২নং গেইট থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত আসতেই এখন সময় লেগে যায় ৪৫ মিনিট। রাতে তো এই পথে চলাফেরা আরো দুষ্কর, তীব্র যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো নারায়ণগঞ্জ। এই শহর এখন শুধু জ্যামের শহর।
রাস্তায় ব্যাটারি গাড়ি ও রিকশার যানবাহনের পরিমাণই অর্ধেকের বেশি। অপরিকল্পিতভাবে চলছে ব্যাটারি গাড়ির ব্যবস্থাপনা।
যেহেতু নারায়ণগঞ্জ বিশাল শিল্প এলাকা এবং প্রাচ্যের ডান্ডি হিসেবে পরিচিত, স্বাভাবিকভাবেই এখানে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর বসবাস। কমবেশি বাংলাদেশের সব জেলার মানুষেরই জীবন জীবিকার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূমিকা অন্যতম। সেক্ষেত্রে আমাদের রাস্তাঘাটের অবকাঠামো যেভাবে গড়ে উঠা দরকার ছিল ঠিক সেভাবে গড়ে উঠেনি।
এই বৃহৎ শিল্প এলাকার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য নারায়ণগঞ্জ শহরের অপ্রতুল সড়ক ব্যবস্থা এখন আমাদের সব থেকে বড় অন্তরায়।
আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের উপলব্ধি, এই অসহনীয় জ্যাম থেকে খুব সহসাই আমরা মুক্তি পাবো না। এরজন্য প্রয়োজন বেশ কিছু স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা। নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী থেকে বেশকিছু মতামত এবং সুপারিশ যানজট নিরসনের জন্য তাদের মত প্রকাশ করে আসছেন। যেগুলো বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় যথেষ্ট কার্যকর।
সেখানে আমার ছোট্ট একটা মতামত,
নারায়ণগঞ্জের যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোর সংখ্যা পর্যোলোচনা করা, গাড়ির স্ট্যান্ডগুলো নির্দিষ্ট করে এবং নারায়ণগঞ্জের ট্রেনের সার্ভিস উন্নত করে তার পরিধি বৃদ্ধি করা। অটো রিকশাগুলোকে এলাকাভিত্তিকভাবে নির্দিষ্ট করে দেওয়া।
অবৈধ যানবাহন অটো রিকশা থেকে বাস সবকিছুই নারায়ণগঞ্জ শহরে বহুবছর ধরে চলে আসছে। এগুলোর সাথে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা নির্ভরশীল। তাই ঢালাওভাবে এদের অপসারণ কখনো যোক্তিক হবে না। তাই নারায়ণগঞ্জ প্রশাসন, সিটি করপোরেশন এবং নারায়ণগঞ্জের সকল নাগরিক কমিটি এবং সুধী সমাজের সবাইকে নিয়ে কার্যত একটা দিক নির্দেশনা দেওয়া বর্তমান সময়ে বিশেষভাবে জরুরি। আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করছি, আমাদের সকলকে এখন একত্রিত হয়ে এই সমস্যার সমাধান করা নারায়ণগঞ্জবাসী হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।
এই শহরে আমার, আমাদের একটা স্বপ্ন
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। অপরুপ সুন্দর নদীর অববাহিকা। নারায়ণগঞ্জের চারপাশে ঘিরে আছে নদী। আমাদের নারায়ণগঞ্জ শহরের মানুষ সম্পূর্ণভাবে এই নদীর তীরের মুক্ত বাতাসের আলিঙ্গন থেকে বঞ্চিত।
নারায়ণগঞ্জের শিল্প এবং মানুষের উন্নয়নের গতিশীলতা বাড়াতে এই শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন অপরিহার্য। আমাদের নদীর তীরে গড়ে উঠেছে অনেক শিল্পকারখানা। সেগুলোকে সুপরিকল্পিতভাবে গঠন রেখে যদি নদীর তীর ঘেঁষে নতুন সড়ক গড়ে তোলা যায়, এখানে নারায়ণগঞ্জের বিশাল একটা সড়কপথ গড়ে উঠবে। যেটা একদিক দিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরের অভ্যন্তরীণ রোডের উপর নির্ভরশীলতা কমে যাবে এবং সাথে সাথে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য বসবাসের উপযোগী একটা স্বপ্নের শহর গড়ে উঠতে সহায়ক হবে।
আসুন আমরা সবাই মিলে আমাদের নারায়ণগঞ্জকে একটা সুস্থ, সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের শহরে পরিণত করি।
লেখক : আমেরিকা প্রবাসী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মহানগর বিএনপি।
আপনার মতামত লিখুন :