নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট এখন তীব্র আকারে রূপ নিয়েছে। যানজটে স্থবির হয়ে পড়ে পুরো শহর। থমকে থাকে যানবাহন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে থাকতে হচ্ছে। এ অবস্থায় শহরে যানজট কমিয়ে আনতে নানা প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন।
৩০ জানুয়ারি সকালে জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, যানজটে অনেকগুলো ইস্যু আছে। অনেক ডিপার্টমেন্ট জড়িত আছে। আমরা কিন্তু একটা লিমিটেড জায়গা নিয়ে কাজ করি। আমাদের একটা ফরম্যাটের মধ্যে কাজ করতে হয়। আমরা চাইলেই কিছু নতুনভাবে চাপিয়ে দিতে পারি না। এখানে ইজিবাইক অন্যতম সমস্যা। যদি এই ইজিবাইকগুলোকে মূল পয়েন্টগুলো থেকে ঘুরিয়ে দিতে পারি এবং ইজিবাইকগুলোকে যদি রোড অনুযায়ী কালার নম্বর করে দিতে পারি তাহলে একটা ভালো ফলাফল পেতে পারি। আগামী ৭ দিনের মধ্যে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইজিবাইকগুলোতে রঙ করতে হবে। তাহলে লাইসেন্সের ইজিবাইকগুলো আলাদা করা যাবে। যদিও আপনারা (বক্তারা) বলছেন ১৮ হাজার ইজিবাইক শহরে আর সিটি করপোরেশন বলছে, ৮ হাজার ইজিবাইকে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।
বাস মালিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চাষাঢ়া মোড়ে যাত্রী উঠানোর নামে প্রতিযোগিতা করে। এতে দুর্ঘটনারও শিকার হয়। যাত্রী কেন রাস্তা থেকে উঠাতে হবে? বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রী উঠাতে হবে, নাহলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে প্রশাসন। রাত দশটার পরে শহরে ট্রাক ঢুকবে।
মীর জুমলা সড়ক ও শায়েস্তা খাঁ সড়ক দুইদিনের মধ্যে মুক্ত করতে সিটি কর্পোরেশনকে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেন ডিসি। একইসাথে রাস্তা ও ড্রেনের কাজ দ্রুত শেষ করার কথা বলেন তিনি।
পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন,নারায়ণগঞ্জে ১৮০০ পুলিশ দিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। আমি নারায়ণগঞ্জে আসার পর ৫৫জন ট্রাফিকে এড করেছি। অনেক কিছুই বলা যায় কিন্তু বাস্তবে করা আসলে কঠিন। চাষাঢ়ায় ৫০ হাত রাস্তা ঠিক করা হয় না। অথচ শুনি অনেক কোটিপতি নাকি এখানে থাকে। ৫০ হাত রাস্তার জন্য অনেক যানজটের সৃষ্টি হয়। রাস্তাঘাট ভাঙচোরা এসব আগে ঠিক করতে হবে। পুলিশ নিয়ে খারাপ ২টা অভিযোগ হলো পুলিশ খারাপ ব্যবহার করেছে ও পুলিশ চাঁদাবাজি করছে। অবৈধ যানবাহন আটকে জরিমানা করলে বলবেন চাঁদাবাজী আবার শাস্তি দিলে বলবেন অমানবিক। পুলিশ কোথায় যাবে। আমি চ্যালেঞ্জ করে বললাম, আমাদের পুলিশের কাউকে যদি হাতে নাতে চাঁদা দেখাতে পারেন, আমি যদি তাকে সাসপেন্ড করে বাড়ি না পাঠাতে পারি তাহলে আমি এসপিগিরি ছেড়ে দিবো।
ফুটপাত নিয়ে বলেন, চাইলেই ফুটপাতগুলো একেবারে উঠানো যাবে না। এখন হঠাৎ ফুটপাত উঠাবেন কাল দেখবেন সে আপনার ব্যাগ ছিনতাই করছে। তখন ছিনতাই বাড়বে। তাই পর্যায়ক্রমে সব করতে হবে।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু একই সুরে চাষাঢ়ায় অবস্থিত রাইফেল ক্লাব, বাইতুল আমান ভাঙার পরামর্শ দেন।
এর মধ্যে রফিউর রাব্বি যোগ করে পুলিশ ফাঁড়ি এবং ডাক বাংলো অবশ্যই ভাঙা তাগিদ দিয়ে বলেন, এগুলো বাস্তবায়ন না হলে শহরের যানজট সমস্যার কোনো সমাধান সম্ভব নয়।
মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, আগে অটো রিকশাগুলোর কিছুটা নিয়ন্ত্রণ ছিল। শহরের প্রবেশমুখগুলোতে প্রশাসনের লোকেরা বসে এসব রিকশা নিয়ন্ত্রণ করতো। তবে এখনো এই রিকশাগুলো নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, যদি প্রশাসন তাদের অবস্থান ঠিক রাখে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা মঈনউদ্দিন আহমদ বলেন, যানজটমুক্ত করতে হলে শহরে কোনো বাস প্রবেশ করতে না দিয়ে, আর্মি যে জায়গায় দোকান ভাড়া দিয়েছে, সেই জায়গায় বাস মালিকদের ভাড়া দিতে হবে।
জাতীয় নাগরিক কেন্দ্রীয় কমিটির সদর থানা প্রতিনিধি আহমেদুর তনু বলেন, মুন্সিগঞ্জ যেতে হলে মন্ডলপাড়া দিয়ে ঢোকা এবং বের হওয়া, আর ঢাকায় যাওয়ার জন্য তিনটি পথের মধ্যে চাষাঢ়া এবং আদমজী দিয়ে যাওয়ার রাস্তা রয়েছে। যদি সিএনজি গুলোকে এই মোড়ের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া যায়, তাহলে শহরের ভিতরে যানবাহন আসতে পারবে না।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সাকিব আল রাব্বির সঞ্চলনায় উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হুসাইন, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সচিব নূর কুতুবুল আলম, সেনাবাহিনীর পক্ষে ক্যাপ্টেন মাহফুজ, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহবায়ক রফিউর রাব্বি, মহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ, মহানগরমহানগর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমীর মাওলানা মঈনুদ্দিন আহমেদ, মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি মাওলানা দীন ইসলাম, মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণঅধিকার পরিষদ মহানগরের সাধারণ সম্পাদক রাহুল আরেফিন, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিন আহম্মেদ, বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. রওশন আলী সরকার, জাতীয় নাগরিক কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. শওকত আলী, সদর থানা প্রতিনিধি আহমেদুর তনু প্রমুখ।
আপনার মতামত লিখুন :