পবিত্র ওমরা হজ্ব করতে বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। আগামী ২২ নভেম্বর তিনি দেশে ফিরতে পারেন বলে শোনা গেছে। এদিকে গিয়াসের অনুপস্থিতিতে জেলা বিএনপি অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি যখন রাজপথ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তখন জেলা বিএনপিকে নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা গেছে। নেতাকর্মীদের মতে, গিয়াস উদ্দিন বর্তমানে দেশে না থাকায় জেলা বিএনপিকে এমন ভূমিকায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তা না হলে জেলা বিএনপি আরও বড় পরিসরে একের পর এক কর্মসূচি পালন করতো। বিশেষ করে, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের নির্বাচনী অঞ্চল সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা জেলা বিএনপির কর্মসূচিতে সরগরম থাকতো। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা, গিয়াস উদ্দিন দেশে ফিরলে জেলা বিএনপি আবারও পূর্বের ন্যায় নিজেদের জানান দিবেন। এর আগে ঈদুল আযহার আগে দুদকের মামলায় গিয়াস গ্রেফতার হলে জেলা বিএনপিতে একই শূণ্যতা লক্ষ্য করা যায়। নেতাকর্মীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব নষ্ট হয়। পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচি পালন করার প্রতিও দেখা যায় অনীহা। ফলস্বরূপ ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আগের দিন থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থানে স্থানে মিলাদ ও মাহফিল আয়োজন করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে দেখা গেলেও এবার তেমনটা চোখের পড়ে নি। বরং এবার বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে। তবে নেতাকর্মীদের একটি অংশের দাবি, এবার জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন না থাকার কারণে জিয়ার মৃত্যুবার্ষিকী অনেকটাই প্রাণহীন হয়ে গেছে। গতবার গিয়াসের নেতৃত্বে পুরো জেলাজুড়ে হাজারো স্থানে মিলাদ মাহফিল আয়োজন করা হয়। অধিকাংশ স্পটেই গিয়াস বিশাল বহর নিয়ে উপস্থিত হোন। তবে এবার তিনি না থাকায় সবকিছুই যেনো এলোমেলো হয়ে গেছে। গিয়াস উদ্দিন গতবারের ন্যায় এবারও রাজপথে থাকলে এবারের চিত্র অন্যরকম হতো না। বরং আরও বড় আয়োজন করা হতো। এর আগে জেলা বিএনপির আহবায়ক হওয়ার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন পর রাজনীতিতে সক্রিয় হোন মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। তার নেতৃত্বে জেলা বিএনপি আসার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে জেলা বিএনপির চিত্র। জেলা বিএনপির প্রতিটি অঙ্গসংগঠনকে ঢেলে সাজাতে থাকেন তিনি। কিন্তু সাহসী নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাকে পথে পথে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় দায়ের হয় অসংখ্য মামলা। অনেকটাই কোণঠাসা করে দেওয়া হয় তাকে। তবে এইসব মামলায় জামিন নিয়ে অচিরেই তিনি জেলা বিএনপিতে সক্রিয় হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুদকের মামলায় তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত। বর্তমানে জেলা বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দিয়ে দল পরিচালনা হয়ে আসছিল। কিন্তু গিয়াস উদ্দিন কারাগারে থাকায় দল পরিচালনায় একা হয়ে যান সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন। এর ফলে একা দল পরিচালনা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাকে। সেই সঙ্গে জেলা বিএনপির অঙ্গ সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গিয়াসকে মেনে কাজ করতো। তিনি না থাকায় তার অভাব ভালোই অনুভব করেছিলেন নেতাকর্মীরা।
এর আগে গত ৫ আগস্টের পর সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লা মাঠঘাট চলে বেড়ান গিয়াস উদ্দিন। নিজ নির্বাচনী এলাকা থেকে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি দূর করতে কঠোর ভূমিকায় অবতীর্ণ হোন তিনি। সেই লক্ষ্যে প্রতিনিয়ত তিনি সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিভিন্ন এলাকায় আয়োজিত বিএনপির কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে নানা দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে থাকনে। এর মাধ্যমে স্ব স্ব এলাকার মানুষের দ্বারপ্রান্তে গিয়ে নিজের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। যা নিয়ে দলের হাইকমান্ড থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে প্রশংসিত হোন গিয়াস উদ্দিন। সেই সঙ্গে গিয়াসের বার্তা শুনতে শুনতে নেতাকর্মীরা এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় ছুটেছিলেন। এর ফলে বিএনপির নেতাকর্মীরা আগের তুলনায় প্রতিনিয়ত সুসংগঠিত ও শক্তিশালী হচ্ছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুর্বলতার সুযোগে আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা অন্তকোন্দলে জড়ান। পাশাপাশি সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। এতে করে বিএনপির ইমেজ মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হতে শুরু করলে গিয়াস শক্ত হাতে দমন করেন। পাশাপাশি জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে প্রশাসনকে সব ধরণের সহযোগিতা করেন।
এদিকে জেলা বিএনপির কমিটি হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগের সাবেক প্রভাবশালী শামীম ওসমানের মাথাব্যথা হওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায় গিয়াস উদ্দিন। কারণ ২০০১ সালে তাকে হারিয়েই মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন সংসদ সদস্য হয়েছিলেন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে একের পর এক কর্মসূচি সফলভাবে পালন করেন গিয়াসের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপি। গিয়াসের নেতৃত্বে জেলা বিএনপি আসার পর থেকেই দলটির রূপ বদলাতে শুরু হয়। কারণ জেলা বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে মানুষের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদিকে গিয়াস উদ্দিন জেলা বিএনপির দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই দীর্ঘদিন অচল হয়ে থাকা কমিটিকে সচল করছেন। পাশাপাশি বিএনপির প্রত্যেকটি কর্মসূচি সফলভাবে পালন করে আসে গিয়াসের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপি।
আপনার মতামত লিখুন :