News Narayanganj
Bongosoft Ltd.
ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সকে শোকজ, মাসুদকে সরিয়ে প্রশাসক!


দ্যা নিউজ নারায়ণগঞ্জ ডটকম | বিশেষ প্রতিনিধি প্রকাশিত: নভেম্বর ২১, ২০২৪, ১১:০৫ পিএম নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সকে শোকজ, মাসুদকে সরিয়ে প্রশাসক!

নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে প্রশাসক দায়িত্ব নিতে পারেন। এ নিয়ে চেম্বারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। ২১ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব অমিত দেব নাথ সাক্ষরিত কারণ দর্শানোর ওই নোটিশ পাঠানো হয়।

এতে বলা হয়, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজে মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়ে পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা ও মনোনীত ব্যক্তিবর্গ ছাড়া কাউকে চেম্বারের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেননি। এবং চেম্বারের নেতৃত্ব স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ আত্মগোপনে থেকে নিজেদের মত করে মাসুদুজ্জামানকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করা হয় মর্মে অভিযোগ করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসা শিল্প বাণিজ্য বা সংশ্লিষ্ট শিল্পখাত সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে না মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় প্রশাসক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন। এ অবস্থায় চেম্বারের বর্তমান কার্য নির্বাহী কমিটি বাতিল করে বাণিজ্য সংগঠন আইন ২০২২ এর ১৭ মোতাবেক কেন প্রশাসক নিয়োগ করা হবে না এ বিষয়ে ৭ কর্ম দিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।

এর আগে গত ২৬ অক্টোবর চেম্বারের এজিএম হয়। কিন্তু আগের দিন ২৫ অক্টোবর বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সদস্য ব্যবসায়ী গোলাম সারওয়ার সাঈদ।

লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতির পদ থেকে খালেদ হায়দার খান কাজল পদত্যাগ করার পরে অতি চাতুর্যতার সাথে ফ্যাসিবাদের দোসর মোরশেদ সারওয়ার সোহেল গং মাসুদুজ্জামানকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে কো-অপ্ট করেন। সেইসাথে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের আত্মস্বীকৃত খুনি পরিবারের ব্যক্তিকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাখা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজির টাকা ফেরত দেয়া নিয়েও স্ট্যান্টবাজি করা হয়েছে। মাসুদুজ্জামানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের দোসরদের চেম্বার অফ কমার্সে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। তারই অংশ হিসেবে তার নিজস্ব বলয়ের কিছু ব্যবসায়ীদেরকে নিয়ে শনিবার চেম্বার অব কমার্সের এজিএম করতে যাচ্ছেন। গঠনতন্ত্রের আলোকে কমপক্ষে সাত দিন পূর্বে সাধারণ সভার নোটিশ সকল সদস্যদের কাছে পৌঁছাতে হবে। কিন্তু তিনি সুকৌশলে তার বলয়ের লোকের বাইরে কাউকে দাওয়াত দেননি। চেম্বারের সদস্য হলেও অন্তত ২০০ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে যারা এজিএমের কোন চিঠি পাননি। তাই শনিবারের এজিএম স্থগিতের দাবি জানাচ্ছি। কমিটিতে ফ্যাসিস্টদের দোসর থাকায় মাসুদুজ্জামানসহ নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পূর্ণাঙ্গ বোর্ড পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচন দিতে হবে। যদি এজিএম স্থগিত করা না হয় এবং ফ্যাসিস্টদের দ্বারা পরিচালিত এই কমিটি পদত্যাগ না করে তাহলে আমরা নিয়ম মোতাবেক পদক্ষেপ নিব।

সংবাদ সম্মেলন থেকে ৪ দফা দাবি উত্থাপন করেন ব্যবসায়ীরা। দাবিগুলো হচ্ছে- মাসুদুজ্জামানসহ নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পূর্ণাঙ্গ বোর্ড পদত্যাগ করতে হবে এবং নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপি ও জামায়াতকে নারায়ণগঞ্জবাসীর সামনে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে, চাঁদাবাজির টাকা তারা নিয়েছে কিনা? জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্র জনতাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের কিভাবে মূল্যায়ন করবে? সেহেতু নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক সকল সাধারণ সদস্যবৃন্দ তাই সাধারণ সদস্যদের প্রত্যাশার বাইরে গিয়ে যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেতাত্মা দখলদারিত্ব করতে চায় তাহলে সাধারণ সদস্যরা প্রতিরোধ করবে এবং এর দায় প্রশাসনকে নিতে হবে।

গত ৪ সেপ্টেম্বর চেম্বারের ২০২৩-২০২৫ সালের সভাপতি খালেদ হায়দার খান কাজল ও সহ-সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া সাজনু ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেন। চেম্বারের এক জরুরি সভায় এ দুইজনের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়। সভায় মাসুদুজ্জামানকে সর্বসস্মতিক্রমে সভাপতি পদে কো-অপ্ট এবং এনসিসিআই পরিচালক সোহেল আক্তারকে সহ-সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরশেদ সারোয়ার সোহেলের সভাপতিত্বে পরিচালকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাইফুল ইসলাম, রতন কুমার সাহা, মাহবুবুর রহমান, মহসিন রাব্বানী, তারেক সালাউদ্দিন, মোহাম্মদ আবু জাফর, সেলিম হোসেন, সোহেল আক্তার, আশিকুর রহমান, জাকারিয়া ওয়াহিদ প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে আত্মগোপনে রয়েছেন বিকেএমইএ পরিচালক, চেম্বারের সহ-সভাপতি ও মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সাজনু, বিকেএমইএ ও চেম্বারের পরিচালক জেলা যুবলীগ নেতা এহসানুল হক নিপু এবং সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের ছেলে চেম্বারের পরিচালক অয়ন ওসমান ও আরেক পরিচালক নাজমুল আলম সজল।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও নতুন সরকার দেশের দায়িত্ব নেওয়ার পর নারায়ণগঞ্জ চেম্বার থেকে ৩ লাখ টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ করেন সভাপতি মাসুদুজ্জামান। এছাড়া গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমএইএ থেকে ৫ লাখ টাকা চাঁদা নেয়ার কথাও জানান। দায়িত্ব নেওয়ার পরেই মাসুদুজ্জামান বলেছিল চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে এবং চাঁদার টাকা ফেরত দিতে হবে। তা না হলে শহীদ মিনারে ওই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে লাল কার্ড প্রদর্শন করা হবে। এমন হুংকারে ১ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স এবং বিকেএমএইএ থেকে নেওয়া চাঁদার টাকা ফেরত আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিকেএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। তখন মোহাম্মদ হাতেম বলেন, চাঁদা নেয়া টাকা চেম্বারের নবনির্বাচিত সভাপতি ফেরত আনার ব্যবস্থা করেছে। তাকে সভাপতি হিসেবে বসিয়ে একজন যোগ্য লোককেই যে বসিয়েছি, সেটা কিন্তু প্রমাণ হলো। ওই সময়ে উপস্থিত সাংবাদিকরা চাঁদাবাজদের নাম জানতে চাইলে তা জানাননি তারা।

Islams Group
Islam's Group