নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক হওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর রাজনীতি ফিরেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। বর্তমানে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ থাকা অবস্থায় এবং পতনের পর দুই অবস্থাতেই তিনি দল পরিচালনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর দেশের দূরাবস্থার মধ্যে তিনি নারায়ণগঞ্জে সাহসিকতার পরিচয় রেখেছেন। নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি দূর করতে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন তিনি। সেই লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানা দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য প্রদান করছেন।
এবার আগামী ৩০ নভেম্বর সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হবেন তিনি। এ নিয়ে ফতুল্লা থানার বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে কাজ করছে আগ্রহ। বিশেষ করে ফতুল্লা ইউনিয়ন বিএনপির জনসভায় এখন সবার নজর। এদিনের জনসভাকে জনসমুদ্রে পরিণত করতে নেতাকর্মীরা সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। তাদের ভাষ্য, এদিনের বিএনপির জনসমাবেশ স্মরণকালের সবচেয়ে বৃহৎ জনসভায় পরিণত হবে।
এইসব জনসভার মাধ্যমে স্ব স্ব এলাকার মানুষের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে নিজের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। যা নিয়ে দলের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে প্রশংসিত হচ্ছেন গিয়াস উদ্দিন। সেই সঙ্গে গিয়াসের বার্তা শুনতে শুনতে নেতাকর্মীরা এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছুটছেন। এর ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের তুলনায় প্রতিনিয়ত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হচ্ছেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দূর্বলতার সুযোগে আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা অন্তকোন্দলে জড়ান। পাশাপাশি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এতে করে বিএনপির ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হতে শুরু করলে গিয়াস শক্ত হাতে দমন করেন। পাশাপাশি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রশাসনকে সব ধরণের সহযোগিতা করেন।
গত ১৯ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জের ১০নং ওয়ার্ডের গোদনাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গিয়াস উদ্দিন। এর আগে গত ১৮ অক্টোবর ফতুল্লার বক্তাবলীতে এবং গত ৭ অক্টোবর সিদ্ধিরগঞ্জের ৪নং ওয়ার্ডের বালুর মাঠে জনসভা করেন তিনি। তারও আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সিদ্ধিরগঞ্জের ৮নং ওয়ার্ডে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর ১নং ওয়ার্ডে, গত ২১ সেপ্টেম্বর ৩নং ওয়ার্ডে, গত ২০ সেপ্টেম্বর এনায়েতনগর ইউনিয়নে, ১২ সেপ্টেম্বর ৯নং ওয়ার্ডে পাশাপাশি আরও কয়েকটি জনসভায় অংশ নেন গিয়াস। এইসব জনসভায় উপস্থিত হয়ে মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, যারা সন্ত্রাস, চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবে, যারা মানুষের শান্তি নষ্ট করবে তাদের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, আগামীর দেশনায়ক তারেক রহমান ইতোমধ্যে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে দিয়ে বলেছেন, বিএনপি হনে ভালো মানুষের দল। এই দলে সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের কোনো স্থান নেই। বিএনপি করতে হলে মানুষের সঙ্গে সংযোগ রাখতে হবে। মানুষ যাকে ভালো না বাসবে, তার স্থান বিএনপিতে হবে না। সুতরাং সাবধান হয়ে যান, অপকর্ম যারা করেন বা করার চেষ্টা করছেন সেদিক থেকে ফিরে এসে মানুষের জন্য কাজ করুন। মানুষকে ভালোবাসুন। মানুষের ভালেবাসা অর্জন করতে পারলে তবেই আপনি বিএনপি নেতা হবেন। অন্যথায় আপনি এই দলের কেউ নন। ভালো মানুষকে জায়গা করে না দিলে দেশ কখনই ভালো হবে না। আপনারা যা আমার কর্মী সমর্থক আছেন তারা যদি কেউ সমাজের ভালো মানুষকে হেয় করেন, অসম্মান করেন তাহলে সে যত বড় নেতাই হোন না কেন আমার সঙ্গে থাকতে পারবেন না। সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি কেউ করলে আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিবেন, সে যত বড় নেতাই হোক আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে জেলা বিএনপির কমিটি হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী শামীম ওসমানের মাথাব্যাথা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় গিয়াস উদ্দিন। কারণ ২০০১ সালে তাকে হারিয়েই মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এক কর্মসূচী সফলভাবে পালন করেন গিয়াসের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপি। গিয়াসের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি আসার পর থেকেই দলটির রূপ বদলাতে শুরু হয়। কারণ জেলা বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচীতে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন অচল হয়ে থাকা কমিটিকে সচল করছেন। পাশাপাশি বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচী সফলভাবে পালন করে আসে গিয়াসের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপি।
আপনার মতামত লিখুন :