নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগার ফুটপাতের একাংশ দখল করে নির্মিত হয়েছে এটি বেশ পুরোনো খবর। নির্মানের পর থেকেই বিভিন্ন সময় এই বর্ধিত অংশ নিয়ে সমালোচনা করেছে শামীম ওসমান পন্থী আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদরা। এর বাইরে গণমাধ্যমের পাতায় সংবাদও হয়েছে ফুটপাত দখল নিয়ে।
তবে এসব সমালোচনার জবাবে আইভী থাকাকীন সময়ে সিটি করপোরেশন থেকে জানানো হতো, পাঠাগারটি নির্মাণশৈলীর কারণে ফুটপাত দখল করতে হয়েছে এবং বর্ধিত অংশটি উন্মুক্ত। পথচারীরা বর্ধিত অংশের উপর দিয়ে সিঁড়ির মাধ্যমে চলাফেরা করতে পারবেন। এরপর থেকে ঘোর আইভী বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা ছাড়া এনিয়ে তেমন কাউকে আপত্তি করতে দেখা যায়নি। উল্টো তার পক্ষে অবস্থান নিতে দেখা গেছে নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটি, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর মত সংগঠনগুলোকে।
কিন্তু সরকার পতন এবং আইভী অপসারণের পাঁচ মাস পরে হঠাৎ করেই আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর নেতারা সরব হয়েছেন চুনকা পাঠাগারের সামনের বর্ধিত অংশ অপসারণের জন্য। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে মেয়র পদে আইভী থাকাকালীন সময়ে যেই ব্যক্তিরা এই নির্মাণকাজের বিপরীতে টু শব্দটি করেননি। তাদের মুখে অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন এবং স্মারকলিপি প্রদান করতে দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই। কারণ, তাদের আপত্তি থাকলে আরও আগেই করতে পারতেন। বিশেষ এই সংগঠনের প্রায় সকল নেতাকর্মীই মেয়র আইভীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন।
আমরা নারায়ণগঞ্জবাসীর দাবি তোলার পর অনেকেই অবাক হয়েছেন। সচেতন নাগরিকরা বলছেন, ‘শহরের চাষাঢ়া থেকে মন্ডলপাড়া পর্যন্ত ফুটপাত কোন না কোন ভাবে দখল হয়ে আছে। এর মধ্যে রয়েছে হকার, দোকানের মালামাল, মোটরসাইকেল পার্কিং এমনকি রিক্সা ভ্যানও রেখে দেয়া হয়। কার্যত ফুটপাতের কোন সুবিধাই ভোগ করতে পারেননা নগরবাসী। ফুটপাত দখল হয়ে থাকার কারনে মূল সড়কে নেমে হাটাচলা করতে হয় পথচারীদের।
অন্যদিকে চুনকা পাঠাগারের সামনে যেই অংশটুকু রয়েছে তা সর্বদাই থাকে দখলমুক্ত। কয়েকটি সিড়ির মাধ্যমে উপরে উঠে আবার নেমে যাওয়া যাচ্ছে খুব সহজে। এখানে থাকেনা কোন হকার কিংবা দোকানের মালামাল। নির্বিঘ্নে চলাফেরার পরেও কেন আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের এমন দাবি তা বোধগম্য নয় অনেকের কাছে।
এদিকে লিখিত দাবিতে সংগঠনটি জানায়, ‘চুনকা পাঠাগারের বর্ধিত অংশের কারণে কলরব স্কুল, মর্গ্যান গার্লস এর ছাত্র ছাত্রী ও পথচারীদের চলাচল চরম ভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এই অবস্থায় সিটি করপোরেশনের ড্রেন নির্মাণ সোজা না হয়ে বাকা ভাবে নির্মিত হচ্ছে। যার কারণে যানজট বৃদ্ধি পাবে। আমরা বর্ধিত অংশ অপসারন করে ড্রেন সোজাভাবে নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় জনসাধারণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
চিঠির ভাষা পড়ে অবাক হয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন, ‘এই সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা বিগত ১৫ বছর আইভীর পাশে থেকে নানান কার্যক্রম করেছেন। কারও কারও মতে তারা সুযোগ সুবিধারও অংশীদার হয়েছেন। কিন্তু যখন ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো তখন কেন চাপ দিয়ে এই বর্ধিত অংশ অপসারনের দাবী জানাননি। এখন কেন আইভী অপসারণের পর এই দাবি করতে শুরু করেছেন!’
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘হঠাৎ করে চুনকা পাঠাগারের বর্ধিত অংশ অপসারণের দাবি স্বাভাবিক ভাবে দেখার সুযোগ নেই। নেপথ্যে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের ইঙ্গিত পাওয়া যেতে পারে। গত ১০ বছর যেই দাবী শামীম ওসমানের অনুসারীরা তুলতো, সেই একই দাবি এখন আইভীর ঘনিষ্ঠজনরা তুলছেন। যা প্রশ্নের উদ্রেগ ঘটায় স্বাভাবিক ভাবেই।’
আপনার মতামত লিখুন :