ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ পরিবার গুলোর মধ্যে একটি ছিল নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবার। সেই পরিবারের আস্থাভাজনদের মধ্যে বাংলাদেশ ইর্য়ান মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে তাকে বন্দরের স্বজন হত্যা মামলায় আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। লিটন সাহা গ্রেপ্তার হলেও একই মামলার আসামি সুজিত সাহাকে এখনো গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
জানাগেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বন্দরের কুশিয়ারা এলাকার আবুল হাসান স্বজন নিহত হওয়ার ঘটনায় আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান সহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো ১৫০জনকে আসামি করে হত্যা মামলাটি দায়ের করা হয়। সেই মামলায় বাংলাদেশ ইয়ার্ন মাচেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি লিটন সাহার সাথে আসামির তালিকায় রয়েছে আমলাপাড়ার বাসিন্দা সুজিত সাহা।
১ নভেম্বর বিকেলে রাজধানী ঢাকার গুলশান এলাকা থেকে লিটন সাহাকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পরে তাঁকে ২ নভেম্বর আবুল হাসান স্বজন হত্যা মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে নারায়ণগঞ্জ আদালতে প্রেরণ করা হয়। আদালত লিটন সাহার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। একই মামলায় সুজিত সাহা আসামি হলেও এখন পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ১৭ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন এক সময় কাস্টমসে চাকরি করা সুজিত সাহা। নারায়ণগঞ্জে তিনি গডফাদার পরিবারের সাবেক এমপি শামীম ওসমান ও সেলিম ওসমানের লোক হিসেবেই পরিচিত। সাধারণ জনগণের মাঝে সুজিত সরকার খুব বেশি পরিচিত না হলেও নারায়ণগঞ্জের এলিট শ্রেণি ও গডফাদারদের দোষরদের কাছে বেশ পরিচিত ও আলোচিত নাম।
কাস্টমসে চাকরি করা সুজিত সাহা শামীম ওসমানের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ভাজন হওয়াতে সেখানে তার প্রভাব ছিল ব্যাপক। শুধু সুজিত সাহা একাই নন তার পরিবারের মোট ৪জন সদস্য কর্মরত ছিল কাস্টমসে। নিজের দুই জামাতার পরে ভাগিনাকে প্রভাব খাটিয়ে কাস্টমসে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন সুজিত সরকার।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনায় থাকা চাষাঢ়া বালুর মাঠ ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এলাকার জমিটি অত্যন্ত সুকৌশলে খালেদ হায়দার খান কাজলের সাথে রাজউক থেকে স্বল্প মূল্যে ক্রয় করে পরবর্তীতে তা পপুলার ডায়গনেস্টিক সেন্টারের কাছে বিক্রি করে দিয়ে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ১১কোটির অধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও সোনারগাঁও সহ বিভিন্ন স্থানে এমন বড় বড় জমি হাতিয়ে নিয়ে শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার গুঞ্জন রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমপি সেলিম ওসমানের স্নেহ ভাজন হওয়ায় নারায়ণগঞ্জে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে অনেক যোগ্যনেতা থাকার পরেও সুজন সাহাকে দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর যাবত লাঙ্গলবন্দ স্নান উদ্যাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বানিয়ে রেখেছেন। অথচ এই কমিটির কোন কার্যক্রমেই বিগত দিন গুলোতে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়নি সুজিত সাহাকে।
ওসমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ এই সুজিত সাহার কাস্টমসে চাকরি করার সুবাদে নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের অনুসারী অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসার আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে এই সুজিত সাহার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতো। ফলে খুব সহজেই কাস্টমস থেকে তাদের সুবিধা পাইয়ে দিত বলে অভিযোগা রয়েছে সুজিত সাহার বিরুদ্ধে। এসব ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ীর অনেক অনিয়মের সাক্ষী এই সুজিত সাহা। তাই সুজিত সাহাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওসমান পরিবারের অনুগত ব্যবসায়ীদের অনেক অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ী মহল।
আপনার মতামত লিখুন :