ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ, যাত্রীদের দুর্ভোগ

রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশের মতো ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটেও এই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় অফিসগামী মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। সেই সাথে যে সকল শিক্ষার্থী নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় গিয়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে থাকেন তাদেরও ভোগান্তি শিকার হতে হয়েছে।

ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় মঙ্গলবার ২৮ জানুয়ারি সকাল থেকেই এই রুটে যাতায়াতকারী যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধের আগাম খবর না পাওয়ায় স্টেশনে এসেও বিকল্প পথে গন্তব্যে যেতে হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে সূত্র বলছে, বর্তমানে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ৮ জোড়া ট্রেন চলাচল করে থাকে। সেই সাথে প্রতিদিন প্রায় ২০ থেকে ৩০ হাজার যাত্রী এই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে যাতায়াত করে থাকে। যাদের মধ্যে বিভিন্ন অফিসগামী লোকজন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ রয়েছে। অনেকেই আছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় গিয়ে অফিস করেন আবার অনেক ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ এসে অফিস করেন।

সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া রেস্টশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশন মাস্টারের কক্ষে তালা ঝুলছে। সেই সাথে যাত্রীরা স্টেশনে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আর কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনে স্টেশন মাস্টার আসলেও গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শকের (টিটিই) দেখা মিলেনি। শীতলক্ষ্যা নদীর অপাড়ের যাত্রীরা এসে ফিরে যাচ্ছেন।

সীমান্ত নামে এক যাত্রী তার স্ত্রীকে নিয়ে এসেছেন স্টেশনে। তার গন্তব্য সিরাজগঞ্জ। তিনি নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় ট্রেনে করে যাবেন। এরপর ঢাকা কমলাপুর স্টেশন থেকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশ্য রওয়ানা দিবেন। কিন্তু প্রথমেই তাকে ধাক্কা খেতে হয়েছে। তিনি বলেন, আমি জানতাম না ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রার শুরুতেই আমাকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। এখন জানিনা সিরাজগঞ্জ কিভাবে যাওয়া হবে।

তাহমিনা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি ঢাকার একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। প্রতিদিনই ট্রেনে করে যাতায়াত করে থাকি। কারণ ট্রেনে যাতায়াত আমার জন্য সাশ্রয় হয়ে থাকে। আজ এসে দেখি ট্রেন নেই। এখন হয়তো দিগুণ ভাড়া বহন করে বিকল্প পথে যাতায়াত করতে হবে।

নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম বলেন, স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে সকাল থেকেই ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকে কোনো ট্রেন আসেনি এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে কোনো ট্রেন যায়নি। কতক্ষণ সময় ধরে এই কর্মবিরতি চলে তা জানা নেই।

এর আগে গত বুধবার চট্টগ্রামে পুরোনো রেলস্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ২৭ জানুয়ারির মধ্যে দাবি মানার শর্ত দেয় রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন। অন্যথায় ২৮ জানুয়ারি থেকে রেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দেয় তারা।

এই রানিং স্টাফরা হলেন গার্ড, ট্রেনচালক (লোকোমাস্টার), সহকারী চালক ও টিকিট পরিদর্শক (টিটিই)। তাঁরা সাধারণত দীর্ঘ সময় ট্রেনে দায়িত্ব পালন করেন। দৈনিক আট ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন তাঁরা। এ ছাড়া অবসরের পর বেসিকের সঙ্গে এর ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। তবে ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর এই সুবিধা সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়।