‘মুক্তি পরিষদের নামে শহরে চাঁদাবাজী হচ্ছে’ নারায়ণগঞ্জের সাংষ্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির এমন অভিযোগের পর সবখানে চলছে আলোচনা এবং সমালোচনা। সকলের প্রশ্ন এই মুক্তি পরিষদ আসলে কার? কারণ রফিউর রাব্বি অভিযোগ করার সময় স্পষ্টভাবে কারো নাম উল্লেখ করেনি। গত ১৬ নভেম্বর প্রেসক্লাবে বাস ভাড়া নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন। বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি ফুটপাতের মধ্যে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে কোন কোন নেতা পয়সা খাচ্ছে সেই রিপোর্ট আমাদের কাছে রয়েছে। দুই নং রেলগেট এবং টার্মিনালের মধ্যে দোকানগুলো থেকে ৫০ টাকা এবং ভ্যানগুলো থেকে ১০০ টাকা করে নিচ্ছে। ওমুক মুক্তি পরিষদ ব্যানারে বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা তুলছে’।
নগরবাসী বলছে, শহরে মুক্তি পরিষদ একটাই। সেটা হলো জাকির খান মুক্তি পরিষদ। জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কারাবন্দী জাকির খানের অনুসারীরা এই মুক্তি পরিষদ গঠন করেছে। জাকির খান হত্যাসহ বেশ কয়েকটি মামলার আসামী হয়ে দীর্ঘদিন বিদেশে পলাতক ছিলেন। গত বছর দেশে এসে র্যাবের হাতে আটক হন তিনি। এরপর থেকে তার অনুসারীরা জাকির খান মুক্তি পরিষদ গঠন করে সেই ব্যানারে বিভিন্ন সভা সমাবেশ এবং মিছিল মিটিং পরিচালনা করছেন।
জানা গেছে, নব্বইয়ের দশকে নারায়ণগঞ্জ শহরে জাকির খানের ব্যাপক আধিপত্য ছিলো। তবে ওই সময় ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা এবং আরো বেশ কয়েকটি মামলার আসামী হয়ে দেশ ছাড়েন জাকির। এতে তার জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবে ভাটা পরে। তবে গত ৫ আগষ্ট শেখ হাসিনা পালানোর পর থেকে জেলে বসেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেন জাকির খান। তার অনুসারীরা দখল করেন শহরের বাজার, ঘাট ও পরিবহন সেক্টর। জাকির খানের ভাই জিকু খান নিজেও ফতুল্লার বিসিকে দুটি গার্মেন্ট ঝুটের জন্য দখল করেছেন।
জাকির খান অসুস্থ্যতার জন্য দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার পিজি হাসপাতালে প্রিজন সেলে রয়েছে। সেখানে বসেই নারায়ণগঞ্জ শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছেন সাবেক এই ছাত্র নেতা। সম্প্রতি প্রিজন সেলে বসে জাকির খানে ভিডিও কলে কথা বলার একটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হলে আলোচনায় আসেন তিনি। সমালোচনার মুখে পড়ে কারা হাসপাতাল ও কারা কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, এখন হাসপাতাল ও কারাগারে জাকির খানতে দেখতে প্রতিদিন তার অনুসারীরা ভিড় করছেন। ৫ তারিখের আগে তারা শুধু দেখা করতে যেতেন। তবে সরকার পরিবর্তনের পর বিচার আচার, বিরোধপূর্ণ জমির সমাধান, বিভিন্ন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ নেয়াসহ নানান আরজি নিয়ে জাকিরের কাছে যাচ্ছেন লোকজন।
এদিকে ১৮ নভেম্বর জাকির খানকে নারায়ণগঞ্জ আদালতে হাজিরার জন্য আনা হলে সেখানে শতশত নেতাকর্মীর ভীড় দেখা গেছে। সবাই জাকির খান মুক্তি পরিষদের ব্যানারে আদালত প্রাঙ্গণে তার মুক্তি চেয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :