নারায়ণগঞ্জ বন্দরে কৃষি জমির সেচ প্রকল্পে চাঁদাবাজি করার সময় দুই ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতিকে পানিতে চুবিয়েছে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী। রোববার দুপুরে পিচকামতাল গ্রামের জহিদ্দার বিলে এ ঘটনা ঘটে।
এসময় চাঁদাবাজদের হামলায় এক মহিলা মেম্বার সহ ৫ জন রক্তাক্ত জখমের ঘটনায় গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। গণপিটুনির শিকার দুই বিএনপি নেতারা হলেন, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তারা মিয়া ও ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদ খন্দকার।
আহত সেচ প্রকল্পের মালিক আহাদ আলী বাদী হয়ে বিএনপি নেতা তারা মিয়া সহ ৭ জনের বিরুদ্ধে বন্দর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। বন্দর থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন এবং আহত গ্রামবাসীদের উদ্ধার হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সূত্রে জানা গেছে, বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউপির বাজুরবাগ এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে আমান উল্ল্যাহ দীর্ঘ দিন ধরে জহিদ্দার বিলে ইরি ধান জমিতে পানি সেচ করে আসছিল। তারপর থেকে বালিগাও গ্রামের হযরত আলী মিয়ার ছেলে যুবদল নেতা পরিচয়দানকারী পাপ্পু ও পিচকামতাল গ্রামের মৃত সায়েদ আলী মিয়ার ছেলে মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির বিতর্কিত সভাপতি তারা মিয়া সহ ১০/১২ জন আমান উল্লাহর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদাদাবি করে আসছিলেন। এর ধারাবাহিকতায় রোববার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে সেচ প্রদানকারী আমানউল্লাহর কাছে চাঁদা দাবি করে। এসময় আমান উল্লাহ চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পাপ্পু, বিএনপি নেতা তারা মিয়া, ফারুক, খালেক ও আব্দুর রহিম, হযরত আলী, ইউসুফ ও ধামগড় ইউনিয়ন বিএনপি সভাপতি জাহিদ খন্দকার সহ অজ্ঞাত নামা ২০/২৫জন দেশীয় অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমান উল্লাহর উপর হামলা চালায়।
আমান উল্লাহ প্রাণ রক্ষার্থে ডাক চিৎকারে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে তাদের উপর হামলা চালায়। এ হামলায় এক মহিলা মেম্বার লাভলী বেগম সহ কমপক্ষে ৫ জন গ্রামবাসী আহত হন। চাঁদাবাজদের হামলার ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তে কয়েকশত গ্রামবাসী জড়ো হয়ে চাঁদাবাজদের গণপিটুনি দেয়।
হামলায় আহতরা হলেন, সেচ প্রকল্পের মালিক আমান উল্ল্যাহ (৪০) ও তার স্ত্রী মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার লাভলী বেগম (৩৬) ছেলে সোহান (২১), আহাদ আলী ( ৫৫) ও ছেলে বাহাউদ্দীন (৩৫)। আহতদের উদ্ধার করে বন্দর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছেন পুলিশ ও স্থানীয়রা।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি তরিকুল ইসলাম বলেন, সেচ প্রকল্প নিয়ে চাঁদা দাবি ও মারামারির ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত পূর্বক আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
মুছাপুর ইউনিয়নের ৪,৫,৬ নং ওয়ার্ডের নারী সদস্য লাভলী বেগম জানান, বিগত দিনে তুফানে সেচ প্রকল্প এলাকায় খুঁটি ভেঙ্গে গিয়ে ছিল। তো সেটা ঠিক করতে হবে। উনি এটা ঠিক করার ব্যবস্থা করেছে। এরমধ্যে তারা এসে ৫ লাখ টাকা চাঁদাদাবি করেছে। আমি এই এলাকায় মেম্বার আমি সেখানে গিয়েছি। তারা আমাকেও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে। এতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকে প্রতিরোধ করেছে, তারা মিয়া, ফারুক, পাপ্পুকে পানিতে চুবিয়েছে।
অন্যদিকে অপরপক্ষের দাবি ফসলি জমি কাটতে বাধা দেওয়ায় এই হামলা চালানো চালানো হয়েছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষ বন্দর থানায় পৃথক দুটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
তারা মিয়া গণমাধ্যমকে জানান, দীর্ঘ ১৫ বছর যাবত মুছাপুর ইউনিয়নের জহিদ্দা বিলের ফসলি জমি মাটি কেটে বিক্রি করে আসছে বাজুরবাগ এলাকার মৃত তমিজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে আমান উল্ল্যাহ বালিগাও এলাকার আদম আলী মিয়ার ছেলে আহাদ আলী ও বাঙ্গালবাড়ী এলাকার তমিজ উদ্দিন মিয়ার ছেলে বাহাউদ্দীন গং। রোববার সকালে আমার জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়ার সময় আমি বাধা প্রদান করলে ওই সময় ভূমিদস্যুরা আমাকে হত্যার জন্য গুলি বর্ষণ করে। আমি প্রাণ রক্ষার্থে পুকুরে পরে যাই। সন্ত্রাসী হামলায় আমি ও পাপ্পুসহ ৪/৫ জন আহত হই। ভূমি সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে আমাদের উপর হামলা করে। এ ব্যাপারে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম জানান, অভিযোগ দুইটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :