News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

সাখাওয়াত ও টিপুর উল্টো রাজনৈতিক পরাজয়


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: নভেম্বর ১০, ২০২৪, ১০:০১ পিএম সাখাওয়াত ও টিপুর উল্টো রাজনৈতিক পরাজয়

মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিকভাবে জিততে গিয়ে উল্টো রাজনৈতিকভাবে পরাজিত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু।

গত ৬ সেপ্টেম্বর বন্দরের নবীগঞ্জ কামাল উদ্দীনের মোড় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের হাতে হামলার শিকার হয়েছিলেন আবু আল ইউসুফ টিপু। কিন্তু সেই ঘটনায় মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আবুল কাউসার আশাকে প্রধান আসামি এবং মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আতাউর রহমান মুকুলকে ২নং আসামি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন টিপু। অভিযোগ তোলা হয় তারা দুইজন হত্যার উদ্দেশ্যে টিপুকে কুপিয়েছেন। শুধু তাই নয় টিপুকে মারধর করে তার পকেট থেকে ৬০ হাজার টাকাও চুরি করেছে আশা। এমন অভিযোগ তোলেন মামলার এজাহারে। কিন্তু আদালতে বিষয়গুলো মিথ্যা প্রমাণিত হলে তাদেরকে জামিন দিয়ে দেন। কিন্তু টিপু ও সাখাওয়াত জোড়ালো চেষ্টা করেছিলেন মিথ্যা মামলা দায়ের করে আশা ও মুকুলকে জেল খাটিয়ে রাজনৈতিকভাবে জিততে। কিন্তু সেটা তারা পারেননি।

ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট বন্দর উপজেলার বন্দর ইউনিয়নের তিনগাঁও এলাকায় দখলবাজ সন্ত্রাস চাঁদাবাজ ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে বিএনপির ব্যানারে সমাবেশের আয়োজন করেন আবুল কাউসার আশা অনুসারী নুর হোসেন গং। ওই সমাবেশস্থলের মঞ্চ প্যান্ডেল ভাঙচুর করে মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু অনুসারী বন্দর ইউনিয়ন বিএনপি নেতা রাজু আহমেদ, সম্ম্রাট হোসেন সুজন, রাজীবসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী।

পরে ঘটনাস্থলে যান আবুল কাউসার আশা। সেদিন তিনিও নেতাকর্মীদের নিয়ে মহড়া দেন। সেদিন আশা অনুগামী বিএনপির সমর্থক নূর হোসেনের কাছে সাখাওয়াত ও টিপুর পক্ষে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে সম্ম্রাট সুজন। এমন অভিযোগ তুলে মিডিয়াতে বক্তব্য দেন নূর হোসেন।

ওই ঘটনার রেশ না কাটতেই ৬ সেপ্টেম্বর একই স্থানে উপজেলা বিএনপি ও থানা বিএনপির ব্যানারে সমাবেশের ডাক দেন সাখাওয়াত ও টিপু অনুসারীরা। ওই সমাবেশে যোগদানকালে বন্দর নবীগঞ্জ কামাল উদ্দীনের মোড় এলাকায় বিএনপির বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের হাতে বেদম পিটুনির শিকার হোন আবু আল ইউসুফ খান টিপু। সেদিন তিনি দৌড়ে পালাতে গিয়ে রাস্তায় লুটিয়ে পড়লে সেখানেও তাকে কিলঘুষি লাথি মারতে থাকেন। একটি বাড়িতে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিলে সেখানেও হামলার শিকার হোন টিপু। হাতভাঙ্গা জখম ও ঘাড়ে কাটা রক্তাক্ত জখম হোন তিনি।

ঘটনার পরদিন ৭ সেপ্টেম্বর আবুল কাউসার আশা কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগরীতে মিছিলে শোডাউন করেন। ওইদিন মিছিলের ব্যানারে টিপুর ছবিকে বিকৃত করে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে টিপুর বিরুদ্ধে মিছিল করা হয়। এর একদিন পর আবুল কাউসার আশা ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আতাউর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে টিপুকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেন টিপু।

মামলায় আশা ও মুকুলকে ঘটনার প্রত্যক্ষ আসামি করা হলেও তারা ঘটনার সময় উপস্থিত ছিলেন না। প্রকাশিত ভিডিওতেও তাদের ‍উপস্থিতি দেখা যায়নি। এমনকি প্রত্যক্ষদর্শীরাও জানান ঘটনার সময় আশা ও মুুকুল উপস্থিত ছিলেন না। তবুও মামলার এজাহারে আশা ও মুকুলকে প্রত্যক্ষ উপস্থিতি দেখিয়ে তাদের হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখমের অভিযোগ তুলে তাদেরকে আসামি করে মামলা করেছেন টিপু। তারা টিপুকে কুপিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন।

ওই ঘটনার পর ১০ সেপ্টেম্বর নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ায় প্রতিবাদ সমাবেশ করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। ওই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান। সেই সমাবেশে আইনজীবী ফোরামের সভাপতি, আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির ঘোষণা করেন, টিপুকে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিদের পক্ষে নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির কোনো আইনজীবীকে আইনি লড়াই চালাতে দেয়া হবে না। সমিতির কোনো আইনজীবীকে আসামিদের পক্ষে আইনি সেবায় দাঁড়াবে না। সরকার হুমায়ুন কবিরের এমন ঘোষণার সঙ্গে সমিতির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আনোয়ার প্রধানসহ অন্যান্যরাও সমর্থন জানান। যে কারণে কার্যত মামলাটি দুর্বল হলেও বিএনপির নেতা ও বিএনপির আইনজীবীদের হুমকি ধমকির কারণে হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন কালামপুত্র আবুল কাউসার আশা।

যার প্রতিফলন দেখা গেলো গত ৮ অক্টোবর মঙ্গলবার আদালতপাড়ায়। সেদিন হাইকোর্টের জামিনানামা নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিল করবেন আশা। আশার পক্ষে আইনি লড়াইয়ে নামেন তার একমাত্র বোন অ্যাডভোকেট সামসুন নূর বাধন। আশা কোর্টে জামিননামা দাখিল করতে আসবেন এমন খবরে টিপু তার অনুসারী মহানগর বিএনপির সদস্য মাহাবুব উদ্দিন তপন ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক সাখাওয়াত ইসলাম রানা কয়েকশ উশৃঙ্খল লোকজনদের এনে কোর্টেপাড়ায় জমায়েত ঘটান। ওই সময় উশৃঙ্খল নেতাকর্মীরা আশার বোন অ্যাডভোকেট সামসুন নূর বাধনকে হুমকি ধমকি দিতে থাকেন। তার সামনেই তাকে জানানো হয় আশা কোর্টে আসলে তাকে হামলার শিকার হতে হবে। এ ঘটনায় সেদিনও কোর্টে পাল্টাপাল্টি মহড়া চলে।

৬ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আত্মসমর্পেন করেন আশা ও মুকুল সহ ৭ জন আসামী। টিপুর পক্ষে মামলার শুনানিতে অংশ নিয়ে জামিনের বিরোধীতা করেন অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, অ্যাডভোকেট রফিক আহমেদ এবং জামিনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট নবী হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা ও অ্যাডভোকেট সামসুন নূর বাঁধন। আদালত আসামীদের জামিনে আবদেনস মঞ্জুর করেন। ওইদিন আশা ও মুকুলের পক্ষে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের ‍উপস্থিতিতে দেখা যায় কোর্টে। টিপুর অনুগামীরাও কোর্টে অবস্থান নেন। তবে জামিন দেয়ার পর হতাশা হয়ে পড়েন টিপু অনুগামীরা।

Islams Group
Islam's Group