শহীদ নূর হোসেন স্মরণে ও ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবিতে ঢাকার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগ। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ডাক উপেক্ষা করেই এদিন নিষ্ক্রিয় ছিল নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। অন্য সময় ঢাকায় আওয়ামী লীগের যেকোনো কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা গেলেও এবার তার ছিঁটেফোটাও দেখা যায়নি।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপের মুখে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে ভারত চলে গেলে সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। তখন থেকেই নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনার যেকোনো বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাঠানো হতো। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১০ নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে শেখ হাসিনার পরোক্ষ ডাকে সাড়া দেন নি নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ। পুরো জেলাজুড়ে কোথাও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনোরকম কর্মসূচি পালন করতে দেখা যায়নি। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জে তাদের কোনো অস্তিত্বও লক্ষ্য করা যায়নি। তবে এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের নামার কথা ছিল। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাঠে নামার ঘোষণা দিতে দেখা যায়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এদিকে রাজধানীর পাশে জেলা হিসেবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের সবসময় প্রত্যক্ষ ভূমিকা থাকে। এবারই প্রথম আওয়ামী লীগের ভঙ্গুর দশা লক্ষ্য করা যায়।
শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মবার্ষিকী পালন করা নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হোন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অন্যান্যবছর শেখ হাসিনার জন্মদিন পালন করা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা কাজ করলেও এবার তাদের কোনো হদিসই মেলে নি। বরং নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতে দলীয় কার্যালয় বর্তমানে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এর আগে গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশত্যাগ করলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে যান। এর কিছুদিন পর আওয়ামী লীগের একটি অংশকে ফের নিজ এলাকায় ফিরতে দেখা গেলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন থানায় দায়েরকৃত হত্যা মামলায় তাদের আসামি করা হলে তারা পুনরায় পালিয়ে যান। তারও আগে এই খারাপ পরিস্থিতিতেও গত ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে ব্যাপক প্রশংসায় ভাসেন ডা. সেলিনা হায়াত আইভি। কিন্তু এরপরই কয়েকটি হত্যা মামলার আসামী হতে হয় তাকে। সেই সঙ্গে সারাদেশের সিটি করপোরেশনে মেয়রদের অপসারণ করা হলে আইভীকেও নাসিকের মেয়র পদ থেকে সরে যেতে হয়। পরবর্তীতে তিনিও চুপসে গেলে আওয়ামী লীগের আর কোনো নেতাকর্মীকে এমন সাহসী আচরণ করতে দেখা যায় নি। যার চিত্র সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে প্রকাশ পেয়েছে। এ নিয়ে জেলাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। এর আগে নারায়ণগঞ্জে কখনো এমন কোনো ঘটনা ঘটতে দেখা যায়নি। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কেন্দ্রের নির্দেশ যথাযথভাবে পালন করতে দেখা গেছে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার সরকারের পতন ও দেশত্যাগের পর থেকেই সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের রাজনীতির মোড় ঘুরে গেছে। যেখানে কিছুদিন আগেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বড় বড় কথা বলতেন নিজেদের জানান দিতে ব্যস্ত থাকতেন সেখানে তারা একেবারেই আড়াল হয়ে গেছেন। কেউ কেউ প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করলেও সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। গণ অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। অথচ কয়দিন আগেও জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বড় বড় হুংকার দিয়েছেন। দলীয় যে কোনো কর্মসূচিতে নিজেদের বিভিন্নভাবে জানান দেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকতেন। সেই সাথে দলীয় পদ-পদবী ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে সুবিধাভোগী হয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সংকটকালীন সময়ে তাদের দেখা মিলছে না। তাদের অনুসারী কারও কারও দেখা মিললেও তারা ঝটিকা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে নিজেদের জানান দেয়ার চেষ্টা করেন।
আপনার মতামত লিখুন :