রাজনীতির মাঠে সক্রিয়তা নাই কিন্তু ভোট আসলেই জেগে উঠেন। দুই হাত ভরে টাকা বিলাতে শুরু করেন। রাজনীতিবিদদের কারো কারো পকেটবন্দী করে ছড়ি ঘুরান। টার্গেট নির্বাচন। যে কোন মূল্যে নির্বাচনে টিকে থাকার লড়াই। দল যখন দুঃসময়ে তখন তাদের পা পড়ে না এ জনপদে। কিন্তু নির্বাচন আসলে দিনরাত একাকার করে দেন। নারায়ণগঞ্জের এমন দুই রাজনীতিক হলেন শাহ আলম ও মনির হোসাইন কাশেমী। এর মধ্যে শাহআলম বিএনপি ও কাশেমী হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা। গত কয়েকদিন ধরেই তারা এলাকাতে খুব সক্রিয়। শাহআলম কাজ করছেন অন্তরালে থেকে। নেতাকর্মীদের ডেকে ডেকে শলা পরামর্শ করছেন। আর কাশেমী সরাসরি মাঠে। ব্যবহার করছেন ফতুল্লার কয়েকজন বিএনপি নেতা ও শামীম ওসমান ঘেঁষা হেফাজত নেতাদের। টার্গেট দুই কূল ঠিক রেখে ভোটের ময়দান ঠিক রাখা।
ফতুল্লা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, মনির কাশেমী ও শাহআলমকে মাঠে নামাচ্ছেন থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু ও সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ চৌধুরী। ইতোমধ্যে এ দুইজন এক জোট হয়ে বিভিন্ন সময়ে কর্মসূচী পালন করে চলেছেন। একের পর এক বিষোদগার বক্তব্য দিতে শুরু করেছেন গিয়াসউদ্দিনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের একটি ফুটবল খেলায় কাশেমীকে অতিথি করা হয়। এর নেপথ্যে ছিলেন রিয়াদ। সবশেষ ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবসেও দুইজন আলাদা কর্মসূচী করেন। সেদিন গিয়াসের বিরুদ্ধে কড়া বক্তব্য রাখেন রিয়াদ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগের অত্যাচার নির্যাতনের সময়ে ফতুল্লায় দেখা যায়নি শাহআলমকে। অনুসারী নেতাকর্মীরাও ছিল পর্দার আড়ালে। কোন মামলা হয়নি শাহ আলমের বিরুদ্ধে। ভালো অবস্থানেই ছিলেন আওয়ামী লীগের পুরোটা সময় জুড়ে। শামীম ওসমানও প্রায়শই নানা ইঙ্গিতে শাহ আলমের প্রশংসা করতেন। একই অবস্থা ছিল মনির হোসাইন কাশেমীর। তিনিও পা দেয়নি ফতুল্লায়। কারাবন্দী হওয়ার আগেও আসেনি ফতুল্লাতে, পরেও দেখা যায়নি।
তবে ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি বেশ সক্রিয়। তাকে মাঠে নামান রিয়াদ। সঙ্গ দিচ্ছেন শামীম ওসমানে ঘনিষ্ঠ ‘ছোট ভাই’ খ্যাত হেফাজতের নেতা ফেরদাউসুর রহমান। টার্গেট নির্বাচন। আরেকজন টার্গেট গিয়াসউদ্দিন।
গত এক দশকে মামলার কারণে ঠিকমত বাসায় থাকতে পারেনি গিয়াসউদ্দিন। মামলায় জ্বলে পুড়েছেন তিনি। শামীম ওসমানের রোষানলে যখন গিয়াস পুড়ে তখন আরাম আয়েশেই ছিলেন শাহ আলম। কিন্তু এখন দলের সু সময়ে তারা ফের জেগে উঠতে শুরু করেছে।
এক সময়ে কল্যাণ পার্টির রাজনীতিতে জড়ান শাহ আলম। ওয়ান এলেভেনের সময়ে কল্যাণ পার্টিতে দুই হাত ভরে অনুদান দিয়েছেন। সেই পার্টির নেতা সব শেষ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে বেঈমানী করে সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। শাহআলম পরবর্তীতে যুক্ত হন বিএনপিতে। টার্গেট ছিল এমপি হওয়া। ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও আওয়ামী লীগের সারাহ বেগম কবরীর কাছে ধরাশয়ী হন। পরবর্তীতে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও কয়েক বছর আগে আন্দোলনের সময়ে পদ ছেড়ে দেন। মাঝে খবর নেয়নি কারো। বিএনপির সঙ্গে ছিল না কোন ধরনের হৃদ্যতা। এখন দলের সুসময় তাই তিনি ফের উদয় হওয়ার চেষ্টা করছেন।
জানা যায়, বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ সভাপতি শাহ আলমের কোন অংশগ্রহণ ছিল না। রাজপথে নেয়া দলীয় কোন কর্মসূচিতেই তার অংশগ্রহণ থাকতো না। মাঝে মধ্যে ঘরোয়া কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে থাকলেও সেটা খুব বেশি সময়ের জন্য না। এমনকি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবীতেও শাহ আলমের সক্রিয় কোন ভূমিকা ছিল না। তার অবস্থা অনেকটা ‘কিতাবে আছে গোয়ালে নেই’ প্রবাদের মতো।
আপনার মতামত লিখুন :