বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যা ১৭,২৯,৫৪,৩১৯ জন। এর মধ্যে ৫,৩৮,২৩,৬৫২ জন শিশু-কিশোর অর্থাৎ ১৮ বছরের নিচে। যা আমাদের জন্য একটি সুসংবাদ হতে পারতো। প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিছনে সে দেশের জনসংখ্যা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যে দেশের জনসংখ্যা যত বেশি সেই দেশের অর্থনৈতিক চাকা ততো মজবুত।
তবে আমাদের দেশের এই জনসংখ্যা আমাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ না হয়ে বরং অভিশাপে পরিণত হয়েছে। কেননা আমাদের দেশের এই জনসংখ্যা কেবলমাত্র সংখ্যা হয়েই পড়ে রয়েছে, জনসম্পদে পরিণত হয়নি। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি বাদ দিলেও আমাদের ভবিষ্যৎ আরো ভয়ানক হতে যাচ্ছে। কারণ যারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বা বর্তমান শিশুদেরকে আমরা সঠিক ভাবে পরিচর্যা করছি না।
দেশে প্রায় কয়েক ৯ লাখ সুবিধা বঞ্চিত শিশু কিশোর রয়েছে। যারা নূন্যতম মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ওদের ভাষ্যমতে, ‘যেখানে তিন বেলা খাবার জোগাড় করতেই পারি না, সেই জায়গায় পড়ালেখা বিলাসিতা।’ অথচ এই এক একটি শিশু আগামীর বাংলাদেশ এর হাল খুব মজবুতভাবে ধরতে পারতো। আমাদের শহর, নারায়ণগঞ্জেও অনেক সংখ্যক পথশিশু রয়েছে।
সামাজিক সংগঠন ‘স্বপ্নবাজ’র মাধ্যমে এই পথশিশু দের নিয়ে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। তখন খুব কাছ থেকে এদের দূরাবস্থা দেখে রীতিমতো শিউরে উঠেছি। যে শিশুর হাতে বাংলা গদ্যের বই থাকার কথা সেই শিশুর হাতে এখন থাকে নেশাদ্রব্য। নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে থাকা চৌদ্দ বছরের কিশোরী ছয় মাসের বাচ্চার মা! আর সেই কিশোরী মায়ের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হচ্ছে ওর শিশু একটু বড় হলে ওকে ভিক্ষাবৃত্তি শিখাবে৷
আমাদের পাশের দেশ ভারতে একজন কিশোরী এখন চাঁদে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। শঙ্কার বিষয় হচ্ছে এই পথশিশু গুলো সুষ্ঠু পরিচর্যার অভাবে চুরি, ছিনতাই এর মতো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছে৷ ওদের এভাবে বেড়ে ওঠা কেবল ওদের জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং আমাদের সকলের জন্য হুমকি স্বরূপ। কারণ এরা পর্যাপ্ত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার অভাবে বড় হচ্ছে। পরবর্তী সময়ে এদের অপরাধী হয়ে উঠা খুবই স্বাভাবিক।
আমরা কেউই চাইবো না আমাদের আজকের শিশু আগামীর দেশের সম্পদ হিসেবে বেড়ে ওঠার পরিবর্তে চোর, সন্ত্রাসী অথবা দেশের বোঝা হয়ে উঠুক। তাই সময় থাকতে আমাদের এবং আমাদের শহরের কর্তৃপক্ষের এই বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত।
লেখক : তানজিনা আক্তার নিশাত স্বপ্নবাজ সংগঠন (প্রতিষ্ঠাতা), বি.বি.এ (নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজ)
আপনার মতামত লিখুন :