বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তখনকার গডফাদার শামীম ওসমানের সঙ্গে লড়তে হয়েছিল গিয়াসউদ্দিনকে। তিনি জেলা বিএনপির দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে উঠেপড়ে লাগেন শামীম ওসমান। যদিও সভাপতির আগে থেকেও ছিল প্রচন্ড প্রতিহিংসা। একের পর এক মামলায় জড়ানো হতো গিয়াসউদ্দিন ও তার ছেলেকে। মামলার কারণে প্রিয়তম স্ত্রীর জানাযাতেও উপস্থিত হতে পারেনি তিনি। শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নয় বরং ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে পরাজয়ের হিংসা সব সময়ে তাড়া করে বেড়াতো শামীম ওসমানকে। গত ৫ আগস্টের পর শামীম ওসমান দেশ ছাড়লেও আক্রান্ত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না গিয়াসউদ্দিন। এবার তার বিরুদ্ধে আটঘাট বেধে মাঠে নেমেছেন নিজ দলের লোকজন।
এরই মধ্যে ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ মোহাম্মদ চৌধুরী প্রকাশ্য বক্তব্য দিয়েছেন। এছাড়া মাঠে নেমেছেন ২০১৮ এর সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া জমিয়তের নেতা মনির হোসাইন কাশেমী। সঙ্গ দিচ্ছেন শামীম ওসমানের আদরের ‘ছোট ভাই’ খ্যাত মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান। এছাড়াও শামীম ওসমান ঘনিষ্ঠ বিএনপি নেতা শাহআলমও মাঠে আছেন পর্দার আড়াল থেকে।
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের বাইরে থাকলেও শামীম ওসমান এখনো অনেক কিছু ইশারা দিচ্ছে। তিনি স্বস্তিতে নাই তাই তিনি স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছেন না গিয়াসউদ্দিনকেও। এজন্য ফতুল্লায় সবচেয়ে বেশী সক্রিয় এখন শামীম ওসমানের ক্যাডার যুবলীগ নেতা মীর সোহেলের অনুসারীরা। কারণ এ সোহেলের রাজনীতি শুরু ছাত্রদল থেকে। তিনি ফতুল্লা থানা ছাত্রদলের এক সময়ে সভাপতি ছিলেন। ফলে তার সঙ্গে ছাত্রদল করা অনেক নেতার সঙ্গে এখনো রয়ে গেছে সুসম্পর্ক। সেটাকে তিনি কাজে লাগাতে চান।
অপরদিকে নির্বাচনের আগে চাপে রাখতে পর্দার আড়াল থেকে দাবার গুটি চালছেন বিএনপি নেতা শিল্পপতি শাহআলম। রাজনীতি করবেন না মুচলেকা দিলেও এখন সু সময়ে নিজেকে জাহির করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি আপাতত প্রকাশ্য না এসে চাচ্ছেন গিয়াসউদ্দিনকে মাইনাস করে জেলা বিএনপিতে নতুন নেতৃত্ব কায়েম করাতে। তখনই শাহআলম কামব্যাক করতে চান। এ শাহআলমের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল সাত খুন মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী নূর হোসেনের ভাই নুরুদ্দিন। শাহআলম থাকতে এ নুরুদ্দিন ছিলেন সিদ্ধিরগঞ্জ বিএনপির কমিটিতে। নূর হোসেনের সঙ্গে কখনই সম্পর্ক ভালো ছিল না গিয়াসউদ্দিনের।
মাঠে আটঘাট বেধেই নেমেছন মনির হোসাইন কাশেমী। তাকে নিয়ে মাঠ চষার পরিকল্পনা করছেন ফেরদাউসুর রহমান। ২০১৮ সালের নির্বাচনে প্রতিদিন রাইফেল ক্লাব ও জামতলার বাসায় যেতেন ফেরদাউস। তিনি মনির কাশেমীর সকল পরিকল্পনা জানিয়ে দিতেন শামীম ওসমানকে। তাছাড়া শামীম ওসমানের ক্যাডার শাহ নিজামের ঘনিষ্ঠ আস্থাভাজন ছিলেন ফেরদাউস। তাদের সম্পর্ক এখনো চলমান।
ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ চৌধুরী সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জানান দিয়েছেন। সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
তবে তাদের বাইরেও অনেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। সময়মতো সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আবির্ভাব হবেন। আর এসকল সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে সকলেরই টার্গেট হবেন মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। তারা সকলেই গিয়াসকে আটনানোর চেষ্টা করে যাবেন। আর এই আটকাতে গিয়ে গিয়াসের বিরোধী সকল সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাবেন গিয়াসের বিরুদ্ধে। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে তাদের সেই বলয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।
বিএনপির একাধিক সূত্র জানান, রাজধানীর দিলকুশা, ফতুল্লার একটি কারখানা ও সবশেষ রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে দফায় দফায় বৈঠকগুলো হচ্ছে। সেখানে ইসলামী দলের একজন নেতা, ফতুল্লার বিএনপির সাবেক একজন ও বর্তমান কমিটির একজন তরুণ নেতা, সিদ্ধিরগঞ্জের একজন নেতা, রূপগঞ্জের একজন বিএনপি নেতা ও আড়াইহাজারের একজন ছিলেন। এছাড়া কিছু সভায় তাদের অনুসারীরাও ছিলেন।
সভাগুলোতে মূলত নির্বাচন টার্গেট করে জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়া ও গিয়াসউদ্দিনকে রুখে দেওয়ার বিষয়টি আলোচনায় আনা হয়। সভায় উঠে আসে, এ সময়ে গিয়াসউদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক খোকন বেশ শক্ত অবস্থানে আছেন। তারা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি করেছেন। ফলে ৩ বছরের আগে কমিটি ভাঙার সুযোগ কম। তাছাড়া ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের তালিকাও কেন্দ্রে জমা আছে।
গিয়াসউদ্দিনকে সরানো না গেলে থানা কমিটি কিংবা জেলায় প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব হবে না উঠে আসে আলোচনায়। এজন্য যে কোন মূল্যে কমিটি পুনর্গঠনের কথা বলা হয়।
সভায় বলা হয়, জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ দুটি কমিটি যে কোন মূল্যে নিজেদের কব্জায় আনতে হবে। জেলা যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহানগর যুবদলের কমিটিও পুনর্গঠনের কথা বলা হয়। সেখানে একজন কেন্দ্রীয় নেতা আশ^স্ত করেন কমপক্ষে ৩ কোটি টাকা হলে এসব কমিটি রদবদল বা পুনর্গঠন সম্ভব। বিষয়টি নিয়ে ফতুল্লার একজন শিল্পপতি ও রূপগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতাকে চিন্তা করার কথা বলা হয়েছে। এ দুইজন টাকার যোগান দিলে ওই কেন্দ্রীয় নেতা কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ করবেন আশ^স্ত করেছেন।
রূপগঞ্জের নেতা গোলাম ফারুক খোকন জেলা বিএনপির সেক্রেটারী। তাকে নিয়েও অস্বস্তি একটি অংশের নেতাদের। তারা মনে করেন যে কোন উপায়ে খোকনকে সরানো গেলে পুরো জেলা বিএনপির কমিটি তাদের নিয়ন্ত্রনে আসবে। তখন জেলা বিএনপি মূলত সহযোগি সংগঠনের কমিটি গঠনে জোরালো সুপারিশ করতে পারবে। আর যেহেতু সামনে নির্বাচন সেহেতু পদধারী নেতারা যার পক্ষে থাকবেন তার পাল্লাই ভারী হবে বেশী।
৫ আগস্টের পর শামীম ওসমান দেশত্যাগ করেন। বদলে যায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। এ কারণেই নির্বাচনকে ঘিরে কৌশলে আগাতে চান মনির কাশেমী। তিনি এখানে কয়েকটি ইস্যু সামনে এনেছেন। প্রথমত বিএনপির একটি অংশকে আয়ত্বে নেওয়া।
আপনার মতামত লিখুন :