গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পরেও নারায়ণগঞ্জ আদালতপাড়ার রাজনীতিতে ব্যাকফুটে বিএনপির একাংশের আইনজীবীরা। মুলত যারা বিএনপির সাবেক নেতা ড. তৈমূর আলম খন্দকারের অনুসারী ছিলেন এবং যারা সাবেক এমপি ও মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কালামের অনুসারী, আদালতপাড়ায় তাদের কোনো কর্তৃত্ব দেখা যাচ্ছেন। যদিও একই দশা সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দীনের গুটিকয়েকজন আইনজীবী থাকলেও তারা বেশ বেকায়দায় কোর্টপাড়ার রাজনীতিতে।
কোর্টপাড়ায় একচ্ছত্র ছড়ি ঘুরাচ্ছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান ও সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপুর অনুগামীরা। যে কারনে তৈমূর ও কালাম অনুগামীরা অপেক্ষায় আছেন মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্তির। মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হলেই ঘুরে দাঁড়াবেন ব্যাকফুটে থাকা এসব আইনজীবী নেতারা। যদিও কোর্টপাড়ায় কখনই গিয়াসের খবরদারী ছিল না। ৫ আগস্টের পর আইনজীবী সমিতির নির্বাচন ও পিপি জিপিদের তালিকা নিয়ে সাখাওয়াত ও টিপুর প্রতি তাদের অনুগামী অনেক আইনজীবীরাও নারাজ। ফাটল ধরেছে সাখাওয়াত বলয়েও।
আদালত সুত্রে, বরাবরেই মতই আদালতপাড়ার রাজনীতিতে আবুল কালাম বলয়ে স্টান্ডবাই আছেন সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট নবী হোসেন, অ্যাডভোকেট বিল্লাল হোসেন, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মোল্লা ও কালাম কন্যা সামসুন নূর বাঁধন। তৈমূর আলম খন্দকার বিএনপির রাজনীতিতে না থাকার কারনে তার অনুগামীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। কোর্টপাড়ায় তৈমূর অনুগামী হিসেবে পরিচিত ছিলেন অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান খান খোকা, অ্যাডভোকেট বোরহান উদ্দীন সরকার, অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মোল্লা, অ্যাডভোকেট আজিজ আল মামুন, অ্যাডভোকেট শাহ মাজহার, অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম খান রেজা, অ্যাডভোকেট গোলাম হোসেন, অ্যাডভোকেট মাসুদ কবির খান খোকন, অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী, অ্যাডভোকেট আশরাফুল আলম সিরাজি রাসেল, অ্যাডভোকেট একেএম ওমর ফারুক নয়ন, অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম মাসুম, অ্যাডভোকেট নূরুল আমিন মাসুম, অ্যাডভোকেট এসএম গালিব, অ্যাডভোকেট শহীদ সরোয়ার ও অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম শিপলুর মত অনেক আইনজীবী।
তৈমূর আলম বিএনপির রাজনীতিতে সরে যাওয়ার পর উপরোক্ত এসব আইনজীবীদের অনেকেই কালাম বলয়ে, কেউবা সাখাওয়াত বলয়ে গিয়ে রাজনীতি করেছেন। আজিজুর রহমান মোলা, একেএম ওমর ফারুক নয়ন সাখাওয়াত বলয়ে গিয়েছেন অনেক আগেই। যদিও আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সাখাওয়াতের উল্টো ধমক হুমকি ধমকি পেয়েছেন নয়ন। আজিজুর রহমান মোলা সাখাওয়াত বলয়ে গিয়ে অতিরিক্ত পিপির পদটি ভাগিয়ে নিয়েছেন। গিয়াস ও সাখাওয়াত বলয়ে পা দিয়ে আইনজীবী সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতির পদটি ভাগিছেন আজিজ আল মামুন। তৈমুর অনুগামী হিসেবে পরিচিত থাকায় রেজাউল করিম খান রেজা, এসএম গালিব ও নজরুল ইসলাম মাসুমকে নির্বাচনেই দাঁড়াতে দেয়নি সাখাওয়াত পন্থী আইনজীবীরা। উল্টো তাদের অনেকেই লাঞ্ছিত করা হয় নির্বাচনের পূর্বে।
সাখাওয়াতের জুনিয়র ছিলেন শহীদ সরোয়ার। করোনাকালে এই শহীদ সরোয়ার সাখাওয়াতের চেম্বারে লোকজন নিয়ে ঢুকে বেদম পিটুনি দেন। সেদিন সাখাওয়াত চোখে মুখে মারাত্মক রক্তাক্ত জখমী হোন। তৈমূরের জুনিয়র অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী ভুঁইয়া এখন ধমে ধমে তৈমূরকে গালিগালাজ করেন। অথচ তৈমূর আলমের হাত ধরে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন কুমিল্লা থেকে আসা আব্দুল বারী ভুঁইয়া। তৈমূর আলমের সমর্থনে সমিতির সভাপতিও হয়েছেন তিনি। গেল দুই বছর ধরে তিনি জেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি গিয়াসের বলয়ে নাম লিখিয়েছেন।
এদিকে কোর্টপাড়ায় একক কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ করছেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সরকার হুমায়ুন কবির, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এইচএম আনোয়ার প্রধান, পিপি অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ জাকির ও স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মোল্লা। এরা সাখাওয়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করলেও বর্তমানে সাখাওয়াতের খবরদারীর বাহিরে চলে গেছেন এরা।
অন্যদিকে কোর্টপাড়ার রাজনীতিতে ব্যাকফুটে থাকা আইনজীবীরা চাচ্ছেন যে করেই হোক মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙ্গে গেলে কোর্টপাড়ার রাজনীতিতেও নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাবেন তৈমূর ও কালাম অনুগামী হিসেবে পরিচিত আইনজীবীরা। নারায়ণগঞ্জ আদালতে বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তৈমূর। আইনজীবী ফোরামের পূর্বে প্রত্যয় নামক সংগঠনের মাধ্যমে কোর্টপাড়ায় বিএনপিকে প্রতিষ্ঠিত করেন তৈমূর। পরবর্তীতে আইনজীবী ফোরাম গঠন করেন তৈমূর। এভাবে বিএনপির রাজনীতি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়। যে কারনে এখানকার বিএনপির সকল সিনিয়র আইনজীবীরা এক সময় তৈমূর আলম খন্দকারের কর্মী ও অনুগামী ছিলেন। বর্তমানের সাখাওয়াত ও বারী ভুঁইয়া ছিলেন তৈমূর আলমের সরাসরি জুনিয়র। হুমায়ুন কবির, জাকির হোসেন, খোরশেদ মোল্লাসহ প্রায় সকলেই তৈমূর আলমের কর্মী ছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :