রাজধানীর পাশের নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রেক্ষাপট হঠাৎ যেন এলোমেলো হতে শুরু করেছে। ৫ আগস্টের আগে সরকার পতনের জন্য এ নারায়ণগঞ্জ জেলা ছিল আন্দোলনের সূতিকাঘাড়। সাইনবোর্ড এলাকা ছিল কেন্দ্র বিন্দু। রক্তচক্ষু আর বুলেট উপেক্ষা করে এ জনপদের মানুষ ছিলেন আন্দোলনে। বৈপ্লবিক পরিবর্তনের পর সবকিছু যেন ক্রমশ ঘোলাটে শুরু করেছে। গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বিদ্বেষ মামলা অবধি গড়িয়েছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা, রাজনীতিবিদদের হুমকি এখন অহরহ ঘটনা। ব্যবসায়ী সংগঠনের কর্তৃত্ব নিয়ে বিরোধ, এটা নিয়েও পাল্টাপাল্টি বক্তব্য গত দেড় দশকে নারায়ণগঞ্জে দেখা যায়নি। অন্তত এ দিক দিয়ে এ শহর ছিল ঝঞ্ঝাটমুক্ত। সাম্প্রতিক ঘটনায় এখন বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এ শহরে কোন অভিভাবক নেই যার কথা কেউ শুনবে, মানবে। প্রশাসনও এ কারণে কিছুটা বিরক্ত। তারাও রয়েছেন মাঝখানে। যুদ্ধ চলছে পাল্টাপাল্টি।
শুরুটা ৫ আগস্টের পর থেকে। কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কয়েকটি থানায়। তখন থেকেই বিভক্তি। কেউ প্রতিবাদ জানিয়েছে, কেউ বলছে এটা প্রাপ্য ছিল। এ নিয়ে কিছুদিন চলার মধ্যে আরো একের পর এক মামলা যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রেস ক্লাবে যান জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন। তিনি ক্লাব গিয়েই গণমাধ্যমকর্মী ও প্রেস ক্লাবের সদস্যদের সামনে স্বৈরাচার দোসরদের চরমভাবে ভর্ৎসনা করে আসেন। এর পর কয়েকটি সমাবেশে হলুদ ও স্বৈরাচার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য রেখেছেন। সবশেষ তিনি ফতুল্লায় ৩ নভেম্বর বক্তব্য রাখেন যার প্রেক্ষিতে ৫ নভেম্বর ফতুল্লা প্রেস ক্লাব মানববন্ধন করতে যাচ্ছে। গিয়াসউদ্দিনের অভিযোগ এ ক্লাবে সম্পৃক্ত কেউ কেউ হলুদ সাংবাদিকতা করে। তবে তিনি মূলত বক্তব্যে স্বৈরাচারদের দোসরদের তির্যক মন্তব্য করেছে ছুড়েছেন। ফতুল্লা প্রেস ক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী ও অন্যতম নিয়ন্ত্রক বিএনপি নেতা রিয়াদ মুহাম্মদ চৌধুরীর সঙ্গে আবার গিয়াসের রয়েছে বিরোধপূর্ণ সম্পক।
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাব এখন আলোচনায়। প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষের দাবি, হামলাকারীরা দুর্বৃত্ত। তারা প্রেস ক্লাব দখল করতে এসেছিল। এ ঘটনায় তাদের পক্ষের ৫জন আহত হয়েছেন। অপর গ্রæপের দাবি, তারা সবাই নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকায় কর্মরত। প্রেস ক্লাবে সদস্য পদের বৈষম্য দূর করতে স্মারকলিপি দিতে গেলে তাদের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তাদের ৬ জন আহত হোন। গত ২৯ অক্টোবর দুপুর ১টায় এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতেই ১৪ জনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের পক্ষে ক্লাবের ম্যানেজার মো. মাসুম বিল্লাহ বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। বিপরীতে, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পত্রিকায় কর্মরত সাংবাদিকদের পক্ষে রাশেদুল ইসলাম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের ৬ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১২ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই দুই পক্ষ থেকেই পাল্টাপাল্টি বক্তব্য শোনা যাচ্ছে।
এ বিষয়টি নিয়েও সমঝোতার কেউ নাই। প্রেস ক্লাবে চেম্বার সভাপতি, বিকেএমইএ সভাপতি, জামায়াত ও বিএনপি নেতা, হেফাজত ও জমিয়ত নেতারা গিয়েছেন, যান সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও। কিন্তু কোন সুরহা হচ্ছে না। বরং দিন দিন জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। উভয় গ্রæপ একে অন্যের ছবি ফেসবুকে আপলোড করছেন যা নিয়ে সাধারণ মানুষ হাসাহাসি করছেন।
নারায়ণগঞ্জ চেম্বার ও বিকেএমএই নিয়েও আছে নানা সমালোচনা। চেম্বারের এজিএমের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের একটি গ্রুপ এর বিরুদ্ধে। তার পরেও এজিএম হয়েছে। কিন্তু বিতর্ক থামেনি। ৫ আগস্টের পর ৮ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়া হয়। চেম্বার সেই টাকা ফেরত এনেছিল দাবী করেন। কিন্তু কারা সেই টাকা নিয়েছিল নাম প্রকাশ করা হয়নি। এ নিয়েও আছে নানা সমালোচনা। একই পরিস্থিতি বিকেএমইএ নিয়ে। এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমকে নিয়ে প্রকাশ্যই কথা বলছেন গিয়াসউদ্দিন। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি।
নারায়ণগঞ্জ শহরেও কোন শৃঙ্খলা নাই। হকার বসছে ফুটপাতে আগের চেয়ে বেশী। অটো রিকশা ঢুকছে, বাড়ছে যানজট। অনুমোদন ছাড়াই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে কয়েকটি বাস চলাচল করছে। সবকিছুতেই বিশৃঙ্খলা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রেক্ষাপটে শহরে কিংবা জেলায় রাজনৈতিকভাবেও বিএনপিতে অস্থিরতা। বিভিন্ন সেক্টর নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, দখলবাজী নিয়ে মারামারিও হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কেউ কারো কথা শুনছে না।
আপনার মতামত লিখুন :