নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপি নেতা কারাবন্দি জাকির খানের ছোট ভাই জিকো খান রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। জাতীয়তাবাদী সাংষ্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সভাপতি হয়ে বৃহস্পতিবার শোডাউন করেছেন। এর আগে তাদের বড় ভাই কবির খান দেওভোগ পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন। প্রায় ১৯ বছর পলাতক থাকার পর রাজধানী ঢাকা থেকে ২০২২ সাল ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন জাকির খান। ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যাকান্ড সহ চার খুনের হামলায় তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এর আগে গত ২০২০ সালে ৭ জানুয়ারি ফতুল্লা থানা সোহাগ হত্যা ও পুলিশের উপর হামলা ঘটনার মামলায় দেওভোগ নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন জিকো খান। ওই সময় পলাতক জাকির খানের ছোট ভাই জিকু খানকে গ্রেফতারে আলোচনা সৃষ্টি হয়। গ্রেপ্তারের কয়েকদিন আগে দেওভোগের নিজ বাড়িতে জিকু খানের ঘরোয়া পরিবেশে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও মাদকসহ ডজনখানেক মামলাসহ ১৬ ডিসেম্বর পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় মামলা রয়েছে বলে জানান পুলিশ। তাছাড়াও ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলার আসামিও তিনি। একাধিক মামলায় ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি হয়েও দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন জিকু খান।
এবার আওয়ামীলীগ সরকার পতনের মাধ্যমে জাকির খানের পরিবার আবারো ক্ষমতা দাপটে রয়েছেন। তার মা বয়স্ক হলেও দেওভোগ এলাকার সিনিয়র নাগরিক হিসেবে সম্মাননায় রয়েছেন।
জাকির খানের বড় ভাই কবির খান দেওভোগ পোশাক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নেন। এ পদে মাত্র ১৫ মাস দায়িত্ব পালন করেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আরাফাত।
এদিকে জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) নারায়ণগঞ্জ সদর থানা সভাপতি হয়েছেন তাদের ছোট ভাই জিকো খান। প্রথম রাজনীতি দায়িত্ব নিয়ে গতকাল ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে শহরে শো-ডাউন করেছে। সদর থানা জাসাসের সকল ইউনিটের হাজারো নেতা-কর্মী নিয়ে শতাধিক মটর সাইকেল নিয়ে তিনি মিছিল বের করেন। মিছিলটি ২নং রেলগেইটস্থ বিএনপির কার্যালয় থেকে চাষাঢ়া শহীদ জিয়া হল প্রাঙ্গণে জাসাসের অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
উল্লেখ্য, জাকির খানের পিতা মরহুম দৌলত খান ছিলেন তৎকালীন টানবাজার পতিতালয়ের গডফাদার। ১৯৮৯ সালে জাতীয় ছাত্র সমাজে যোগ দিয়ে উত্থান ঘটে জাকির খানের। ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন এবং ফতুল্লার বিশাল বিসিকপল্লী তথা ঝুট সেক্টরে একক আধিপত্য কায়েম করেন তিনি। ১৯৯৫ সালে দেওভোগ এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে শহরের সোনার বাংলা মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে আলোচনায় উঠে আসেন এ শীর্ষ সন্ত্রাসী। টানবাজার ও নিমতলী পতিতালয়ে জাকির খান পরিবারের বেশ কয়েকটি বাড়ি ছিল। সে সময় পতিতাপল্লীর নিয়ন্ত্রণও ছিল তার হাতে। ১৯৯৬ সালে বিএনপি সরকারের শেষদিকে জাকির খান শহরের খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়ে জেলে যান। ১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য জেল থেকে বের হয়ে জাকির খান জেলা ছাত্রদলের সভাপতির পদটি পেয়ে যান। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মুন্সীগঞ্জে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে অস্ত্র হাতে মহড়া দিয়ে গুলিবর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হয়ে প্রায় ৫ মাস জেলে থাকেন জাকির খান।
সর্বশেষ ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিআরটিসির তৎকালীন চেয়ারম্যান তৈমুর আলম খন্দকারের ছোট ভাই ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। এ ব্যাপারে জাকির খান ও জিকো খানকে আসামি করে মামলা করেন তৈমুর আলম খন্দকার। এরপর সে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে যান। এরপর জাকির খান প্রথমে সিঙ্গাপুর ও পরে থাইল্যান্ডের সুকুমবিতে পালিয়ে যান। সেখানে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে গ্রেস নামের ৮ তলা একটি থ্রি-স্টার হোটেল ক্রয় করেন। পরে জাকির খান চলে যান দুবাই।
আপনার মতামত লিখুন :