News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

রাজনীতি হয়েছে কাজ হয়নি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | সময়ের নারায়ণগঞ্জ রিপোর্ট প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৪, ১০:১৬ পিএম রাজনীতি হয়েছে কাজ হয়নি

মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাসে একাত্তরের ২৯ নভেম্বর দিনটি ছিল নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য বেদনাবিধুর দিন। ওই দিন নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানার দুর্গম চরাঞ্চল বুড়িগঙ্গা নদী বেষ্টিত বক্তাবলীতে হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। স্বাধীনতা যুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একসাথে এত প্রাণের বিয়োগান্ত ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই। স্বজন হারানো ব্যাথা ও কষ্ট নিয়েও শ্রুদ্ধার সাথে প্রতিবছরই পালিত হয় এই দিবসটি। এটি নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য অত্যন্ত অর্থবহ একটি দিন। স্বাধীনতা যুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে একসাথে এত প্রাণের বিয়োগান্ত ঘটনা দ্বিতীয়টি আর নেই।

১৯৯২ সালের ডিসেম্বর মাসে বক্তাবলীর কানাইনগর ছোবহানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে শহীদদের স্মরণে শোকসভায় শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন তার দল ক্ষমতায় এলে শহীদদের যথাযথ মর্যাদা ও তাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের।

১৯৯৬ সালে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে একই মাঠে শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানও শহীদদের স্মরণে শ্বেতপাথরে স্মৃতিস্তম্ভ করার ঘোষণা দেন। তারপর আওয়ামীলীগের প্রয়াত, জীবিত প্রথম সাঁরির এমন কোন নেতা নেই যারা বক্তাবলীতে আসেননি। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান লক্ষ্মীনগর স্কুল মাঠে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।

২০০১ সালে নির্বাচনে মুক্তিযোদ্ধা মো গিয়াসউদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর কানাইনগরে স্থাপন করেন স্মৃতিস্তম্ভ। ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বেসরকারি চ্যানেলগুলো ফলাও করে ২৯ নভেম্বরের ঘটনা প্রচার করতে থাকলে সাংস্কৃতিক সংগঠন বধ্যভ‚মি ’৭১ সামাজিক সংগঠন ও বক্তাবলী ফাউন্ডেশন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সারাহ্ বেগম কবরীর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করলে তারা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করতে বলে। তারই ফলশ্রুতিতে ২০১২ সালের ২৯ নভেম্বর গণপ‚র্ত প্রতিমন্ত্রী এবং সারাহ্ বেগম কবরীকে নিয়ে লক্ষ্মীনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে লক্ষ্মীনগরে অবস্থিত ’৭১ বধ্যভ‚মি সরেজমিনে গিয়ে কবর জিয়ারত করে নারায়ণগঞ্জ গণপ‚র্ত অফিসের প্রধান প্রকৌশলীকে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বাজেট তৈরি করে তার থেকে ৭৫ লক্ষ টাকায় বধ্যভ‚মিটি সংরক্ষণ-রক্ষণাবেক্ষনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

সবশেষ ২০১৪ সালের ২৯ নভেম্বর তখনকার সময়ে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ১৯৭১ সালে নারায়ণগঞ্জের বক্তাবলীতে পাক হানাদার বাহিনী নির্মতায় হত্যার শিকার ১৩৯ পরিবারকে রাষ্ট্রীয় স্বীকিৃতির ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সেদিন অনুষ্ঠানে তিনি পরিবারগুলোর সদস্যদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে বলেছিলেন, ‘‘স্বাধীনতার ৪৫ বছরে পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি এটা পরিতাপের বিষয়। তাই পরিবারগুলোর তালিকা করে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো: আলীর কাছে জমা দেওয়ার আহবান করছি। পরে সেই তালিকা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে শহীদের পরিবারগুলোকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির ব্যবস্থা করা হবে।’’

তিনি শোক সভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে আরো বলেন, নদী বেষ্টিত এ বক্তাবলীকে ৯৫ সালে সংসদ সদস্য থাকা অবস্থায় উপ-শহর ঘোষণা করেছিলাম। এবার শহরে রূপান্তিত করব। শুধু আপনারা ৪টি বিষয়ে পাশে দাঁড়াবেন তা হলো- মাদক নির্ম‚ল, ইভটিজিং, চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ। ইতমধ্যে নদী পারপারের জন্য ফেরী আনা হয়েছে। আরো উন্নয়ন হবে।

জানা গেছে, একদল মুক্তিযোদ্ধা মুজিব বাহিনীর অংশ হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষ করে বক্তাবলী ও এর আশপাশ গ্রামে অবস্থান নেয়। ওই সময়ে বক্তাবলী গ্রামে এক থেকে দেড়শ মুক্তিযোদ্ধা ছিল। নদী বেষ্টিত দুর্গম চরাঞ্চল হওয়ায় এলাকাটিকে নিরাপদ মনে করতো মুক্তিযোদ্ধারা। বক্তাবলীতে অবস্থান করেই মূলত মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অপারেশন করার পরিকল্পনা করতো। ঘটনার দিন তথা ২৯ নভেম্বর ছিল প্রচন্ড শীত। সকাল থেকেই ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন ছিল পুরো এলাকা। ভোরের দিকে হঠাৎ করেই পাক বাহিনী গ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ঁতে থাকে। অপ্রস্তুত মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা জবাব দেয়। উভয় পক্ষের মধ্যে সম্মুখ যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ব্যাটালিয়ন বক্তাবলীতে এসে এখানকার মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিলে তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। পরে তারা একত্রে পাক বাহিনীর সঙ্গে প্রায় চার ঘন্টা একটানা যুদ্ধ চালায়। এসময় মুক্তিযোদ্ধারা মোক্তারকান্দি কবরস্থানের সামনে কয়েকজন রাজাকারকে ধরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের উপুর্যপরি আক্রমনের মুখে পাক হানাদাররা পিছু হঠতে শুরু করে। এসময় তারা রাজাকার, আল বদর, শামস বাহিনীর পরামর্শে তারা ১৩৯ জন নিরস্ত্র গ্রামবাসীকে ধরে এনে লাইন ধরিয়ে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করে। এতে নিহত হয় শাহিদ, ফারুক, অহিদ, মনির, শাহ আলম, রহমতউল­াহ, শামসুল, আলম, সালামত, খন্দকার, সুফিয়া, আম্বিয়া, খোদেজা সহ ১৩৯ জন। পিছু হটার সময় হানাদার বাহিনী পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরী পার সংলগ্ন বক্তাবলী পরগনার, রাজাপুর ডিগ্রীর চর, মুক্তাকান্দি, গঙ্গানগর, রাম নগর, গোপাল নগর, রাধানগর সহ ২২ টি গ্রাম।

ফতুল্লা গঙ্গানগর এলাকার বাসিন্দা মো. আলী হোসেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি তার বড় ভাইকে হারিয়েছেন। তিনি জানান, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৭২ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ পরিবার হিসেবে আমাদের একটি চিঠির মাধ্যমে সমবেদনা জ্ঞাপন করে প্রত্যেক শহীদের জন্য দুই হাজার টাকা ও আহতদের জন্য পাঁচশ টাকা অনুদান প্রদান করেছিলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান নিহত হবার পর আর কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। তাই শহীদ পরিবার হিসেবেও আর আমরা স্বীকৃতি পাইনি।

Islams Group
Islam's Group