News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

ওসমান, বেয়াই সন্তানদের গ্রেপ্তার দাবী


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ করেসপনডেন্ট প্রকাশিত: নভেম্বর ১৫, ২০২৪, ১০:৪৭ পিএম ওসমান, বেয়াই সন্তানদের গ্রেপ্তার দাবী

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতা শামীম ওসমান ও তার বেয়াই ফয়েজউদ্দিন লাভলু পরিবারের সন্তানদের গ্রেপ্তার ও শাস্তি দাবিতে ফেস্টুন সাটানো হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে শহরের ডিআইটি গুলশান সিনেমা হলের প্রধান ফটকে ছবি সম্বলিত ফেস্টুনে আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার ফেস্টুন সাটানোতে উৎসুক জনতাও শামীম ওসমানের বিয়াই লাভলু গ্রেপ্তার দাবি করেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হলের দুই তলায় ছায়াছবি’র ফেস্টুনের স্থানে একটি বড় ব্যানার টানিয়ে দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জ এর সচেতন জনগণ প্রচারে ওই ব্যানারে শামীম ওসমান, ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরি ওসমান, বেয়াই ফয়েজউদ্দিন আহম্মেদ লাভলু ও তার ছেলে ভিকি, শামীম ওসমানের শ্যালক তানভীর আহম্মেদ টিটু ও এক সাংবাদিকের অস্ত্র নিয়ে মহড়ার ছবিগুলো গোল চিহ্নিত দেয়া হয়। ব্যানারে ছবির নামের সাথে খুনি লেখা রয়েছে। বড় অক্ষরে আরও লেখা রয়েছে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে প্রকাশ্যে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি করা শামীম ওসমান ও তার দোসদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে’। ফেস্টুন ব্যানারের ছবিগুলো ১৯ জুলাই শহর ও জালকুড়ি এলাকার সেই দিনের মহড়া ছবি ছিলো।’

অন্যদিকে ৫আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর থেকে গুলশান সিনেমা হলটি বন্ধ রয়েছে। সেখানে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগও রয়েছে। এদিকে ফয়েজউদ্দিন লাভলু ভারতে পলাতক রয়েছেন এমন ছবি প্রকাশিত হয়েছে ফেসবুকে। সেখানে তিনি তার মেয়ের শ্বশুড় (বিয়াই) শামীম ওসমানের সাথে দাঁড়ানো ছিলো।

জানা যায়, শামীম ওসমানের একমাত্র ছেলে অয়ন ওসমানের কাছে বিয়ে দেন লাভলু কন্যা। এরপর থেকে শহর ও শহরতলীতে লাভলু ও তার ছেলে মিনহাজউদ্দিন ভিকি বেপরোয়া হয়ে পড়েন। স্কুল কলেজ, মার্কেট, সমবায় সমিতি ও সংগঠনের সভাপতি বা চেয়ারম্যান হয়ে একক কর্তৃত্বে রয়েছেন লাভলু। এমনকি বিয়াই ওসমানদের কারণে তিনি ঐতিহ্যবাহী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের একাধিক বার সিনিয়র সহ-সভাপতি দায়িত্ব পালন করেছেন। ওসমানের বেয়াই সুবাদে শহর ও বিভিণœ স্থানে বিচার শালিসে লাভলু ও তার ছেলে ভিকি ছিলো লোভী।

১৯ জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলন চলাকালে শামীম ওসমান, ছেলে অয়ন ওসমান, বেয়াই লাভলু ও তার ছেলে ভিকি প্রকাশ্যে অত্যাধুনিক অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি বর্ষণ করেন। শহর চাষাঢ়া থেকে নিতাইগঞ্জ পর্যন্ত এলোমেলো গুলি বর্ষণে ছাত্র-জনতা অনেকে আহত হয়েছেন। ওই বিকালে নয়ামটি একটি বাড়ির ছাদে ছয় বছরের শিশু রিয়া গোপও গুলিতে নিহত হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবের অত্যাধুনিক অস্ত্রগুলো দিয়ে অয়ন ওসমান, ভিকি, ভিপি রিয়াদ, আহম্মেদ কাউসার, রাফেলকে গুলি করেন এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

