তৈরী পোশাক মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার ২ দিনের ব্যবধানে ইউটার্ন নিয়েছেন সিনিয়র সহসভাপতি মনসুর আহেমদ। শনিবার ৩০ নভেম্বর তিনি নিজ পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের পাশাপাশি বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগও সত্য নয় বলে দাবি করেছেন।
শনিবার ৩০ নভেম্বর বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর নির্বাহী সভাপতি/ প্রশাসনিক কোঅর্ডিনেটর (ভারপ্রাপ্ত) বরাবরে পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেন বিকেএমইএ’র সিনিয়র সহসভাপতি মনসুর আহমেদ। প্রত্যাহারের আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আমি মনসুর আহমেদ গত ২৮ নভেম্বর বিকেএমইএ নির্বাহী সভাপতি বরাবর পত্র দিয়ে অনেকটা চাপে পরেই আমার সিনিয়র সহ সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে অব্যাহতি চাই। সেই পদত্যাগ পত্রে বিকেএমইএ'র বর্তমান সভাপতি'কে এবং কয়েকজন বোর্ড সদস্যকে ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর হিসেবে উলেখ করে জুলাই আগষ্টের গণহত্যার সাথে জড়িত বলে উল্লেখ করেছিলাম, যা আমার একান্তই অনিচ্ছাকৃত এবং অজান্তে উল্লেখিত হয়েছে এবং যাহা কোনভাবেই সত্য নয়। আমি অনুভব করতে পারছি, আমার গৃহীত সিদ্ধান্তটি বর্তমান বাংলাদেশ নীটওয়্যার সেক্টর এবং সংগঠন হিসেবে বিকেএমইএ'র স্বার্থের সাথে সাংঘর্ষিক এবং বিপরীতমুখী। পত্রটি পূণঃপর্যালোচনা করে আমি বুঝতে পেরেছি পদত্যাগ পত্রে উল্লিখিত তথ্যগুলো বাস্তবতা বিবর্জিত এবং সম্পূর্ণরুপে ভুল হিসেবে অনুধাবিত হওয়ায় আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ ট্রকাশ করছি এবং আমার বক্তব্য প্রত্যাহার করে স্বজ্ঞানে ঘোষণা করছি যে, বিকেএমইএ'র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম কোনভাবেই কখনই এ ধরণের গণবিরোধী ফ্যাসিষ্ট সরকারের কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। আমি গত ২৮ নভেম্বর আমার প্রদানকৃত পদত্যাগ পত্রটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি এবং মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে দায়িত্ব পালন করে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করছি।
এ বিষয়ে মনসুর আহমেদের মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি পদত্যাগপত্র প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য এর আগে গত ২৮ নভেম্বর বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি বা প্রশাসনিক সমন্বয়কারী বরাবরে পদত্যাগপত্রটি দাখিল করেছিলেন সিনিয়র সহসভাপতি মনসুর আহেমদ ও পরিচালক খুরশিদ আহমেদ তনিম। মনসুর আহমেদ মাদার কালার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। অপরদিকে খুরশিদ আহমেদ তনিম লেক্সেল নিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ওই পদত্যাগপত্রে তারা উল্লেখ করেন ‘বর্তমান সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের নেতৃত্বে সংগঠনের মূল্যবোধ ও নৈতিক মানদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা বলেন, "আমরা লক্ষ্য করেছি যে বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে এমন কিছু কর্মকান্ড ঘটছে যা আমাদের আমাদের সংগঠনের মূলনীতি- ন্যায়পরায়ণতা, সততা এবং গণতান্ত্রিক চর্চাকে লঙ্ঘন করছে। গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে পাওয়া তথ্যের বরাতে সংগঠনের এ দুই পরিচালক বলেন, “বর্তমান সভাপতি এবং কিছু সিনিয়র বোর্ড সদস্যরা ফ্যাসিজমকে সহযোগিতা করেছে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও সাধারণ ছাত্র-জনগণের ওপর নির্যাতনকারী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা আগামী ৫ ডিসেম্বরে ডাকা সংগঠনের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) ও বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) বাতিলের আহবান জানান। তারা আরও বলেন, “মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং আমাদের বিবেকের তাড়নায়, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, যারা এই ফ্যাসিবাদকে সমর্থন করে, তাদের সঙ্গে আর কাজ করব না।’
এ বিষয়ে তৎকালে বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান জানান, আমি আজকে ঢাকায় ছিলাম। এ ধরনের চিঠি এখনো হাতে পাইনি। মোহাম্মদ হাতেমের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন সেসময় বেশীরভাগ ব্যবসায়ীই সরকারের বিরুদ্ধে কোন কিছু বলার সাহস করেনি। মনসুর সাহেব হয়তো কোন কারণে ক্ষুব্দ হয়ে পদত্যাগপত্র দাখিল করেছেন। এ বিষয়টি নিয়ে আমরা বোর্ড মিটিংয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি মনসুর সাহেব তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন। এজিএম স্থগিতের বিষয়ে তিনি বলেন, হাইকোর্টের আদেশে এজিএম অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখন এজিএমের তারিখ পরিবর্তন করতে হলে হাইকোর্টের আদেশ লাগবে। এটা এখন সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে কৎকালে বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানান, আমি বিগত দিনে এই ট্রেডের জন্য কি করেছি সেটা এই সেক্টরের লোকজন সকলেই জানে। আমাদের বিকেএমইএ’র সদস্যরাও জানে। নারায়ণগঞ্জের লোকজন জানে। বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের লোকজনও জানে। আমার সবকিছু ক্লিয়ার। আমি বিগত দিনে কাজ দিয়ে এই অবস্থানে এসেছি। কারো দয়ায় আনুকূল্যে এই অবস্থানে আসিনি। আমি কখনোই বিগত সরকারের দোসর ছিলাম না। যদি দোসরই থাকতাম তাহলে আরো আগেই সভাপতি হতাম। এছাড়াও নিয়ম অনুযায়ী পদত্যাগ পত্র সভাপতি বরাবরে করতে হয়। কিন্তু তিনি সেটা করেননি।
উল্লেখ্য জুলাই বিপ্লবে গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পরে বিকেএমইএ’র সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন সাবেক এমপি সেলিম ওসমান। এরপর সভাপতি নির্বাচিত হন মোহাম্মদ হাতেম। তবে ওই কমিটিতে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর অনেকেই এখনো বহাল রয়ে গেছে। যা নিয়ে ওঠে সমালোচনার ঝড়।
আপনার মতামত লিখুন :