এক সময় প্রাচ্যের ডাণ্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় ছিলো সারি সারি খেজুর গাছ। সেই সাথে শীতের সকালে গাছিরা খেজুর গাছ থেকে সুমিষ্ট রস সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করতেন। বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষজন শীতে জবুথুবে হয়ে রস পান করতেন। কিন্তু এখন আর সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না।
এই অবস্থায় খেজুর রসের সেই আগের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছেন একদল যুবক। যারা ‘রস বাগিচা’ ব্যানারে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ খেজুরের রসের চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। এবারের শীতে বন্দরের কবিলের মোড় এলাকায় তারা ৪৬ টি খেজুর গাছ নিয়ে কাজ করছেন। ক্রমান্বয়ে তারা গাছের সংখ্যা বাড়াবেন।
‘রস বাগিচা’ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ইতোমধ্যে খেজুর গাছগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। হয়তো আগামী কিছুদিনের মধ্যেই রস সংগ্রহ করা শুরু করবেন। শীত বাড়লে খেজুরের রসের পরিমাণও বাড়বে। আশা করা হচ্ছে প্রতিদিন তাদের এই রস বাগিচা থেকে প্রায় ২৫০ থেকে ৩শ’ লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ করতে পারবেন।
রস বাগিচার গাছি সেলিম বলেন, আমাদের এখানে ৪৬ টি খেজুর গাছ রয়েছে। আশা করছি প্রতিদিন এখান থেকে প্রায় ২৫০ থেকে ৩শ’ লিটার খেজুরের রস সংগ্রহ করতে পারবো। যা নারায়ণগঞ্জ সহ আশপাশ এলাকায় সরবরাহ করবো। কেউ যদি ইচ্ছা করেন তাহলে আমাদের বাগানে এসেও রস খেতে কিংবা সংগ্রহ করতে পারবেন। আমাদের এই বাগানের রসটাকে যথেষ্ট নিরাপদের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা জাল ব্যবহার করবো। হাড়ি ব্যবহার করবো। যাতে করে বাদুড় যেন রসকে নষ্ট করতে না পারে। সর্বোপরি রসের মান পরিপূর্ণভাবে বজায় রাখার চেষ্টা করবো।
রস বাগিচার অ্যাডমিন মোস্তাফিজুর রহমান সাদরিল বলেন, গত বছর এখান থেকে ৩ থেকে ৪শ’ লিটার রস সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার আমরা আশা করছি প্রতিদিন গড়ে ২শ’ থেকে ২৫০ লিটার পাবো। এর কমবেশি হতে পারেন। যদি আশানুযায়ী রস সংগ্রহ করতে পারি তাহলে লাভবান হতে পারবো। তবে আমরা লাভের থেকে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে খেজুর রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এখানে শীতের আমেজটাকে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করার জন্য খেজুর পাতা দিয়ে তাঁবু বানানো হবে। গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। কেউ যদি পিকনিক করতে চান তাহলে সেই ব্যবস্থা এখানে করা হবে।
রস বাগিচার প্রধান অ্যাডমিন জোবায়ের হোসেন নুর বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলাতেই খেজুরের গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু শহরাঞ্চল বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সহ আশপাশ এলাকায় খেজুরের গাছ বিলুপ্তির পথে। তারপরেও আমরা এখানে অনেকগুলো খেজুর গাছ পেয়েছি। যা আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো। আমরা চাচ্ছি এগুলো পরিচর্চা করে খেজুরের রস নামানোর জন্য।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো বর্তমান প্রজন্মকে খেজুর গাছের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলা। শীতের সকাল হতেই খেজুরের গাছের নিচে এসে রস সংগ্রহ করা পান করা বিষয়টি ভাবতেই অন্যরকম লাগে। তাই আমরা চাচ্ছি আমাদের এই রস বাগিচার মাধ্যমে খেজুরের রসের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মুহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে খেজুর গাছ এবং এর রস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। পুষ্টিগুণ এবং মিষ্টতায় এর জুড়ি মেলা ভার। খেজুরের রসের গুড় আমাদের দেশে অনেক জনপ্রিয়। নারায়ণগঞ্জে একসময় খেজুর গাছ লক্ষ্য করা গেলেও শিল্পায়ন ও আবাসন সহ বিভিন্ন কারণে বর্তমানে খেজুর গাছের সংখ্যা ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। পতিত জায়গায় ও রাস্তার পাশে খেজুরগাছ রোপণে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সেই সাথে যারা খেজুরের রস নিয়ে কাজ করছেন তাদেরকে আমরা উৎসাহিত করছি।
আপনার মতামত লিখুন :