নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে জামায়াত সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসলেও পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেই সাথে ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। তবে জামায়াত কখনও বসে থাকছেন না। তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী নানা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
সবশেষ শহরের কালিরবাজারে অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতায় জামায়াত এগিয়ে এসেছেন। তাদের আর্থিক সহযোগিতা করেছেন যা অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হয়ে এগিয়ে আসতে পারেননি। সেই সাথে ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারাও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের কোনো সহযোগিতা করেননি। যা বিএনপি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক বিষয় হিসেবে পরিণত হয়েছে। সাধ্য থাকলেও জনকল্যাণে তারা এগিয়ে আসতে পারেননি। শুধুমাত্র নিজের পকেট ভরার জন্যই যেন তারা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
সূত্র বলছে, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আওযামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই জামায়াত বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত আহতদের সহযোগিতা করার পাশপাশি নানা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন।
এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরের কালিরবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ৩০ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত ৭ অক্টোবর গভীর রাতে কালিরবাজারের মসলা পট্টিতে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। প্রথমে একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটলেও পরবর্তীতে আগুনের লেলিহান শিখা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে দেড় ঘন্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময়ে মুদি, পাইকারি মালামাল, হার্ডওয়্যার ও প্লাস্টিকের বিভিন্ন জিনিসপত্রের দোকান সহ প্রায় ৩০ টি দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এই অগ্নিকান্ডের দিন বিকেলেই আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের সমবেদনা জানিয়ে আসেন নারায়ণগঞ্জ মহানগরী জামায়াতে ইসলামী। সেই সাথে গভীর সমবেদনা জানান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা মঈনুউদ্দিন আহমাদ। সে সময় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার আশ্বস্ত করে বর্তমান সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পাশে থাকার আহব্বান জানান।
কিন্তু এই অগ্নিকান্ডের ঘটনায় দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতাকর্মীরা কোনো প্রদক্ষেপ নেয়নি। সেই সাথে ব্যবসায়ীদের কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। নূন্যতম সৌজন্যবাধ হিসেবে তারা সমবেধনাও জানাতে যায়নি।
এদিকে ব্যবসায়ীদের আশ্বাস দেয়ার পর সবকিছু যাছাই বাছাই করে ব্যবসায়ীদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছেন জামায়াত। ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ জন ব্যবসায়ীয়ে তারা আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে শহরের মিশনপাড়া এলাকার মহানগর জামায়াত ইসলামীর কার্যালয়ে এই সহায়তা প্রদান করা হয়।
সেই সাথে আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ অঞ্চলের পরিচালক সাইফুল আলম খান মিলন। তাদের সহযোগিতা পেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পেয়েছেন। পাশাপাশি কোনো রকমের ফটোশেসনেও তাদের যুক্ত হতে হয়নি। এভাবে বিএনপি ও ব্যবসায়ী নেতারা এগিয়ে আসলে হয়তো ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের কোনো বেগ পোহাতে হতো না।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে জামায়াতে ইসলামের নেতাকর্মীরা অনেক নির্যাতন নীপিড়নের শিকার হয়েছেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের চেয়ে তারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছেন। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা পঙ্গুত্ববরণ সহ নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। মামলা হামলা তো বলারই অপেক্ষা থাকে না। পুলিশি রিমান্ডে গিয়ে সীমাহীন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
এরই মধ্যে গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। আর এই সরকার পতনের মধ্য দিয়ে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াত ইসলামের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্য আসেন। সেই সাথে তারা বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে জনগণের দৌড়গোড়ায় পৌছাতে থাকেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জের নিহত ও আহতদের বাসায় বাসায় গিয়ে হাজির হতে থাকেন নারায়গঞ্জ জামায়াত ইসলামের নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন বাসায় বাসায় গিয়ে তারা নিরবেই আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। কারও কারও বেলায় সকল দায়িত্ব নেন জামায়াত ইসলাম। বিভিন্ন মেডিকেল সেবা নিয়েও তারা জনগণের দৌড়গোড়ায় যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত হত্যাকান্ড মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বীর সাথেও দেখা করেন তারা। রফিউর রাব্বীর সাথে তারা নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন মহলের সাথে যোগাযোগ করছেন। প্রশাসনের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাদেরকে সহযোগিতা করার ব্যাপারে বারবার আশ্বাস দিয়ে আসছেন।
একই সাথে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর জামায়াত ইসলাম সাংগঠনিকভাবেও বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। সেই সাথে তাদের সভা সমাবেশগুলোতে কোনো বিশৃঙ্খলা কিংবা ফটোশেসনের প্রতিযোগিতাও দেখা যায়নি। নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বেরও কোনো প্রতিযোগিতা দেখা যায়নি। পাশাপাশি এখন পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো কল কারখানার ঝুট নামানো কিংবা কোনো চাঁদাদাবীর খবর পাওয়া যায়নি।
বিগত দিনে অনেক নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হলেও তাদেরকে এখন পর্যন্ত প্রতিশোধ পরায়ন হতে দেখা যায়নি। বরং তারা সকল ক্ষেত্রে সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে নিরবে থেকেই তাদের সকল কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। দিন যাওয়ার সাথে সাথে তারা জনসাধারণের মন আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছেন।
আপনার মতামত লিখুন :