দীর্ঘকাল ধরেই নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সমান আধিপত্য রয়েছে। তবে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সোনারগাঁয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। এর ফলে উপজেলাটিতে এককভাবে বিএনপির আধিপত্য বেড়েছে। তবে সবকিছু ছাপিয়ে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানের একক আধিপত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী তার কর্মসূচিতে জমায়েত হচ্ছেন। সেই সঙ্গে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সোনারগাঁয়ের মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। পাশাপাশি ঢাকার কর্মসূচিতেও তার নেতৃত্বে বিশাল শোডাউন করা হচ্ছে। এছাড়া আজহারুল ইসলাম মান্নানের ছেলে জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক খায়রুল ইসলাম সজীবও বিএনপির কর্মসূচি নিয়ে সোনারগাঁয়ে ব্যাপক ব্যস্ত সময় পার করছেন। এদিকে বাবা ছেলের ব্যস্ততায় ব্যাকফুটে চলে গেছেন এই আসনের সাবেক এমপি এবং বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী রেজাউল করিম। ৫ আগস্টের আগে কিংবা পরে তার কোনো অস্তিত্বই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না সোনারগাঁয়ে। তার নেতাকর্মীদের কোনো কর্মসূচি করতে দেখা যায় নি।
এর আগে উপজেলা পরিষদ থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায়ের অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি ছিলেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত। হামলার শিকার হওয়ার আতঙ্ক থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি তারাও বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। এদিকে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি, অফিসে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও হামলার ঘটনা ঘটে। এর ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এ নিয়ে কাজ করছে আতঙ্ক। তারা এখনো হামলার শিকার হওয়ার ভয়ে নিজ এলাকায় ফিরছেন না।
এদিকে আজহারুল ইসলাম মান্নান ও সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া জানপ্রাণে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন সোনারগাঁ বিএনপিকে শক্তিশালী করার। সেই লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। অন্যদিকে, সোনারগাঁয়ে বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার প্রতিবাদ করে বিএনপির নেতা মান্নান যেকোনো বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে বিএনপির নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এলাকায় এলাকায় গিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিচ্ছেন তারা। সর্বশেষ ৮ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকায় বিএনপির শোভাযাত্রায় আজহারুল ইসলাম মান্নানের নেতৃত্বে প্রায় ২৫ হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। মান্নান ছাড়াও শোভাযাত্রায় অংশ নেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ আহবায়ক খাইরুল ইসলাম সজীবসহ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। মান্নানের নির্দেশনায় উপজেলা বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনাঘাট, পিরোজপুর, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, টিপুরদী ও কাঁচপুর পয়েন্টে সকাল ১০টা থেকে জড়ো হন। পরে তাঁরা বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহনে চড়ে ঢাকার মতিঝিলে একত্র হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
এদিকে সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তাঁর ছেলে জেলা যুবদলের সাবেক জ্যেষ্ঠ আহবায়ক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক খাইরুল ইসলাম সজীব বিগত ১৬ বছরে অর্ধশত মিথ্যা ও গায়েবি মামলার আসামি হয়ে মাসের পর মাস কারাভোগ করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও পুলিশের হাতে অত্যাচারের শিকারও হয়েছেন। তবু মান্নান দলের হাল ছাড়েননি। দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মান্নানের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে। সূত্র জানায়, মান্নান বিএনপির স্থানীয় ত্যাগী ও জনপ্রিয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গায়েবি মামলার খরচসহ নেতাকর্মীদের পরিবারের পাশে থাকার প্রথম ফল পেয়েছেন ২০১৪ সালের সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে। তিনি আওয়ামী লীগের দুজন হেভিওয়েট নেতাকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিভিন্ন রাজনৈতিক। দলের সমর্থকদের বাইরে সাধারণ মানুষের আস্থা রয়েছে মান্নানের নেতৃত্বের প্রতি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত সরকারের পদত্যাগের কর্মসূচি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনাসহ বিভিন্ন আন্দোলনের অগ্রভাগে নেতৃত্বে দেন মান্নান ও তাঁর ছেলে সজীব।
আপনার মতামত লিখুন :