নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে কালাম পরিবারের প্রত্যাবর্তনের বার্তা পেয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। ৫ আগস্টের আগে থেকেই বিএনপির রাজনীতিতে কালাম পরিবারের বিপরীতে বর্তমান মহানগর বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলমান ছিলো। সেই স্নায়ুযুদ্ধ সহিংসতায় রূপ নেয় ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বন্দরে সদস্য সচিবকে মারধর ও পাল্টা হামলার মধ্য দিয়ে। মামলা হামলা করে কিছুটা কোনঠাসা করে ফেললেও ফের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ আদালতে জামিন প্রাপ্তির মধ্যদিয়ে। এর মধ্যে ১৫ নভেম্বর বন্দরে শো ডাউন করে নিজেকে বেশ ভালোভাবেই জানান দিয়েছেন কালামপুত্র মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশা।
নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির প্রধান দুই নেতা সাখাওয়াত ও টিপু উভয়েই আইনজীবী। শুধু তাই নয়, নারায়ণগঞ্জ জেলা বার নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে। নারায়ণগঞ্জ কোর্টে আইনজীবীদের সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে এখন বিবেচিত তারা দুজনেই। সেই অবস্থাতেই শুনানী করে জামিন নিয়ে এসেছেন মামলার আসামী আবুল কাউসার আশা ও আতাউর রহমান মুকুল। পুরো আদালত প্রাঙ্গন নেতাকর্মী সমাগম করে নিজেদের অবস্থান জানান দিয়েছেন তারা।
জামিন মঞ্জুর হবার পর স্বাভাবিকভাবেই হতাশার ছাপ দেখা গেছে মহানগর বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের মুখে। তাদের অনুসারীরাও হয়েছেন বেশ হতাশ। কালাম পরিবারের অনুয়ারীদের বিপরীতে তাদের নেতাকর্মীরা কোর্টে হাজির হলেও শেষতক জয়ের হাসি নিয়ে ফিরেছে কালাম পরিবারের অনুসারীরা। বার্তা দিয়ে গেছে, রাজনীতিতে এখনও শক্ত অবস্থান আছে কালাম পরিবারের নেতৃত্ব।
সাবেক এমপি আবুল কালাম বর্তমানে প্রবীন বিএনপি নেতা। তবে তার পরিবারে উত্তসূরী হিসেবে রাজনীতির মাঠে রয়েছেন তিনজন। তারা হলেন, ‘ছেলে আবুল কাউসার আশা, মেয়ে নূর বাঁধন এবং ভাই আতাউর রহমান মুকুল। ছেলে এবং ভাই সাবেক জনপ্রতিনিধি। মেয়ে আদালতে আইন পেশার পাশাপাশি দক্ষ রাজনীতিবিদ হয়ে উঠছেন আদালতের রাজনীতিতে। বাবার আইন পেশা ধরে রেখেছেন তিনি। সব মিলিয়ে বেশ শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে পারিবারিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে। পরিচ্ছন্ন রাজনীতি করে আসা সকলেই নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারন ভোটারদের কাছেও বেশ জনপ্রিয়।’
সূত্র বলছে, ‘মহানগর বিএনপি নতুন করে সাজানোর যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে তাতে শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে ফিরবে কালাম পরিবার। ইতোমধ্যে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুলের বিষয়ে পজেটিভ বার্তা পৌছেছে বিএনপির কেন্দ্রে। পারিবারিক ঐতিহ্য এবং পুর্বের অবদানের কারনে তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার হবে এমন আশা অনুসারীদের। আর তা বাস্তবায়িত হলে কালাম পরিবারের শক্তি বাড়বে স্বাভাবিক ভাবেই। রাজনীতির মাঠে কালাম পরিবার শুরু থেকেই ছিলো পরিচ্ছন্ন। একাধিকবার জনপ্রতিনিধি হলেও উঠেনি দুর্নীতির অভিযোগ। চলাফেরাও ছিলো একদম সাদামাটা। আর সেই কারনেই দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা আলাদা চোখে দেখেন এই পরিবারকে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই ধীরে ধীরে মোড় ঘুরতে শুরু করে কালাম পরিবারের। ৫ আগস্টের পর তা অনেক বেশীই দৃশ্যমান হয়েছে। ইতোমধ্যে মহানগর বিএনপির নেতাকর্মীরা আভাস পেয়ে ভিড়তে শুরু করেছে এই পরিবারের সাথে। বিএনপির রাজনীতির পাশাপাশি আসন্ন নির্বাচনী রাজনীতিতেও গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠছেন আবুল কালাম ও তার পরিবারের সদস্যরা।’
১৫ নভেম্বর নবীগঞ্জ লতিফ হাজী মোড় থেকে দড়ি সোনাকান্দা মোড় পর্যন্ত শো-ডাউন করেন আবুল কাউসার আশা। ওই সময় শাহেনশাহকে হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, বড় বড় কথা বলেন সেই চাইলে নাকি সব কিছু করতে পারে। সোনাকান্দা মাটিতে এসে দাঁড়িয়েছি কিছু করতে পারে করেন, সোজা হেঁটে যাবো। বিড়াল যারা বাঘের মুখোশ পড়ে হাঁটছেন, আপনারা মনে রাইখেন আমি শিকারী। এত সহজে ছাড় দেয়া হবে না। আমরা এখন কি দেখতে পারছি আওয়ামী লীগের জয়েন্ট করা অনেক লোক এখন নব্য বিএনপি লুটতরাজে আখড়া চালিয়ে যাচ্ছে। এমন ঘটনাগুলো নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। বন্দরের এই সোনাকান্দা এলাকার এক নতুন দরবেশ বাবার আবির্ভাব হয়েছে। প্রথম ছিলেন জুত চোরা পরে হয়েছেন গরু চোর, বয়স বাড়া সাথে সাথে বর্তমানে হয়েছেন লোহা চোর। কোন অন্যায়, কোন অত্যাচার, কোন জুলুম আমার কোন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করছেন ফ্যাসিবাদি সরকার আমলে যেভাবে দোসর হিসেবে চলেছেন এখন সেভাবে করছেন। ঘরে ঘরে মামলা দিচ্ছেন আপনারা যদি না শুদ্ধরান শুধু দাঁত ভাঙ্গা নয় হাত-পা ভাঙ্গা জবাব দিবো। আমাদের পরিবার ও আমাদের বিরুদ্ধে আর কোন বাজে মন্তব্য আর কোন মামলা দিচ্ছেন, তাহলে আপনাকে দেখার আছে। রাজনীতিতে শিষ্টাচার থাকা অনেক জরুরী। রাজনীতিতে কোন মঞ্চ আছে, অশিক্ষিত মূর্খের মত কথা বলেন, আজকের মধ্যে এগুলো বন্ধ করেন। বিগত সরকার পুলিশ দিয়ে হামলা মামলা দিয়ে যেভাবে আমাদের হয়রানী করেছে আপনারা সেভাবে করছে। পুলিশকে ব্যবহার করে মামলা দিয়ে আমাদের সাথে লড়াই করতে চাচ্ছেন। ১৭ বছর লড়াই করেছি, প্রয়োজনে আরো লড়াই করবো।
আপনার মতামত লিখুন :