রূপগঞ্জের আলোচিত সমালোচিত আখ্যা পাওয়া ও ক্যাসিনো কান্ডে গ্রেপ্তার হওয়া সেলিম প্রধান সবসময় আবোল-তাবোল বকে থাকেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করেছেন। সেই সাথে নিজের পক্ষে সমর্থন নেয়ার চেষ্টা করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এবার বিএনপির সমর্থন নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
বিএনপির জনপ্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে আবোল-তাবোল বকে নিজেকে আলোচনায় আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন এই স্বঘোষিত ডন সেলিম প্রধান। যার মাধ্যমে সহজেই বিএনপি কেন্দ্রীয় নেতাদের নজরে আসা যায়। বিভিন্নভাবে নিজেকে বিএনপি ঘেঁষা আবির্ভাব করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। যা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। যে কোনো সময় ক্ষোভের বহি:প্রকাশও ঘটতে পারে।
জানা যায়, রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জে নেমেছিলেন সেলিম প্রধান। সেই সাথে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রূপগঞ্জে বিভিন্ন জায়গায় নানা সভা সমাবেশ করে যান। কয়েকদিন পরপরই নানা ইস্যুতে নিজেকে জানান দেয়ার চেষ্টা করে যান। গণমাধ্যমে আবোল-তাবোল বকে নিজেকে আলোচনায় আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেলিম প্রধানের মতো আবোল-তাবোল বকা নেতার মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
কিন্তু প্রার্থিতা ফিরে পেতে সেলিম প্রধানের করা এক রিটের শুনানি নিয়ে ৩০ এপ্রিল রুল দিয়ে হাইকোর্ট মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন। একই সঙ্গে সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে ও তাকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে নির্দেশ দেন। ফলে সেলিম প্রধানের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথ খুলেছিল।
পরবর্তীতে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হাবিবুর রহমান আপিল বিভাগে আবেদন করেন, যা ২ মে চেম্বার জজ আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত সেলিম প্রধানের প্রার্থীতা বিষয়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন।
সেই সাথে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে ও প্রতীক বরাদ্দ দিতে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। যার মধ্য দিয়ে ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ হারান।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ হারানোর পর অন্যজনকে সমর্থন দিয়ে তার পক্ষে প্রচারণা চালিয়ে যান স্ব-ঘোষিত ডন সেলিম প্রধান। চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু হোসেন ভুঁইয়া রানুকে সমর্থন দিয়ে রূপগঞ্জ এলাকায় তিনি প্রচারণা চালিয়ে যান। সেলিম প্রধান চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু হোসেন ভুঁইয়া রানু সহ নেতাকর্মীদের বহর নিয়ে শোডাউনও করেছেন। সেই সাথে রানুর মার্কাকেই তার মার্কা হিসেবে অবহিত করে জনসাধারণের কাছে ভোট চেয়ে প্রচারণা চালান।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেননি। সেলিম প্রধান যাকে সমর্থন করেন তিনি পরাজিত হন। এই পরাজিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পড়ে যান ডন সেলিম।
এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের পর তিনি এবার বিএনপি হওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছেন সেলিম প্রধান। সেই সাথে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে আবোল-তাবোল বকছেন।
এর আগে ক্যাসিনো বিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাইল্যান্ডগামী বিমান থেকে নামিয়ে এনে সেলিম প্রধানকে গ্রেপ্তার করেছিলো র্যাব। এরপর তাঁর বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করা হয়। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছিল, সেলিম প্রধান বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো বা অনলাইন জুয়ার মূল হোতা। তিনি প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।
সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইনে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। বর্তমানে এসকল মামলা বিচারাধীন রয়েছে সেই সাথে সেলিম প্রধান জামিনে রয়েছেন। আর দুদকের একটি মামলায় ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল রায় দিয়েছেন আদালত। তাতে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের দুই ধারায় সেলিম প্রধানকে চার বছর করে কারাদÐ দিয়েছিলেন আদালত।
আপনার মতামত লিখুন :