এমনকি আওয়ামীলীগ সরকার বিরোধী আন্দোলনগুলোতে মটর সাইকেল মহড়া দিতেন লাভলু। তিনি ও তার ছেলে ভিকি’র কিশোর গ্যাং বাহিনী হোন্ডা নিয়ে মহড়া দিতেন বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন কর্মসূচীতে। একাধিক পিস্তল ও অস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ছেন লাভলু ও ভিকি।

অস্ত্রের ভান্ডার : শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমানের নেতৃত্বে গত ১৯ জুলাই শহরের বি.বি রোড ও জালকুড়ি এলাকায় আন্দোলনরত ছাত্র জনতাকে লক্ষ্য করে কেজিএফ স্টাইলে শটগান ও রিভালবার থেকে একের পর এক অতর্কিত গুলি করেন অয়ন। ওই দিন অয়নের বাবা শামীম ওসমান ও তার সহযোগীদেরও অন্ত্র নিয়ে গুলি করতে দেয়া যায়। তবে সড়কে দেশী বিদেশী অন্ত্র হাতে সবচেয়ে বেশি তান্ডব চালায় অয়ন ও তার অনুসারীরা। এদের মধ্যে ছিলেন, অয়ন ওসমানের প্রধান সেনাপতি যুবলীগ নেতা আহম্মেদ কাউসার, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাফেল প্রধান, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ, ১৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি অর্পন প্রধান, ১৭ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা রিয়েন, ছাত্রলীগ নেতা বাপ্পী, শুভ ও কিশোরগ্যাং লিডার ম্যাকলিন।

এর আগে শহরের নূর মসজিদ এলাকায় বিভিন্ন স্কুল কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের ওপর আহম্মেদ কাউসারের নেতৃত্বে হামলা চালায় অয়ন ওসমানের অনুসারীরা। সেখানে আহম্মেদ কাউসারের সাথে চাঁদমারী এলাকার কিশোর গ্যাং লিডার ম্যাকলিন বাহিনীকে অস্ত্রসহ সবার উপর হামলা চালাতে দেখা যায়। নগরীর বালুর মাঠ এলাকা থেকে তারা গুলি ছুঁড়তে ছুঁড়তে বিবি রোডে প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে সরিয়ে দেয়। ঠিক ওই সময় বিবি রোডের উকিলপাড়া এলাকায় তান্ডব চালায় সাবেক কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানের ভাতিজা ও স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতা অর্পন প্রধান। সেদিন বি. বি রোডের নিতাইগঞ্জ এলাকায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ছাত্র জনতা দমনের দায়িত্বে ছিলো রিয়েন বাহিনী। এরপর জালকুড়ি এলাকায় অয়ন ওসমানকে দেখা যায় কেজিএফ স্টাইলে গুলি করতে। অয়নের সাথে ছিলো ছাত্রলীগ নেতা রাফেল, বাপ্পী, রিয়াদ ও কাউসারসহ আরো অনেকে।

জানা যায়, অয়ন ওসমানের অস্ত্রের ভান্ডার এখনো যারা লুকিয়ে রেখেছে তাদের মধ্যে, নলুয়াপাড়া এলাকার আহম্মেদ কাউসার, ফতুল্লার রিয়াদ, মাসদাইরের রাফেল, সিদ্ধিরগঞ্জের বাপ্পী, পাইকপাড়ার রিয়েন, নন্দীপাড়ার অর্পন ও চাষাড়ার ম্যাকলিন অন্যতম। এদের কাছেই মূলত অয়নের বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র রক্ষিত আছে।

গত ৫ আগস্টের পর থেকে ওসমান পরিবারের দ্বারা বিগত দিনে নির্যাতনের শিকার হওয়া ব্যক্তিরা বিভিন্ন সভা সমাবেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি করেছেন। বিশেষ করে অয়ন ওসমান ও আজমেরী ওসমানের সহযোগীদের কাছে থাকা বিপুল পরিমান অস্ত্র যৌথ বাহিনীর অভিযানে উদ্ধারের দাবি করেছেন সবাই।

Islams Group
Islam's Group