আওয়ামী লীগের টানা ১৬ বছরের শাসনামলে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় একক আধিপত্য বিস্তার করে আসেন সাবেক এমপি নজরুল ইসলাম বাবু। তার ভয়ে তটস্থ থাকতো বিরোধী দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে স্বয়ং নিজ দলের নেতাকর্মীরা। তবে আওয়ামী লীগের পতনে তিনি আত্মগোপনে চলে গেলে আড়াইহাজারে তার জায়গায় অবতীর্ণ হওয়ার চেষ্টা করছেন বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। গত ৫ই আগস্টের পর থেকে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ শোনা যায়। যা নিয়ে সমালোচনার মধ্যে পড়তে হয় তাকে। এদিকে তার জনপ্রিয়তার হ্রাস পাওয়ার বিপরীতে গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে বিএনপির আরেক নেতা জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমনের। তার বিরুদ্ধে আজাদের মতো এমন অভিযোগ পাওয়া যায় নি। বরং তিনি আড়াইহাজারের মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর ফলে একদিকে তার জনপ্রিয়তা বাড়ার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনে এই আসনে নিজের প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিচ্ছেন।
এর আগে গত ৫ই আগস্টের পর আড়াইহাজারে ফকির ফ্যাশন লিমিটেডের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠে নজরুল ইসলাম আজাদের বিরুদ্ধে। চাঁদা না দেওয়ায় বিভিন্ন হত্যা মামলায় তাদের আসামি করার এবং তার অনুসারীদের দিয়ে ফকির গ্রুপের কর্ণধারদের হুমকি প্রদান করা হয়। পাশাপাশি আড়াইহাজারে শফিকুল ইসলাম শফিক ও মো. বাবুল নামে দুইজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ফকির গ্রুপের তিন কর্ণধারকে আসামি করে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় তাদের নাম দেওয়ার পেছনে ইন্ধনদাতা হিসেবে নজরূল ইসলাম আজাদ কাজ করছেন বলে দাবি করেন ফকির ফ্যাশনের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ। গত ২৩ আগস্ট নজরুল ইসলাম আজাদের চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবু মোহাম্মদ সরওয়ার ফরিদের কাছে ফকির ফ্যাশন লিমিটেডের হেড অফ এডমিন লেফট্যানেন্ট কর্নেল (অবঃ) হাসানুজ্জামান চৌধুরী একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে কিছু অসাধু ব্যক্তি নারায়ণগঞ্জকে নিজের করায়ত্ত করার চেষ্টা করছে। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার এলাকায় যথেচ্ছভাবে চাঁদাবাজি, বাজার দখল, লুটতরাজ শুরু করেছেন। তিনি এবং তার দলের কর্মীরা সরকার পতনের দিন গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা থেকেই তার প্রত্যক্ষ আদেশে এলাকায় ঢালাওভাবে বাড়িঘর ভাঙচুর ও আগুন লাগিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেন। এলাকার বিভিন্ন কারখানা মালিকদেরকে তিনি চাঁদার জন্য ক্রমাগত হয়রানি করছেন। গুদাম দখল, উৎপাদন উপজাত বর্জ্য ক্রয়ের ব্যবসা দখল নিয়ে পরিস্থিতি দিন দিন জটিল হয়ে যাচ্ছে। এমনকি চাঁদা না দিলে কারখানা এবং গুদামে তালা ঝুলিয়ে দেয়া, লুটতরাজ ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়া সহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করছেন। এতে করে নারায়নগঞ্জের মতো একটি উৎপাদন ও বাণিজ্য এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অচল হয়ে পড়েছে। তার এই কাজে সহযোগিতা করছে তার ছোট ভাই রাকিব, কর্মী রাজিব ও অন্যান্যরা। আমি একান্তভাবে বিশ্বাস করি আপনার সামান্য প্রচেষ্টাতেই আজাদের মতো অশুভ ব্যক্তিকে নিরস্ত্র করা তথা নারায়ণগঞ্জ এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনে আবার উৎপাদনমুখর করা সম্ভব।
এদিকে আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে আড়াইহাজারে মাহমুদুর রহমান সুমনের অনুসারীদের সঙ্গে একাধিকবার সংঘর্ষে জড়িয়েছেন নজরুল ইসলাম আজাদ। আগামীতেও এমন বিশৃঙ্খলার ঘটার শঙ্কা রয়েছে। আজাদের অনুসারীরা দলের রাজনীতি বাদ দিয়ে ভাইয়ের রাজনীতিতে বেশি মনোনিবেশ করেন জানা যায়, ১৯৯১ সালে সুমনের প্রয়াত বাবা খসরু উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে তাকে বিএনপির নির্বাচনের কথা বলেন দলের হাইকমান্ড। কিন্তু খসরু তখন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ ছাড়েনি। ছোট ভাই আতাউর রহমান আঙ্গুরকে বিএনপির মনোনয়ন এনে দেন। যদিও তিনি তখন বিএনপির কোন পদে ছিলেন না। এ নিয়েও দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় খসরুর। খালেদা জিয়াকে আশ্বস্ত করেন খসরু যে তিনি আঙ্গুরের জয়ের দায়িত্ব নিবেন। শুরু হয় খসরুর চ্যালেঞ্জের যাত্রা। ঘরে ঘরে গিয়ে খসরু বলতেন, ‘আপনারা আমাকে যেমন ভালোবাসেন তেমনি ভালোবাসবেন আঙ্গুরকে। তাকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন।’ খসরুর কথা রাখেন আড়াইহাজারবাসী। ১৯৯১ এবং ২০০১ সালে আঙ্গুর সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ওয়ান ইলাভেনের পরে খসরুর সম্মান নষ্ট করেন আঙ্গুর। ভিড় করেন সংস্কারপন্থিদের দলে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তখন দলের মনোনয়ন পান খসরু। দলীয় বিরোধের কারণে ৮৭ হাজার ভোট পেয়েও আসনটি হাতছাড়া হয় বিএনপির। আসনটি চলে যায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর হাতে। বিএনপির প্রতিষ্ঠা থেকেই তিনি এ দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে জাগো দল থেকে যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকসহ একাধিক পদে। দেশের প্রথম গার্মেন্ট কারখানা স্থাপন করেন খসরু। সেটাও ৮০ এর দশকে। পরে আড়াইহাজারে স্পিনিং মিল। তবে ওই সময়ে উপার্জনের ক্ষেত্রে খসরু ছিলেন অনেক উপরে। কিন্তু খসরুর সেই জনপ্রিয়তা হারাতে বসেছেন তার ছেলে মাহমুদুর রহমান সুমন। বিপরীতে আড়াইহাজারে আবারও নিজের আধিপত্য বিস্তারে এগিয়ে যাচ্ছেন আতাউর রহমান খান আঙ্গুর।
আপনার মতামত লিখুন :