News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নেতাদের উস্কানিতে যুবদলে বিভক্তি


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ১৯, ২০২৪, ০৭:৫০ পিএম নেতাদের উস্কানিতে যুবদলে বিভক্তি

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটি রয়েছে। এ কমিটির ব্যানারে নানা কর্মসূচীও রয়েছে। কিন্তু কমিটিতে নাই এমন নেতারাও যুবদলের ব্যানার ব্যবহার করে দলের ভেতরে বিভক্তির চেষ্টা করছেন অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে যুবদলের ভেতরে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ। তারা বলছেন কমিটি থাকার পরেও একই ব্যানার ব্যবহার করাটা দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ।

অনেকদিন ধরেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। মহানগর যুবদলের কমিটির বাইরেও আরেকটি ব্যানারে যুবদলের পদবঞ্চিত অংশের নেতাকর্মীরা নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে আসছেন। আর এতে মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিয়ে আসছেন। অথচ মহানগর যুবদলের কমিটি ঘোষণার সময়ে এই দুইজনেই পদবিঞ্চত নেতাকর্মীদের হাতে অপমান অপদস্থ হয়েছিলেন। তাদের দ্বারা ব্যাপক মারধরেরও শিকার হয়েছিলেন। সেই সাথে থানায় মামলাও দায়ের করেছিলেন। এবার তারাই মহানগর যুবদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের সমর্থন দিয়ে বিভিন্ন সভা সমাবেশে উপস্থিত হচ্ছেন। সেই সাথে মহানগর যুবদলের ব্যানারে তাদের সকল কর্মসূচির বৈধতা দিচ্ছেন।

সবশেষ ঐতিহাসিক ৭নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও যুব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত রোববার বিকেলে শহরের ডিআইটি চত্বরে মহানগর যুবদলের উদ্যোগে এ আলোচনা সভা ও যুব সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেই সাথে এই সমাবেশটি বেশ সাড়া পড়ে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে।

মহানগর ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কেএম মাজহারুল ইসলাম জোসেফের সভাপতিত্বে যুব সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান এবং প্রধান বক্তা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু উপস্থিত হয়েছিলেন। একই সাথে মহানগর যুবদলের চলমান কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিতেও সাখাওয়াত হোসেন খান ও আবু আল ইউসুফ খান টিপু উপস্থিত হয়েছিলেন।

এর আগে প্রতিবারের মতো এবারও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কেএম মাজহারুল ইসলাম জোসেফের উদ্যোগে কয়েকদিন ব্যাপী ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন। তারই অংশ হিসেবে কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে গত ৩১ মে শহরের টানবাজার এলাকায় নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের ব্যানারে আলোচনা সভা দোয়া ও খাবার বিতরণের আয়োজন করা হয়।

আর এই কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির বর্তমান ঢাকা বিভাগীয় কমটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। সেই সাথে প্রধান বক্তা হিসেবে মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও বিশেষ বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসূফ খান টিপু।

এদিনের এই কর্মসূচিকে ঘিরে কে এম মাজহারুল ইসলাম জোসেফের অনুসারীরা ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। কর্মসূচিতে ঘিরে জোসেফ সহ তার অনুসারীরা আগে থেকেই শহরের খানপুর এলাকায় গিয়ে নজরুল ইসলাম আজাদের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। সেই সাথে আজাদ আসার সাথ সাথেই তাকে সম্মান জানিয়ে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে খানপুর থেকে টানবাজার পর্যন্ত নিয়ে যান। যা অতীতে কখনও আজাদের বেলায় হয়ে উঠেনি।

নজরুল ইসলাম আজাদ কে এম মাজহারুল ইসলাম জোসেফের এই আতিথেয়তা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান। সেই সাথে তার প্রশংসা করেন। বক্তব্য রাখতে গিয়ে নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, আন্দোলন সংগ্রামে মাজহারুল ইসলাম জোসেফ যথেষ্ট কাজ করেছে। সবাই বলেছে তাকে যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করার জন্য। আমিও তার জন্য অনুরোধ করবো যেন জোসেফকে যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করা হয়।

একই ভাবে মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, আমরা জোসেফের সাথে বসবো। তাকে নিয়ে আমরা আন্দোলন সংগ্রাম করবো। জোসেফের সাথে আলোচনা করে তাকে যোগ্যতা অনুযায়ী পদায়ন করা হবে।

মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসূফ খান টিপু বলেছিলেন, মাজহারুল ইসলাম জোসেফকে আমি তৈরি করেছি। সে আমার মাধ্যমে রাজনীতিতে এসেছে। তাকে আমরা যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন করবো।

কিন্তু নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সমাবেশে হামলা চালিয়েছিলেন মহানগর যুবদলের এই পদবঞ্চিত নেতা কর্মীরাই। ২০২৩ সালের ২৩ আগস্ট বিকেলে শহরের প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটেছিলো। হামলায় সাংবাদিক সহ ১৫ জন আহত হয়েছিলেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে টিয়ারশেল ছোড়ে পুলিশ।

জানা যায়, এদিন আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ করে মহানগর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন। বেলা ৪টার দিকে হঠাৎ করেই নগর যুবদলের পদবঞ্চিত নেতারা লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায় সমাবেশে। বেধড়ক মারধর করা হয় নেতা কর্মীদের। এ সময় একটি মোটরসাইকেল, সমাবেশের মাইক ও রিকশা ভাঙচুর করা হয়। কয়েকটি হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।

হামলার পরপর সমাবেশে উপস্থিত নেতা কর্মীরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে হামলাকারীদের ধাওয়া দেয় এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এ সময় তারা প্রেসক্লাবের গলি দিয়ে ভাষা সৈনিক সড়ক ধরে পালিয়ে যায়। পরে পুনরায় প্রেসক্লাব এলাকায় জড়ো হয় নগর বিএনপির নেতা কর্মীরা। এসময় মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু আহত হয়েছিলেন।

দলীয় সূত্র বলছে, ২০২৩ সালের ২৯ আগস্ট রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের কমিটির অনুমোদন দেন। আর এই কমিটিতে আহবায়ক পদে মনিরুল ইসলাম সজল, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সাগর প্রধান ও সদস্য সচিব পদে আছেন শাহেদ আহমেদ।

আর মহানগর যুবদলের এই কমিটি ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির প্রত্যেক কর্মসূচিতে মনিরুল আলম সজল ও শাহেদ আহমেদের নেতৃত্বে মহানগর যুবদল প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে সরব ভূমিকা পালন করে আসছিলেন। তাদের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে মহানগর বিএনপির কর্মসূচির পূর্ণতা বয়ে আসে। সেই সাথে কেন্দ্রের কর্মসূচিতেও তারা সরব ভূমিকা রেখে আসছিলেন। নারায়ণগঞ্জের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকার প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে মহানগগর যুবদলের নেতাকর্মীরা বিশাল শোডাউন করে আসছিলেন।

তাদেরকে কমিটিতে বহাল রেখেই মহাগর যুবদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের সভা সমাবেশেও উপস্থিত হচ্ছেন। যা মহানগর যুবদলে বিভক্তিকে উস্কে দেয়ার শামিল হচ্ছে। শীর্ষ পর্যায়ের নেতা হয়েও মহানগর যুবদলের বিভক্তিকে তারা জিইয়ে রাখছেন।

Islams Group
Islam's Group