ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে বাস ভাড়া ৪৫ টাকা করার দাবীতে আন্দোলন করে আসছে যাত্রী অধিকার সংরক্ষন ফোরাম। তবে এই দাবী মানতে নারাজ বাস মালিকেরা। তাদের দাবী, ৫৫ টাকার নিচে বাসের ভাড়া কমানোর সুযোগ নেই। যদিও এই ভাড়া তারা নিচ্ছেন সরকারি চার্ট অনুযায়ী। তবে ফোরামের নেতৃবৃন্দরা বলছেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগ সরকার পরিবহন মাফিয়াদের চাঁদাবাজির সুযোগ করে দিতেই চার্টে বাড়তি ভাড়া নেয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আওয়ামী সরকারের চার্ট বাতিল করে নতুন করে ভাড়া নির্ধারণ করতে হবে।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ডিজেলের লিটার প্রতি দাম কমে নেমেছে ১০৫ টাকায়। যৌক্তিক কারণেই বাস ভাড়া কমানোর দাবী তুলছে যাত্রী অধিকার ফোরামের নেতৃবৃন্দরা। তবে চার্টের বাইরেও বাসের ভাড়া যে কমানো সম্ভব তা স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে নন এসি বাস মূলত দুটি কোম্পানির। একটি উৎসব, অপরটি বন্ধন। এই নামের ব্যানারে একাধিক মালিকের বাস রয়েছে। প্রতিটি বাসের ভাড়া এবং সিট সংখ্যা একই।
সরেজমিনে মালিক ও শ্রমিকদের কাছে খোজ নিয়ে জানা যায় ‘১ টি নন এসি বাস দৈনিক ১০ টি ট্রিপ (যাওয়া ৫ বার, আসা ৫ বার) দেয়। প্রতিটি বাসে সিটের সংখ্যা ৪৬ টি। ৫৫ টাকা করে বাসের ভাড়া আদায় করলে ৪৬ সিটে প্রতিবার আসা এবং যাওয়ায় বাসের আয় হয় ৫০৬০ টাকা। নন এসি এসব বাস ডিজেল চালিত। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাওয়া এবং আসায় ১২ থেকে ১৪ লিটার ডিজেল প্রয়োজন হয়। যার খরচ দাঁড়ায় ১২৬০ টাকা।
বাসগুলো আসা যাওয়ায় মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে টোল দেয় ৫২০ টাকা। এভাবে একটি বাস দৈনিক ১০ টি ট্রিপ দিলে মোট আয় করে ২৫ হাজার ৩০০ টাকা। ১০ ট্রিপে ডিজেল বাবদ ব্যয় হয় ৬৩০০ টাকা। ১০ ট্রিপে টোল বাবদ ব্যয় হয় ২৬০০ টাকা। বাসের চালককে দেয়া হয় ১০০০ এবং সহকারীকে দেয়া হয় ৬০০ টাকা। আওয়ামী লীগ আমলে সড়ক ও লাইনম্যানদের বিভিন্ন খাতে প্রতিটি বাস ১১০০ টাকা চাঁদা দিত। এই চাঁদা এখনও দিতে হয় কিনা তা অজানা। তবে আমরা যদি সেই খরচও যুক্ত রাখি তাহলে এসব হিসেব চুকিয়ে প্রতিটি বাসে অতিরিক্ত থাকে ১৩৭০০ টাকা। আওয়ামী লীগ আমলে একেকজন বাস মালিক ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার বেশী পেত না। বাস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা স্টাফদের পেছনে ২ হাজার টাকা খরচ শেষে বাকি ১০ হাজার টাকা শামীম ওসমানের লোকজন হাতিয়ে নিত।
প্রশ্ন উঠেছে প্রায় ১০ হাজার টাকা উদ্ধৃত থাকার পরেও কিভাবে বাস মালিক সমিতি দাবী করে তাদের লোকসান হচ্ছে। গাড়ির টায়ার, যন্ত্রাংশের খরচ বহন করতে হয় বাসের মালিককে। বর্তমানে এই ১০ হাজার টাকা কোথায় যায় তা প্রশ্ন সকলের সামনে।
যদি যাত্রী ফোরামের দাবী অনুযায়ী ৪৫ টাকা নন এসি বাসের ভাড়া নির্ধারন করা হয় তাহলে এই বাসগুলো ১০ টি ট্রিপে আয় করবে ২০ হাজার ৭০০ টাকা। সেই হিসেবে উদ্ধৃত থাকবে অন্তত ৮ হাজার টাকা। যা মালিক এবং বাস পরিচালনার দায়িত্বে থাকা স্টাফদের পেছনে ২ হাজার টাকা খরচ শেষেও ৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত থাকবে।
যাত্রী অধিকার ফোরামের অন্যতম নেতা তরিকুল সুজন বলেন, ‘আমরা অনেক আগে থেকেই বলে আসছি এই বাস পরিচালনার পেছনে মাফিয়া চক্র জড়িত ছিলো। যার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকা সাধারন জনগনের পকেট থেকে তা পৌছেছে রাইফেলস ক্লাবে। এখন সেই বাস অন্যরা পরিচালনা করে একই ভাবে টাকার ভাগ পেতে চায়। আমরা এই সিন্ডিকেট ভাঙ্গতে চাই। আমাদের সাথে বহু বাস মালিকও একাগ্রতা প্রকাশ করেছে। কারন তারাও এই টাকার ভাগ পায় না। অনেক বাস মালিক জিম্মি হয়ে আছে। ফলে নগরবাসীর স্বার্থে বাস ভাড়া কমানোর কোন বিকল্প নেই।
আপনার মতামত লিখুন :