গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন ও মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে নারায়ণগঞ্জবাসীকে আগামী ১৭ নভেম্বর বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে অর্ধদিবস হরতাল পালনের জন্য আহবান জানান।
বিবৃতিতে তরিকুল সুজন বলেন, গত ২৬ অক্টোবর যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে নারায়ণগঞ্জের সকল রুটে বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করে। সংবাদ সম্মেলনে যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম পরিস্কারভাবে জানিয়েছি, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া ৪৫ টাকা করতে হবে। অন্য সকল রুটে যৌক্তিক বাস ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ পাস চালু করতে হবে। বিআরটিসি এসি বাস ভাড়া ৬০ টাকা এবং বেসরকারি এসি বাসের ভাড়া ৬৫ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
কিন্তু আমরা দেখলাম সংবাদ সম্মেলনের ১৪ দিন পার হলেও নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন আমাদের যৌক্তিক দাবি পাশ কাটিয়ে বাস মালিকদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিগত সরকারের সময়ে পরিবহন খাত ছিল ওসমান পরিবারের চাঁদাবাজির অন্যতম উৎস। যথেচ্ছভাবে ভাড়া বাড়িয়ে জনগণের দুর্ভোগ তৈরিতে স্থানীয় বিআরটিএ ও প্রশাসন সব সময় তাদের সাহায্য করেছে। শেখ হাসিনার সরকার জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে অযৌক্তিকভাবে কিলোমিটারপ্রতি গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করেছে।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সঙ্গে সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের পরিবহন সিন্ডিকেটের হর্তাকর্তারা দেশ ছেড়েছেন, কেউবা গা ঢাকা দিয়েছেন। দেশের পরিবর্তিত বাস্তবতায় এখন নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষের দাবি নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাসহ সব রুটের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করার । ২ এপ্রিল ২০২৪ বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ রুটে বাসভাড়া সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনটি মালিকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য হলেও সে প্রজ্ঞাপন মালিকপক্ষ মানেনি। তারা প্রজ্ঞাপনটির বাইরে গিয়ে বিগত ৭ মাস ধরে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। এটি বন্ধ করার জন্য জেলা প্রশাসন বা বিআরটিএর কোনো ভূমিকা নেই।
প্রজ্ঞাপনে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের দূরত্ব সাড়ে ১৯ কিলোমিটার দেখিয়ে (২ দশমিক ৩২ টাকা কিলোমিটার প্রতি) ভাড়া দেখানো হয় ৪৫ টাকা, ফ্লাইওভার টোল ৫ টাকা ও সানারপাড় ইউটার্ন ৩ টাকা দেখিয়ে বলা হয়, এই রুটে মোট ভাড়া ৫৩ টাকা। কিন্তু বাস্তবে নেওয়া হচ্ছে ৫৫ টাকা। এছাড়াও প্রজ্ঞাপনে মতিঝিল শাপলা চত্বর ঘুরে দূরত্ব দেখানো হয়েছে সাড়ে ১৯ কিলোমিটার। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, কোনো বাসই শাপলা চত্বর ঘুরে যাতায়াত করে না। হিসাবমতে বর্তমান দূরত্ব ১৭ কিলোমিটার। ৩০ আগস্ট সরকার ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১ দশমিক ৫০ টাকা এবং পরে শূন্য দশমিক ৫০ টাকা কমালেও ভাড়া কমানোর কোনো উদ্যোগ বিআরটিএ বা প্রশাসন গ্রহণ করেনি।
জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ এসব অসঙ্গতি জেনেও তা নিরসনে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়ার দীর্ঘদিনের দাবিও রয়েছে অমীমাংসিত। এমন বাস্তবতায় আমরা পরিস্কারভাবে দাবি জানাই, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ভাড়া ৪৫ টাকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে সব রুটে সিএনজি চালিত বাসের ভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমানো, শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া কার্যকর করা এবং এসি বাসে বিআরটিসি ৬০ টাকা ও বেসরকারি ৬৫ টাকা করতে হবে।
মহানগর কমিটির সমন্বয়কারী নিয়ামুর রশীদ বিপ্লব বলেন, আমরা বিশ্বাস করতে চাই নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক বাস ভাড়া কমানোর ব্যাপারে আন্তরিক। আমরা জেলা প্রশাসককে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বাস ভাড়া কমানোর সময় বেঁধে দিয়েছি। যদি ১৫ নভেম্বরের মধ্যে বাস ভাড়া না কমে তবে আগামী ১৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জ শহরে অর্ধদিবস হরতাল পালিত হবে। আমরা অন্তর্র্বতীকালীন সরকারকে সমর্থন করি। সুতরাং আমরা চাই না, এ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হোক এবং এই সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল পালিত হোক। জনগণের দাবির প্রতি আমরা আপোষহীন। সুতরাং যদি আমাদের যৌক্তিক দাবিকে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করেন, তার ফল ভালো হবে না। সুতরাং আগামী ১৫ নভেম্বরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসককে বাস ভাড়া কমানোর ঘোষণা দিতে হবে। অন্যথায় আগামী ১৭ নভেম্বর অর্ধদিবস হরতাল পালিত হবে।
আপনার মতামত লিখুন :