কবিরাজি চিকিৎসা কিংবা ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে জড়িয়ে আছে তাবিজ। জীবনের চলার পথে নানান সমস্যা সমাধানের আশায় তাবিজ ব্যবহারকারীদের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু কোথায় তৈরি হয় এই তাবিজ, কারাই বা বানায়?
এসব প্রশ্নের উত্তর মিলবে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার তিনটি গ্রামে। টানমুশুরি, দক্ষিণবাগ ও ভিংরাবো গ্রামে সারাবছর জুড়েই চলে তাবিজ তৈরির কাজ। প্রায় শত বছরের পুরোনো এই পেশা এখনও ধরে রেখেছেন কারিগররা। সংসারের একমাত্র অবলম্বন থেকে শুরু করে অবসর সময়ে তাবিজ বানিয়ে বাড়তি আয় করেন এই গ্রামের বাসিন্দারা।
তাবিজ তৈরি করার প্রধান উপকরণ টিনের পাত। ঢাকার জিঞ্জিরা থেকে নিয়ে আসা এসব টিনের পাত নির্ধারিত মাপে কাটা হয় লোহার কাঁচি দিয়ে। এরপর পাতটিকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে তাবিজের সিলিন্ডার আকৃতি দেয়া হয়। তাবিজের একপাশ বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয় ছোট চারকোনা লোহার পাত। বন্ধ করার পর লোহার কাঁচি দিয়ে কেটে চারকোনা পাতটি গোলাকৃতি রূপ দেয়া হয়। এরপর তাবিজের উপর বসানো হয় গোল আংটা।
পুরো তাবিজটি বেধে ফেলা হয় সুতার মাধ্যমে। তাবিজের ভেতরে রাখা হয় পিতলের ছোট টুকরা। তাবিজের সাথে আংটা, গোল টিনের পাত জোড়া দেয়ার জন্য বেধে রাখা তাবিজটি কাদামাটির ভেতরে রেখে প্রথমে রোদে শুকানো ও পরে আগুনে দেয়া হয়। আগুনের তাপে ভেতরে থাকা পিতল গলে সহজেই জুড়ে দেয় আংটা ও গোল টিনের পাতকে। আগুনে পোড়ানো মাটি ভেঙ্গে বের করা হয় তাবিজ। ভালো মন্দ বাছাই করে রেতি দিয়ে ঘঁষে উজ্জ্বল করে বিক্রি করা হয় পাইকারি ক্রেতাদের কাছে।
তাবিজ কারিগর কাশিনাথ মন্ডল জানান, তাবিজের রয়েছে বেশ কয়েকটি প্রকারভেদ। আকার আকৃতি ভেদে তাবিজকে সাম্বু, বাম্বু, পাই, বড় মাজলা, ছোট মাজলা, মস্তুলসহ বিভিন্ন স্থানীয় নামে ডাকা হয়। পাইকারি ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয় কাউন ও পোন হিসেবে। ৮০ পিস এক পোন এবং ১৬ পোনে ১ কাউন। আকার আকৃতি ভেদে প্রতি কাউন ৯০০ থেকে সর্বোচ্চ ২০০০ টাকায় বিক্রি করা হয়ে থাকে। তবে চাহিদা বেশি ছোট তাবিজের। যেগুলোর দাম উঠে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। প্রায় ৭-৮ দিনের পরিশ্রমের তৈরি হওয়া এক কাউন তাবিজে লাভ হয় মাত্র ৪০০ টাকা।
প্রায় তিন পুরুষ ধরে তাবিজ বানানোর ব্যবসা করে আসছেন মহাজন শ্রী সুবল চন্দ্র সরকার। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আসলেও দিন দিন কারিগরের সংখ্যা করে আসছে। আর্থিকভাবে তেমন লাভ না হওয়া এবং ভিন্ন কোন কাজ না জানায় এখনও তাবিজ বানিয়ে যাচ্ছেন কারিগররা। ভিন্ন কোন সুযোগ পেলে কারিগররা অন্য পেশায় চলে যাবে। বর্তমানে এই ব্যবসায় খুব বেশি লাভ হচ্ছে না বলে জানান এই মহাজন।’
গ্রামের বাসিন্দারা বলছেন, শত বছর ধরে এই ব্যবসা চললেও বর্তমানে বিভিন্ন উপকরণের দাম বৃদ্ধি এবং বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভবান হতে পারছেন না কারিগররা। তাবিজের দাম হিসেবে এর খরচ বর্তমানে অনেকটা বেশি। সরকারিভাবে সহজ শর্তে ঋণ পেলে এ পেশাটাকে আরও লাভজনক অবস্থায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
আপনার মতামত লিখুন :