদের বাসায় দুই দফায় হিরণ দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে।

অন্যদিকে ১৭ জুলাই মদনপুরে আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার উপর দলবল নিয়ে হামলা করেছিলো নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের অহিদুজ্জামান অহিদ। সেদিন বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা মদনপুরে অহিদুজ্জামান অহিদের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিলো। এ সময় ছাত্র জনতা মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়ক অবরোধ করে বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে। ওই ঘটনায় বন্দর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাওলাদ হোসেনকে আসামি করা হয়েছিলো। ৫ আগস্টের পর আত্মগোপনে চলে গিয়ে ছিলো অহিদুজ্জামান অহিদ। কিন্তু বর্তমানে সে এলাকায় ফিরে এসে নিরাপদে ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা করছে। অভিযোগ রয়েছে হিরণের সাথে অহিদুজ্জামানের সমঝোতা হওয়ার পরই সে এলাকায় ফিরে এসেছে।।

এছাড়াও হিরণ, লিটন সহ উপজেলা বিএনপির নেতারা ওই এলাকায় সকল শিল্প প্রতিষ্ঠানে জোরপূর্বক নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন খোদ বিএনপি নেতারাই। এতে করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে দাবি করে হিরণ, লিটনদের বয়কট করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দলীয় শীর্ষ নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

২২ নভেম্বর সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে উপজেলা বিএনপির ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাজহারুল ইসলাম হিরণ, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ লিটন সহ বিতর্কিত নেতাদের বয়কট করে তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন নেতারা।

এমনকি দলীয় ভাবমূর্তি রক্ষায় উপজেলা সভাপতি হিরণ ও সাধারণ সম্পাদক লিটনকে বয়কটের ডাক দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপির একাংশ।

ওই বিক্ষোভ সমাবেশে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক তাওলাদ হোসেন বলেছেন বন্দরের উত্তরাঞ্চলে একজন নতুন দরবেশের আবির্ভাব হয়েছে। তিনি হাদিয়া নিয়ে মাথায় হাত রাখলে আওয়ামী লীগের লোক বিএনপি হয়ে যায়।

তিনি ছাত্রজনতার উপর হামলাকারী ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী মদনপুরের অহিদুল ইসলাম অহিদকে শেল্টার দিয়ে রেখেছেন, অহিদ এখনো অন্যে ইটভাটা দখলে রেখে ব্যবসা করে যাচ্ছে। বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম আহম্মেদ হাদিয়ে নিয়ে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।

তারা আরো বলেছেন, আমাদের সভাপতি হিরণ সাহেব, সেক্রেটারি লিটন সাহেব এবং জাহিদ খন্দকার এমন কোন ফ্যাক্টরি নাই যা দখল করে নাই। এমনকি মানুষের জায়গা পর্যন্ত দখল করে নিছে। হিরণ সাহেব হাদিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাদের মাথায় হাত দিলেই সে বিএনপি হয়ে যাচ্ছে। এ জন্যই কি দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা আন্দোলন সংগ্রামে সব জায়গায় ছিলাম। এখন যে অবস্থা কয়েকজন লোকের জন্য আমাদের বিএনপির ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তা আমরা হতে দিতে পারিনা। আওয়ামী লীগের উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুম চেয়ারম্যান সে আন্দোলনের সময় জাঙ্গাল থেকে দা নিয়ে মিছিল নিয়ে এসে ছাত্রদের উপর হামলা করেছে। এখন ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিচ্ছে। দ্বিতীয় হচ্ছে অহিদ, যে অহিদ নির্বাচনের সময় আমাদের নামে মামলা দিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে ছাত্রদের উপর হামলা করেছে। শুধু হামলাই নয় অনেকের বাড়িতে গিয়ে ভাঙচুর করেছে। সেই অহিদ এখনো অন্যের ব্রিক ফিল্ড দখলে নিয়ে দিব্যি ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আইয়ুব মেম্বার সহ অনেকে আছেন তারা এখন দিব্যি আরামে চলছে। আমাদের সভাপতি হিরণ সাহেব, লিটন সাহেব, জাহিদ খন্দকাররা টোটাল ফ্যাশন, ইউনাইটেড, জারিন ফ্যাশন সহ এমন কোন কারখানা নেই যেখানে লুটপাট করে নাই। চুনের কারখানার মালিক সাদেক সাহেবকে পারটেক্সের ৩২ শতাংশ জমি দখল করে দিয়েছেন। খুনি হাসিনার কাছে একটি মেশিন ছিলো একদিক দিয়ে বিএনপি ডুকাতো ওই দিক দিয়ে রাজাকার হয়ে বের হতো। আওয়ামী লীগ ডুকাতো মুক্তিযোদ্ধা হয়ে বের হতো। এখন হিরণ সাহেব তার থেকে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি বের করেছেন। এখন তিনি হাদিয়ার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের মাথায় হাত দিলেই তিনি বিএনপি হয়ে যাচ্ছে। এ সমস্ত লোকের দ্বারা দলের ক্ষতি হচ্ছে, ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এসব আমরা হতে দিতে পারিনা। আমাদের অভিভাবক নজরুল ইসলাম আজাদ ভাইয়ের প্রতি আহবান রইলো আপনি এসব বিষয় তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিবেন।

Islams Group
Islam's Group