News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১

অসময়ের দশ ফোঁড়


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২৫, ১১:১৯ পিএম অসময়ের দশ ফোঁড়

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর বেলায় সকলেই যেন সুযোগের সদ্বব্যবহার করছেন। মেয়র থাকাকালিন সময়ে কেউ তার কথা না বললেও মেয়র পদ ছাড়ার সাথে সাথে সকলেই যেন তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

সেই সাথে নানাভাবে তাকে আটকানোর চেষ্টায় রয়েছেন। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের নেতারাও তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছেন। অথচ মেয়র থাকাকালিন সময়ে সকলেই তার কাছের লোক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটাতেন।

সূত্র বলছে, দীর্ঘদিন ধরেই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ। আর এই আওয়ামী লীগের পুরো সময়কালিন সময়েই নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। সেই সাথে তিনি পুরো সিটি কর্পোরেশনজুড়েই নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড করেছেন।

এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। আর এই পতনের সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সহ দেশের বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর পদ বরখাস্ত করা হয়। ফলে দীর্ঘদিন ধরে রাখা নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের চেয়ার ছাড়তে হয় ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে।

আর এই চেয়ার ছাড়ার সাথে সাথেই আইভীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন পক্ষ সরব হয়েছেন। বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গা থেকে তার অবস্থান নিতে শুরু করেছেন।

সবশেষ গত ২৪ জানুয়ারি জুমআর খুতবার বয়ানে ডিআইটি রেলকলোনী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব আব্দুল আউয়াল বলেছেন, আইভী মেয়র থাকাকালিন সময়ে উনি উনার বাবার নামে পাঠাগার বানিয়ে ফুটপাত দখল করে নিয়ে গেলো। এটা কোন বৈধতা কোন আইনের ভিত্তিতে করছে? বুড়ো মানুষ এখানে উঠতে পারে না। এখানে সিড়ি বেয়ে উঠে তারপর অপাড়ে গিয়ে নামতে হয়।

তিনি আরও বলেন, আপনার মনগড়া মতো কুক্ষিগত করে আপনার ক্ষমতা আছে দেখে আপনি বানিয়ে ফেললেন কিন্তু মানুষের কষ্ট হচ্ছে সেটা চিন্তা করলেন না একবারও। বুঝা গেলো স্বার্থের বশীভূত হলে সবকিছু হালাল। মেয়র আইভী থাকাকালিন সময়ে নারায়ণগঞ্জের ফুটপাত পরিস্কার করার জন্য আন্দোলন করছে একপক্ষ বসাইতে চাইছে আরেকপক্ষ সড়াইতে গেছে বহুত কিছু। উনি ফুটপাত পরিস্কার করার কথা বলেন কিন্তু উনি উনার বাবার নামে পাঠাগার বানিয়ে ফুটপাত দখল করে নিয়ে গেলো। ফুটপাত বলতে নাই কিছু। ফুটপাত উনি দখল করেছেন। ড্রেন পর্যন্ত নেয়ার সুযোগ নাই। ড্রেন ঘুরিয়ে নিয়ে যেতে হয়েছে।

এর আগে মেয়র থাকাকালিন সময়ে ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী ডিআইটি মসজিদ নিয়ে কথা বলেছিলেন। সেই সাথে হেফাজত নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছিলো। সেটারই যেন এবার সুযোগের সদ্বব্যবহার করা হচ্ছে।

এদিকে আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের নীচতলার বারান্দার অবৈধ বর্ধিত অংশটি অপসারণ করা, ফুটপাতটি ছাত্র-ছাত্রী ও পথচারী চলাচলে উন্মুক্ত করা এবং নারায়ণগঞ্জের সার্বিক যানজট নিরসণের দাবীতে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। গত ১৮ জানুয়ারি সকালে চুনকা পাঠাগার চত্বরে ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের উদ্যোগে ওই মানবন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়।

মানববন্ধনে ‘আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী’ সংগঠনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নূর উদ্দিন আহমেদ বলেন, সিটি কর্পোরেশনের নির্মীয়মান প্রশস্থ ও গভীর নতুন ড্রেনটি ডিআইটি মার্কেট থেকে উত্তর দিকে চুনকা পাঠাগারে বাঁকা পথে এসে পাঠাগারের বারান্দার নীচে বিদ্যমান সরু ড্রেনের সহিত মিলিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যা ভবিষ্যতে প্রধান সড়কে জলজটের সৃষ্টি হবে। এমতাবস্থায় চুনকা পাঠাগারের নীচ তলার ফুটপাতের উপরে নির্মিত বারান্দার অবৈধ অংশটি অপসারণ করতে নতুন ড্রেনটি প্রশস্থ, গভীর ও সমান্তরাল নির্মাণ করে পথচারী ও ছাত্র ছাত্রী চলাচলে ফুটপাথটি উন্মুক্ত করার জোর দাবী জানাচ্ছি।

কিন্তু মেয়র থাকাকালিন সময়ে এই নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠন ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর কোনো সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস করেননি। বরং সবসময় আইভীর প্রতি নমনীয়তা ও তাকে সমর্থন দিয়ে আসছেন।

এর আগে গত ১৬ জানুয়ারি শান্তিময় ও নিরাপদ বাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের সাথে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট, অবৈধভাবে ফুটপাত দখল, মাদক, সন্ত্রাস, জেলার আইন-শৃঙ্খলা কমিটি গঠন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা সহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।

এই সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ বলেছেন, এখনও অনেক মামলার আসামী ঘুরাফেরা করছে। স্বৈরাচার সরকারের দোসররা মানুষের উপড় অত্যাচার নির্যাচন করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের হত্যা করেছে। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী তাদেরই একটি অংশ। তাহলে তাকে কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না। তাকে আইনের আওতায় এনে গ্রেফতার করা উচিত।

তার এই বক্তব্যের দুইদিন পরেই নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের সদস্য সচিব শাহেদ আহমেদ বলেন, নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাসের নামে কোনো কিছু থাকতে পারবে না। আমরা কথায় কথায় শুধু ওসমান পরিবার নিয়ে কথা বলি। ওসমান পরিবার সন্ত্রাস দুর্নীতিগ্রস্থ এটা সবাই জানে। নারায়ণগঞ্জের সুশীল সমাজ ওসমান পরিবারকে গডফাদার বানাতে গিয়ে আরেক গডমাদারের কথা বলে না। এক গডফাদারের কথা বলতে গিয়ে আরেক গডমাদারকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সেই গডফাদারের গ্রেফতারের দাবী করেছেন। নারায়ণগঞ্জে ফ্যাসিবাদের দোসর এখনও বিভিন্নভাবে পাঁয়াতারা করে যাচ্ছেন। কিছু সুশীল সমাজ আছে কিছু মিডিয়া আছে তারা প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে গডফাডারকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। নারায়ণগঞ্জের মাটিতে কোনো ফ্যাসিবাদের দোসর থাকবে না। গডফফাদার হোক আর গডমাদার হোক কোনো ফ্যাসিস্টদের দোসরকে প্রতিষ্ঠিত করতে দেয়া হবে না।

অথচ এই বিএনপি নেতারা ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী মেয়র থাকাকালিন সময়ে তার বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য রাখেননি। কিন্তু আইভী চেয়ার ছাড়ার সাথে সাথেই বিএনপির প্রায় সকল পর্যায়ের নেতারা যেন কথা বলতে শুরু করছেন।

Islam's Group