ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে নন এসি বাসের ভাড়া ৪৫ টাকায় নামিয়ে আনা, শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত এবং অন্যান্য সকল রুটের বাসভাড়া যৌক্তিক পর্যায়ে কমিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছেন যাত্রী অধিকার ফোরামের নেতৃবৃন্দরা। মূলত ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের কাছে। আল্টিমেটামের মধ্যে দাবি না মানলে ১৭ নভেম্বর আধাবেলা হরতাল পালন করবে যাত্রী অধিকার ফোরাম সহ নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ।
ইতোমধ্যে এই দাবির বিষয়ে সমর্থন আদায় করেছে যাত্রী অধিকার ফোরাম। নিজেদের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ছাত্রদের কাছ থেকেও পেয়েছে সমর্থন। বাম ঘরানার দলগুলোর পাশাপাশি এই দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামি এবং ইসলামি আন্দোলন।
মূলত বাসের ভাড়া কমানোর দাবি অত্যন্ত ন্যায্য। বিগত আওয়ামী লীগ সরকার সাধারণ মানুষ বা যাত্রীদের পকেট থেকে অর্থ লুট করার জন্য বাসের ভাড়া নানান ছুতায় বাড়াতে সহযোগিতা করে আসছিলো। বাস মালিকদের বঞ্চিত করে নিজেদের কব্জায় মালিক সমিতির সিন্ডিকেট বসিয়ে অতিরিক্ত মুনাফা লুফে নিতো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এজন্য সরকারি ভাবেই ন্যায্যতার বেশি ভাড়া অনুমোদন করে দিয়েছিল। যার সুযোগ নিয়ে বছরের পর বছর হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার।
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, ‘নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলরত বন্ধন, উৎসব, বাঁধন, বন্ধু বাসের নিয়ন্ত্রণ করতো শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। প্রতিদিন মোটা অঙ্কের টাকা পৌঁছে যেত রাইফেলস ক্লাবে। বাস মালিক, শ্রমিক, চালক, হেলপার সবাই বঞ্চিত হতো। এবং কিছু পরিমাণ টাকা পৌঁছে যেত বিগত পুলিশের অসাধু কর্মকর্তাদের কাছেও। যার কারণে, দুই নম্বর রেলগেইটে বাস বঙ্গবন্ধু সড়কে প্রবেশমুখে দীর্ঘ সময় নিলেও তাতে পুলিশ কিছুই বলতো না। পুরো শহরে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে রাখতো এই বাসগুলো।
তবে সরকার পরিবর্তনের পর দাবি উঠে ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে গঠিত বাস ভাড়ার চার্ট বাতিল করে নতুন করে চার্ট তৈরি করতে। একই সাথে নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৪৫ টাকায় নিয়ে আসতে। কিন্তু এই দাবি মানতে নারাজ বাস নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত কিছু মালিকরা। কারণ, শামীম ওসমানের অনুসারীরা অর্থের ভাগ না পেলেও বর্তমানে অতিরিক্ত মুনাফা তারা নিজেরা করতে চায়। এছাড়া বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত কিছু ব্যক্তিও এই সুবিধা নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেই কারণে স¤প্রতি বন্ধন বাস দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
এমন পরিস্থিতিতে ৫৫ টাকা বাস ভাড়া যে বাড়তি মুনাফার পথ তা স্পষ্ট। যেই বাড়তি মুনাফা হাতিয়ে নিয়ে নতুন করে যেন কোন সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে না উঠে সেই লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছে যাত্রী অধিকার ফোরাম। যাত্রীদের কষ্টার্জিত অর্থ লুট করে লুটেরারা সম্পদশালী হবে এবং নারায়ণগঞ্জের সাধারণ মানুষকে ফের জিম্মি করবে তা চায় না কেউই। তবে এক্ষেত্রে প্রশাসনের পূর্ণ সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
সহযোগিতা না পেলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হরতাল পালন করে বাসের ভাড়া কমিয়ে আনতে বাধ্য করেছিলেন যাত্রী অধিকার ফোরামের কর্মীরা। সেই একই পথে হাঁটছেন তারা। ১৭ তারিখ হরতাল পালিত হলে এটি হবে নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম হরতাল। এমন পরিস্থিতিতে হরতাল পালনের পূর্বেই দাবি মেনে নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। তবে প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ও যাত্রী ফোরামের সরব আন্দোলন প্রমাণ করে নিশ্চিত হরতালের পথেই হাঁটছে বাস ভাড়া কমানোর আন্দোলন।
আপনার মতামত লিখুন :