নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম পাইকারী থান কাপড়েরর মার্কেট নয়ামাটি এলাকার একটি হোসিয়ারী কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ঘটেছে। শুক্রবার রাতে চাঁন মার্কেটের ৮ তলার গেঞ্জির কারখানায় এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলেও বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি ঘটেনি। অগ্নিকান্ডের খবর পেয়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শুক্রবারের ওই অগ্নিকাণ্ডে আবারো আতঙ্ক বিরাজ করছে নারায়ণগঞ্জের অন্যতম বাণিজ্যিক এলাকা নয়ামাটিতে। প্রায় ২২শ এর অধিক হোসিয়ারী, থান কাপড়ের দোকানে সমৃদ্ধ এ নয়ামাটি শহরের ঘিঞ্জি এলাকার অন্যতম। একের পর এক সরু গলিতে এসব প্রতিষ্ঠান থাকলেও অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই।
এর আগে শুক্রার দুপুর ১টায় নয়ামাটি শেখ টাওয়ার ভবনের চতুর্থ তলায় ‘মা হোসিয়ারী’ নামক কারখানায় এই অগ্নিকাণ্ডে সরেজমিনে দেখা গেছে, নয়মাটি এলাকায় যে ভবনগুলোতে এমন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেই ভবনগুলোর প্রায় ৯০ ভাগই একটি ভবন ঘেসে আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। দুইটি ভবনের মাঝে নির্দিষ্ট জায়গা ফাঁকা রাখার নিয়ম থাকলেও সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এক দেয়ালেই দুইটি ভবন নির্মাণের নজির এখানে তৈরী হয়েছে। এছাড়া ভবনগুলোর ভেতরেও পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা নেই। যে কারণে আগুন লাগলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। দোকান পাটগুলোতে রাখা হয়না অগ্নি নির্বাপক মেশিন, বালু বা পানির ব্যবস্থা। যাতে করে অগ্নিকান্ড শুরুতেই নিজস্ব স্বক্ষমতায় সেটি নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব হয়। প্রতিদিন এই মার্কেটে হাজার হাজার ক্রেতা ও সাধারণ মানুষের যাতায়াত হয়ে থাকে। মানুষের যাতায়াতের সংখ্যার তুলনায় সেখানেও রাস্তা গুলোও অত্যন্ত সংকুচিত। এর মধ্যে রাস্তাগুলোর প্রবেশ পথে অবৈধ দোকানপাট। সংকুচিত রাস্তা এবং প্রবেশ মুখে অবৈধ দোকানপাটের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো ভেতরে প্রবেশ করতে পারে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, নয়ামাটি এলাকায় যুগের পর যুগ ধরে ফায়ার সার্ভিস সেবা দিয়েছে বিকল্প পথে। এক করিম মার্কেট পর্যন্ত মিনার গার্মেন্টস এর গলি পর্যন্ত ফায়ারের গাড়ি ঢুকে। সেখান থেকে পাইপ টেনে নিয়ে যাওয়া হয় ভেতরে ঘটনাস্থলে। আরেকটি পথ হচ্ছে লয়েল ট্যাঙ্করোড দিয়ে গাড়ি ঢুকিয়ে নয়ামাটি আখড়ার পেছনে নেয়া হয়। সেখান থেকে পাইপ টেনে নিতে হয়। এভাবেই চলছে অগ্নিনির্বাপণের কাজ। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সামনে দিয়ে লয়েল ট্যাংক রোডে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ঢুকিয়ে নিতে হয় আখড়ার পেছনে। সেখান থেকে পানির পাইপ বিভিন্ন মার্কেটের ভেতর দিয়ে অগ্নিকান্ডেরস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। নয়ামটির ভেতরে অধিকাংশ ভবনেই পানির রিজার্ভার নেই। এই এলাকায় নেই কোন জলাধারও। সত্তরের দশকেও থানা পুকুর পাড় নামে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার সামনে একটি বড় পুকুর ছিল। আশির দশকেও পুকুরের অস্তিত্ব ছিল। নব্বইয়ের দশকে এসে পুকুর ভরাট করে ফেলা হয়।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের একজন কর্মকর্তা জানান, নয়ামাটিতে চওড়া রাস্তা নেই, আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নেই। আমাদের গাড়িতে ৩০ মিনিট পানি দেওয়ার মতো পানি থাকে। এরপর বিকল্প খুঁজতে হয়। কিন্তু নয়ামাটির কোনো ভবনেই আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নাই। যেখান থেকে আমরা পানি নিতে পারি। নয়ামাটির ভবনগুলো একটার সাথে আরেকটা লাগানো। যে কারণে আগুন লাগলে ধোয়া বের হতে পারে না। এখানে ভবনগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগানো। মাঝে কোনো ফাঁকা জায়গা নাই। একটি ভবনেও পানির জন্য আন্ডারগ্রাউন্ড রিজার্ভার নেই। ২৫ ফুট রাস্তার প্রয়োজন। কিন্তু নয়ামাটিতে রাস্তার ৬ থেকে ৭ ফুট। এছাড়া এক তালা উপরেই ভবনগুলো রাস্তার উপরে নির্মাণ করা হয়েছে। যে কারণে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়ি যেতে পারে না। বৈদ্যুতিক সংযোগগুলোও এলামেলো। অবৈধ সংযোগ আছে। এসব কারণে নয়ামাটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।’
আপনার মতামত লিখুন :