নারায়ণগঞ্জের আলোচিত হত্যাকান্ড ব্যবসায়ী সাব্বির আলম খন্দকার হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামী জাকির খানের পক্ষে আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ নভেম্বর) নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতের বিচারক মো. মোমিনুল ইসলামের আদালতে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়।
এদিন প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা সময় ধয়ে এই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলে। পরবর্তীতে আদালতের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আবার ২৭ নভেম্বর নভেম্বর আসামী পক্ষের আইনজীবী যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। সাক্ষীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে জব্দ তালিকার বিচার বিশ্লেষণ করা হবে। সেই সাথে বাদীপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন। পরবর্তীতে মামলায় রায়ের দিন ধার্য করা হবে।
সাব্বির হত্যা মামলায় এই মামলায় ৫৪ জন সাক্ষীর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২১ জনের সাক্ষী হয়েছে। ২১ জনের সাক্ষীর মধ্যে ১৮ জনের সাক্ষীর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এর আগে উচ্চ আদালত থেকে ২৫ নভেম্বরের মধ্যে মামলাটি নিষ্পত্তি করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। সেই নির্দেশনার প্রেক্ষিতেই মামলাটির বিচার কার্যক্রম বর্তমানে শেষ পর্যাযে রয়েছে।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. রবিউল হোসেন বলেন, সাব্বির আলম খন্দকার হত্যা মামলায় জাকির খানকে জড়ানো হয়েছে। যেখানে জাকির খান ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং দেশেও ছিলেন না। যুক্তিতর্ক শুনানী চলছে। আমি জাকির খানের পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী হিসেবে সাড়ে ৪ ঘণ্টা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। আমার আসামী নির্দোষ এবং কেন খালাস পাবেন সে বিষয়গুলো আদালতে উপস্থাপন করেছি। সময়ের কারনে যুক্তিতর্ক শেষ হয়নি। বুধবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবো।
তিনি আরও বলেন, বাদীর বক্তব্য এবং বাদীর যে সাক্ষ্য দিয়েছে তার সারমর্ম হলো শূন্য। এজাহার শূন্য। উনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য নিজেকে রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জাকির খানকে মাইনাস করার জন্য এই মামলায় জাকির খানের নাম দিয়েছেন। আমরা সব আদালতে উপস্থাপন করেছি। আজ ১৮ জন সাক্ষীর বিচার বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বাকী সবাই তদন্তকারী কর্মকর্তা।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট খন্দকার আজিজুল হক হান্টু বলেন, সাব্বির আলম খন্দকার হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জাকির খানের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়েছে। বুধবার আবার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন আদালতে। এরপর বাদীপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন।
জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন ব্যবসায়ী নেতা সাব্বির আলম খন্দকার। এ হত্যাকান্ডের পর তার বড় ভাই তৈমূর আলম বাদি হয়ে ১৭ জনকে আসামী করে ফতল্লা থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর মোট ৯ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। পরবর্তিতে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়।
সিআইডির এএসপি মসিহউদ্দিন দশম তদন্তকারী কর্মকর্তা দীর্ঘ প্রায় ৩৪ মাস তদন্ত শেষে তিনি ২০০৬ সালের ৮ জানুয়ারী আদালতে ৮ জনকে আসামী করে চার্জশীট দাখিল করেন। এতে মামলা থেকে সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিন, তার শ্যালক জুয়েল, শাহীনকে অব্যাহতি দিয়ে সাবেক ছাত্রদল সভাপতি জাকির খান, তার দুই ভাই জিকু খান, মামুন খান সহ মোট ৮ জনকে আসামি উল্লেখ করা হয়।
একই সাথে ২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সাব্বির আলম খন্দকার খুন হওয়ার পর এ মামলার আসামি হওয়ায় তিনি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে থাইল্যান্ডের সুকুমবিকে কয়েক কোটি টাকা দিয়ে ’গ্রেস’ নামে ৮তলা বিশিষ্ট একটি থ্রি-স্টার হোটেল কেনেন এবং সেখানেই বসবাস করছিলেন।
তবে র্যাব জানিয়েছিল গত এক বছর সপরিবার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসবাস করছিলেন। পরে ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :