নারায়ণগঞ্জ শহর ও শহরতলীতে ভয়াবহ যানজটে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তিতে রয়েছে নগরবাসী। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত যানজট যেন অঘোষিত শাটডাউনে রূপ নিয়েছে। নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ পুলিশের তৎপরতা কম থাকার সুযোগে অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়েছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। শুক্রবার শনিবার ও অন্যান্য সময়ের ছুটির দিনেও বৈধ-অবৈধ যানবাহন সড়কগুলোতে যানজটে পূর্ণ থাকে। বিশেষ করে চাষাঢ়া গোলচত্বর থেকে ২নং রেলগেইট ও ফলপট্টি থেকে কালীরবাজার যানজট যেন নিত্যদিনের ঘটনা। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার পটপরিবর্তনের সুযোগে বিভিন্ন পরিবহনের বাস শহরে প্রবেশ, বাধাহীন ব্যাটারিচালিত রিক্সা, যেখানে সেখানে যাত্রী উঠানামা ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি সবমিলিয়ে সা¤প্রতিক সময়ে এই যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোনোভাবেই যেন এই যানজটকে নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না।
কয়েক কিলোমিটারের ছোট এই শহরে বিভিন্ন পরিবহনের রেজিস্ট্রিকৃত বাসের সংখ্যা রয়েছে ২৮৩টি। সেই সাথে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ঢাকা-নারায়ণঞ্জ রুটে নতুন করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তিনটি পরিবহনের বাস চালু করা রয়েছে। যাদের বাসের সংখ্যা প্রায় অর্ধশতাধিক। যেগুলো নিয়মিত ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে যাতায়াত করে। এর বাইরেও অনেক বাস রয়েছে। যাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
একই সাথে বৈধ ও অবৈধ ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার। যেগুলো আগে সচরাচর শহরে প্রবেশ করার সুযোগ পেতো না। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ট্র্যাফিক ব্যবস্থার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যখন তখন যেভাবে খুশি শহরে প্রবেশ করছে। পাশাপাশি মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, ট্যাংক লড়ী, ট্রাক, লেগুনা ও ট্রাক্টর তো রয়েছেই। তাদেরও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। যার কারণে শহরের রাস্তায় বের হলেই ৫ থেকে ১০ মিনিটের রাস্তায় সময় লাগছে ঘণ্টা পর ঘণ্টা।
শহরে বহুত ভবনগুলোতে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থাও একেবারেই নেই বলা চলে। রাস্তার পাশে বিশাল মার্কেট নির্মাণ করা হলেও সেগুলোতে পর্যাপ্ত গাড়ি পার্কিংয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর যেসকল মার্কেটগুলোর নিচে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেগুলোতে পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান, শো-রুম, রেস্টুরেন্ট ভাড়া দেয়া হয়েছে।
রুট পারমিট ও ফিটনেস বিহীন পরিবহন প্রসঙ্গে বিআরটিএ নারায়ণগঞ্জ সার্কেলের সহকারি পরিচালক (ইঞ্জি:) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের নিয়মিত মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনা করছি। ফিটনেস বিহীন ও রুট পারমিটহীন গাড়িগুলোকে মামলা দিয়ে ডাম্পিং ও জরিমানার আওতায় আনছি। আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে যানজট সমস্যার কারণে নগরবাসীকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ইতোমধ্যে শহরে অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি পর্যায়ক্রমে ফুটপাত হকারমুক্ত করা, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা, শহরে থাকা যানবাহন স্ট্যান্ডগুলো দূরে সরিয়ে নেওয়া হবে। অতি শীঘ্রই ভাঙ্গা সড়ক ও চলমান কাজগুলো মেরামত হলে অনেকটাই কমে যাবে এতটুকু বলতে পারি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বলেন, অবৈধ পরিবহণের ব্যাপারে আমাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সেই সাথে নারায়ণগঞ্জ শহরকে যানজটমুক্ত রাখার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
আপনার মতামত লিখুন :